মোদির ইচ্ছাতেই খালেদার সাথে বৈঠকঃ আনন্দবাজার

112

মোদির পক্ষ থেকেই খালেদার সঙ্গে বৈঠক করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। এবং খালেদাও রাজি হন।মোদির সফরের আগে বিএনপি ঘোষণা করেছিল, সেই সময় তারা বিক্ষোভ দেখাবে। এ ব্যাপারে বিএনপি-কে গোলমাল পাকানোর জন্য ইন্ধন দিচ্ছিল জামায়াত। কিন্তু খালেদাও জামায়াতদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেননি। খালেদার দল বলেছিল, তিস্তা চুক্তি কেন হচ্ছে না, এই দাবিতে তারা মোদির সামনে বিক্ষোভ দেখাবে। কিন্তু মোদী যাওয়ার পর আমরা দেখলাম, গোটা শহরে কোথাও মোদি-বিরোধী বিক্ষোভ দেখাল না বিএনপি। উল্টো মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে খালেদা রাজি হয়ে গেলেন।

ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে আজ কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা প্রকাশিত একটি লেখায় এ কথা বলা হয়েছে। লিখেছেন পত্রিকাটির নয়া দিল্লি ব্যুরো চিফ প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল। তিনি একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছেন। এবারও মোদির সফরসঙ্গী ছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। মোদি সেই বৈঠকে হাসিনাকে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ গঠন করেছিলেন, আর আপনি সেই দেশ বাঁচিয়েছেন। বাংলাদেশ এক ছোট সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু ছোট রাষ্ট্র হলেও এই রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ভারতের জন্য বিশেষ জরুরি। অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনও নিউ ইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে এলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেন। ভারত এই সম্পর্ককে আওয়ামী লীগ এবং বিজেপি অথবা আওয়ামী লীগ এবং কংগ্রেসের সম্পর্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় না।

মনমোহন সিংহ যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন প্রণব মুখোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। প্রণববাবুর সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল অত্যন্ত মধুর। শেখ হাসিনার পুত্র জয়কে প্রণববাবুর বাড়িতে এসে থাকতেও আমি দেখেছি। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে যাতে কংগ্রেস-আওয়ামী লীগ সম্পর্ক হিসেবে দেখা না হয়, সে কথা বার বার কংগ্রেস নেতারা বলতেন। জয়রাম রমেশ তো এই ব্যাপারে একটি বিবৃতিও দিয়েছিলেন। এবারও নরেন্দ্র মোদি কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করলেন। প্রথমে যে কর্মসূচি সাংবাদিকদের দেওয়া হয়েছিল, তাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খালেদার বৈঠকের উল্লেখ ছিল না। ছিল বিরোধী দলনেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা। কিন্তু মোদির পক্ষ থেকেই খালেদার সঙ্গে বৈঠক করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। এবং খালেদাও রাজি হন।

মোদির সফরের আগে বিএনপি ঘোষণা করেছিল, সেই সময় তারা বিক্ষোভ দেখাবে। এ ব্যাপারে বিএনপি-কে গোলমাল পাকানোর জন্য ইন্ধন দিচ্ছিল জামায়াত। কিন্তু খালেদাও জামায়াতদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেননি। খালেদার দল বলেছিল, তিস্তা চুক্তি কেন হচ্ছে না, এই দাবিতে তারা মোদির সামনে বিক্ষোভ দেখাবে। কিন্তু মোদি যাওয়ার পর আমরা দেখলাম, গোটা শহরে কোথাও মোদি-বিরোধী বিক্ষোভ দেখাল না বিএনপি। উল্টো মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসতে খালেদা রাজি হয়ে গেলেন।

প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের এক জন অফিসার আমাকে বলছিলেন, খালেদাকে ঠান্ডা করে রাখতে পারলে আসলে কিন্তু শেখ হাসিনারও লাভ। দেশের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে অনেক ব্যাপারেই প্রধানমন্ত্রী যেমন বিরোধী দল কংগ্রেসকে সঙ্গে রাখতে চান, ঠিক সেই ভাবেই বাংলাদেশে শেখ হাসিনাও খালেদাকে সঙ্গে রাখতে চান জাতীয় বিষয়ে। অতীতে প্রণব মুখোপাধ্যায়, এস এম কৃষ্ণ, সালমান খুরশিদ, এমনকী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গেও একাধিক বার ঢাকা গিয়েছি। যখনই গিয়েছি, তখনই দেখেছি ভারত বিরোধী নেত্রীর সঙ্গেও তারা সব সময় বৈঠক করেছেন। এবারের বাংলাদেশ সফরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে এক প্রত্যাশা তৈরি করলেন, তা প্রশংসনীয়। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনমোহন সিংহ বাংলাদেশের ব্যাপারে কাজে লাগাতে সমর্থ হননি, সে কাজে কিন্তু বিজেপির প্রধানমন্ত্রী সফল হলেন।

ব্যক্তিগত সম্পর্ক আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঠমান্ডুতে সার্ক সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে অটলবিহারী বাজপেয়ীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছিল। খালেদার তখন খুব হাঁটুর ব্যথা। ক’দিন আগেই বাজপেয়ীর হাঁটু বদলের অপারেশন হয়েছিল। শল্যচিকিৎসক ছিলেন নিউ ইয়র্কের ড. রানওয়াত। খালেদাকে বাজপেয়ী রানওয়াতের কথা বলেন এবং তাকে পরামর্শ দেন যাতে খালেদা তাকে দেখিয়ে হাঁটুর অপারেশন করিয়ে নেন। এই ব্যক্তিগত আলাপচারিতা একটি অন্য রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলা- এগুলি সবসময়েই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। নরেন্দ্র মোদি কয়েক দিন আগেই আমাকে বলছিলেন, পৃথিবীটা যতই বড় লাগুক, ২০-২৫ জন রাষ্ট্রনায়ক নিরন্তর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন। রাষ্ট্রনায়কদের একটি ক্লাব তৈরি হয়ে গিয়েছে। বস্তুত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও এই ক্লাবের সদস্য। বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী খুশি। কিন্তু তিনি তার অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন, এই সফরে বাংলাদেশ নিয়ে কাজ শেষ নয়, আসলে শুরু।