থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই এবার উঠল মানব পাচারকারী চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ। এর আগে দেশটির সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ ও মাঠপর্যায়ের লোকজনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগের এ ধারাবাহিকতায় দেশটির রাজকীয় সেনাবাহিনীর উপদেষ্টার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন অনুমোদন করেছেন আদালত। এর পরপরই তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সেনাবাহিনী।
পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাড়ি জমানো বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক গন্তব্যস্থল এই থাইল্যান্ড।
এদিকে বাংলাদেশিসহ ৬৫ জন অভিবাসী বহনকারী একটি নৌযান ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধার হয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও ব্যাংকক পোস্টের।
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় সংখলা প্রদেশের না থাবি এলাকার প্রাদেশিক আদালত ওই শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন অনুমোদন করেন। গত ১ মে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলমান অভিবাসীদের প্রথম গণকবর আবিষ্কৃত হয় এখানকারই এক গহিন জঙ্গলে।
থাই পুলিশ বাহিনীর প্রধান সোময়ুত পামপানমাং গতকাল সোমবার জানান, রাজকীয় সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মানুস কংপানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিল পুলিশ। এ আবেদনে গত রোববার আদালত সম্মতি দিয়েছেন। এরপর গতকালই সামরিক কর্তৃপক্ষ তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
সংখলায় গণকবর ও পাচারকারীদের আস্তানা আবিষ্কৃত হওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানব পাচার কেলেঙ্কারি নিয়ে বিশ্বজুড়ে হইচই শুরু হয়। তীব্র সমালোচনার মুখে থাইল্যান্ডে মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেখানকার সেনা-সমর্থিত সরকার। গত প্রায় এক মাসের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে সন্দেহভাজন ৫১ পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে মোট ৮২ জনের বিরুদ্ধে। সন্দেহভাজন এসব লোকের মধ্যে এখন পর্যন্ত মানুস কংপানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
উপ-পুলিশপ্রধান অ্যাক আংসানানোন বলেন, ৫৮ বছর বয়সী সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে এই সেনা কর্মকর্তা গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, পরোয়ানার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
এই খবর বের হওয়ার আগে সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইউদোমদেজ সিতাবাতরা বলেছিলেন, মানব পাচারের সঙ্গে কোনো সেনাসদস্য জড়িত আছেন কি না, তা তাঁর জানা নেই। তবে গতকাল তিনি বলেন, তাঁর অধস্তন কর্মীকে পুলিশ খুঁজছে বলে তিনি জেনেছেন। আর এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী পুলিশকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করছে।
সেনা কমান্ডার দাবি করেন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সেনাবাহিনীর জন্য কোনো আঘাত নয়। ওই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে স্বাধীনতা দেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর এক সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদনের বিষয়টি অবগত আছেন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচা ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল প্রবিত ওংসুওন। বিষয়টিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে তদন্তকারীদের প্রতি সবুজ সংকেত দিয়েছেন এই দুজন এবং সেনাবাহিনীর ওই কমান্ডার।
পুরো থাই সমাজই পাচারে জড়িত: থাইল্যান্ডের পুরো সমাজ মানব পাচারে জড়িত। সম্প্রতি বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংবাদদাতা জোনাথন হেডের এ প্রতিবেদনটি গত ২২ মে বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, থাইল্যান্ডের পুরো সমাজ পাচারকারীদের সহায়তা করছে। সংবাদদাতার ভাষ্য, থাইল্যান্ডের তাকুয়া পা জেলার প্রধান মনিত পিয়ানথং তাঁর কাছে দাবি করেছেন, নৌকা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের স্থানান্তরের জায়গা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর এই জেলাকে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। এটা বন্ধ করতে চাইলেও কেন্দ্রীয় সরকার বা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে তেমন সহায়তা পাচ্ছেন না তিনি।
থাই গ্রামবাসীর সামনে পাচারকারীরা কীভাবে এই ব্যবসা চালাচ্ছে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে হেড জানান, পাচারকারীরা তাদের ব্যবসার সঙ্গে স্থানীয় লোকদের যুক্ত করেছে। একটি গ্রামের এক যুবকের ভাষ্য, অর্থের জন্য পুরো গ্রামবাসী পাচারের সঙ্গে যুক্ত। পাচারকারীরা সবাইকে ভাড়া করে। বন্দিশিবিরের ওপর নজরদারি এবং খাবার সরবরাহের জন্য পাচারকারীরা লোক ভাড়া করে। লোক ভাড়া করতে তারা গ্রামের ঘরে ঘরে যায়।
অভিবাসীবাহী নৌকা উদ্ধার: বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার ৬৫ জন আশ্রয়প্রার্থীকে বহনকারী একটি নৌযান ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব উপকূলে উদ্ধার হয়েছে। এর আগে নৌযানটি আটকে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সেটি ঠেলে দেয় অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনী। নৌযানটির গন্তব্যস্থল ছিল নিউজিল্যান্ড।
ইন্দোনেশীয় পুলিশ গতকাল বলেছে, বর্তমানে এই অভিবাসীরা একটি পুলিশ স্টেশনে রয়েছেন। তাঁদের নিয়ে আজ মঙ্গলবার কাজ শুরু করবেন অভিবাসন কর্মকর্তারা।
৭১০ ‘বাংলাদেশির’ তালিকা: মালয়েশিয়ায় সম্প্রতি উদ্ধার হওয়ার পর নিজেদের বাংলাদেশি বলে দাবি করা ৭১০ জন অভিবাসীর একটি তালিকা ঢাকায় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশন।
হাইকমিশনের শ্রম শাখার কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলামের বরাত দিয়ে ওয়ার্ল্ডটাইমস টোয়েন্টিফোর ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইটের খবরে গতকাল এই তথ্য জানিয়ে বলা হয়, তাঁদের জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়ার পর দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.