বিতর্ক সব সময় যৌক্তিক হয়ে ওঠে না। নানা কৌশলে তর্ক-বিতর্কে জয়লাভ আসে। এ জন্য প্রতিপক্ষকে ভালোভাবে বুঝতে হয়। যেকোনো বিতর্কে আপনাকে কিছু কৌশল রপ্ত করতে হবে। তর্কে জেতার এই কৌশলগুলো রীতিমতো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। জেনে নিন বাগ্যুদ্ধে জয়ী হওয়ার মন্ত্র।
১. আপনার আচরণ অবশ্যই ভদ্র-সভ্য হতে হবে। তাই বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সম্মান দেখান। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার পলিটিক্যাল সাইকোলজিস্ট পিটার ডিটো বলেন, যখন মানুষ তার মূল্যকে বৈধভাবে উপস্থাপন করতে চায়, তখন নিজ চিন্তাধারার বিপরীতমুখী তথ্যগুলোও মনে ধারণ করে রাখে। আর এ থেকেই বিপরীত মতের প্রতিও শ্রদ্ধাবোধ জাগে।
২. কারো মতাদর্শের ওপর আক্রমণাত্মক বাগ্যুদ্ধ চালালে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। মানুষের সম্মতি বাগিয়ে আনতে চাইলে চরমভাবে মতৈক্য প্রকাশের চর্চা করে যান। অন্যের বক্তব্যকে আক্রমণ নয়, বরং নিজের যুক্তিকে জোরালো বলে প্রমাণ করুন।
৩. ২০১৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোর মনোবিজ্ঞানী ফিলিপ এম ফ্রেনব্যাচ তাঁর গবেষণায় জানান, দুই ঘরানার রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী দুটি দল যখন তর্কে নামে, তখন ‘কেন’ তাদের মতাদর্শ সেরা প্রমাণের চেয়ে ‘কিভাবে’ সেরা ব্যাখ্যা করাটা বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। তাই বিতর্কে জয়ের মালা পরতে ‘কেন’ দিয়ে নয়, ‘কিভাবে’ আপনিই সেরা, তা তুলে ধরুন।
৪. বিপরীত পক্ষকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পিক্সারের সহপ্রতিষ্ঠাতা এড ক্যাটমুল কখনোই স্টিভ জবসের সঙ্গে বিপরীতধর্মী সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্চবাচ্য করতেন না। এড বলেন, আমি কোনো যুক্তি দাঁড় করালে স্টিভ তা তৎক্ষণাৎ এর খুঁত বের করে ফেলতেন। কারণ তিনি আমার চেয়ে অনেক দ্রুত চিন্তা করতে পারতেন। কিন্তু জবস কিছু বলার পর আমি প্রয়োজনে কিছুদিন সময় নিয়ে ভাবতাম এবং জোরালো যুক্তি নিয়ে হাজির হতাম।
৫. এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিন, যেন অন্য পক্ষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার বক্তব্যের ঝুড়ি খুলে দেয়। যেমন- পৃথিবীর সব টাকা পেলে আপনি কী করবেন- এই প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে যে কেউ তার মনের যাবতীয় চিন্তাভাবনা উজাড় করে দেবে।
৬. ২০১৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব ইউতাহর ম্যানেজমেন্টের প্রফেসর ব্রায়ান বনার বলেন, উশৃঙ্খলতা, লিঙ্গ, জাতিসত্তা বা এবং আত্মবিশ্বাসের ওপর বিচার করে মানুষ কারো প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। কাজেই অন্যের নজর কাড়তে স্রেফ স্মার্টভাবে কথা বললেই হবে না। মূলত সেখানে আত্মবিশ্বাসী এবং বক্তব্যে খোলামেলা ভাব থাকতে হবে।
৭. কর্নেল বিশ্ববিদ্যায়ের দুই গবেষক অ্যানার ট্যাল এবং ব্রায়ান ওয়ানসিংক তাঁদের সাম্প্রতিক গবেষণায় জানান, মানুষ সাধারণত বিজ্ঞানীদের ওপর বিশ্বাস রাখে। আর গ্রাফের মাধ্যমে তথ্য তুলে ধরাটা অনেকটা বৈজ্ঞানিক বলেই মনে করে সবাই।
৮. সামাজিকভাবে প্রমাণিত কোনো বিষয়কে যুক্তির পক্ষে উদাহরণ হিসেবে টানলে তা আরো বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। ‘ইনফ্লুয়েন্স : দ্য সাইকোলজি অব পারসুয়েশন’ বইয়ের লেখক রবার্ট সিয়ালদিনি বলেন, নিজের মতকে অন্যের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে সমাজ থেকে কোনো উদাহরণ টানুন।
৯. নিজের মতের পক্ষে ঐক্য তৈরি করুন। এটিই তর্কে জেতার মোক্ষম অস্ত্র। বিজ্ঞানীরা কোনো বিষয়ে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। কোনো পরীক্ষা বা অন্য কোনো বিষয়ে সবার কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়। যে মতের পক্ষে বেশি বিজ্ঞানী আছেন, তাঁদের মতামতই সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হবে। তর্কযুদ্ধে শ্রোতাদের এমন কোনো ঘটনা বলুন, যা আপনার বা অনেকের জীবনে একই অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। এর সূত্র ধরে নিজের বক্তব্য পেশ করুন। এতে বক্তব্য শেষে আপনার সমর্থনে সবাইকে ‘হ্যাঁ-সূচক’ মাথা নাড়তে দেখবেন।
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.