শিশুর মন থেকে বিষন্নতা দূর করুন

175

ছয় বছর বয়সী শিশুটি হঠাৎ করেই স্কুলে যেতে অস্বীকৃতি জানালো। ছেলেটি লজ্জা আর অস্বস্তিতে লুকিয়ে থাকতে চায়। এমনকি সে কারো চোখের দিকেও তাকাতে পারে না। অবশেষে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব দিলো সে। জানা গেলো, পরিবারে গোলমাল এবং অনবরত স্কুল পরিবর্তনের কারণে এক ধরনের বিষণ্নতা ভর করেছে তারে ওপর।

কাম্বালা হিল হসপিটাল অ্যান্ড হার্ট ইনস্টিটিউট এর মনোবিজ্ঞানী ড. অসিত শেঠ বলেন, এই বয়সী শিশুদের মাঝে বিষণ্নতা চলে আসা খুবই সাধারণ বিষয়। শিশুদের বেড়ে ওঠার সুষ্ঠু প্রক্রিয়াতে গোলযোগ দেখা দিলেই এমন হতে পারে। বাবা-মায়েরা এসব বিষয় খেয়াল করতে পারেন না। প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝেও বিষণ্নতা আসে। কিন্তু তার প্রকাশ ও প্রভাব থাকে ভিন্ন। ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মাঝে এ ধরনের আচরণ খুব বেশি দেখা যায় বলে জানান ড. অসিত।

এ ধরনের সমস্যার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। দেখে নিন সেই চিহ্নগুলো। এমন বিষণ্নতা আসে বাবা-মায়ের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ, বাবা-মায়ের অভাব, পরিবারে বিচ্ছেদ ঘটা, যৌন নিপীড়ন এবং ভয় দেখানোর কারণে। এ ছাড়া কিছুটা বয়স হলে বিপরীত লিঙ্গে পছন্দের কাউকে দ্বারা অবহেলার কারণেও তা ঘটতে পারে।

ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর এক হিসেবে বলা হয়, ১৪ বছরের কম বয়সী ২ হাজার ৭৩৮ জন শিশু নানা কারণে এক বছরের মধ্যে আত্মহত্যা করেছে। পৃথিবীতে ১৫-২৯ বছর বয়সীদের আত্মহত্যা প্রবণতা বড় একটি সমস্যা। এদের মধ্যে ১৬-১৮ বছর বয়সীদের মাঝে ঝুঁকিপূর্ণ বিষণ্নতা আসে শিক্ষাজীবনে ভালো ফলাফলের জন্যে বাবা-মায়ের চাপসৃষ্টি থেকে। ২০১৩ সালে ২ হাজার ৪৭১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে পরীক্ষায় বাজে ফলাফলের কারণে। আবার বাড়িতে নির্যাতন এবং যৌন হয়রানির কারণেও শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের মন থেকে বিষণ্নতা দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায়টি হলো তাদের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। তা ছাড়া কারো অজান্তে বিষণ্নতা ভর করেছে কিনা তা শিশুদের আচরণে প্রকাশ পেতে পারে। এ সময় তারা সব সময় মনমরা হয়ে থাকবে, মাঝে মাঝে লুকিয়ে কাঁদবে, ক্ষুধামন্দা দেখা দেবে, ঘুমাবে না, ওজন কমতে থাকবে, মুড নষ্ট থাকবে এবং হঠাৎ করেই অভিমানী বা আগ্রাসী বা এলোমেলো আচরণ করবে।

এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বাবা-মায়ের উচিত হবে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করা। প্রয়োজনে অবশ্যই শিশুকে নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
সূত্র:হিন্দুস্তান টাইমস