শেষ অনুষ্ঠানে ১ ঘন্টায় যা বলে গেলেন মোদি

26

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের শেষ অনুষ্ঠানে এক ঘণ্টার জনবক্তৃতায় বাংলাদেশের মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। তিনি আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যের পাশাপাশি একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। করেছেন সহযোগিতার অঙ্গীকার। রবিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মোদি এ জনবক্তৃতা প্রদান করে।
এ বক্তৃতার শুরুতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকী, মাননীয় অধ্যাপক, প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী, বাংলাদেশ সরকারের সব মাননীয় মন্ত্রী, সম্মানিত নেতৃবৃন্দ, সম্মানিত সংসদ সদস্য মহোদয়, আইটেক এবং আইসিসিআরকের বিশেষজ্ঞবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ীবৃন্দ,বুদ্ধিজীবী, ভারতীয় নাগরিক, পদ্মভূষণ ড.আনিসুজ্জামান, পদ্মশ্রী ঝর্ণা ধারা চৌধুরীসহ সব বাংলাদেশিকে উদ্দেশ করে তিনি বাংলায় বলেন, ‘আমার বাংলাদেশের ভাই ও বোনেরা নমষ্কার। ‌তোমরা কেমন আছো, আমরা তোমাদের সাথে আছি, আমরা তোমাদের সাথে নিয়া চলবো।’
এরপর সমবেতদের কাছে জানতে চান, ‘আমার বাংলা কেমন বল তো?’
এরপর মোদি বলেন,’দুই দিনের আমার সফর আজ শেষ হবে। এই সফরে এটি আমার একরকম শেষ কার্যক্রম। তবে আমার মনে হচ্ছে, এখন মাত্র সফর শুরু হচ্ছে।
আমার দুই দিনের সফরে বাংলাদেশের নাগরিকগণ এবং বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা যেভাবে আমাকে শুভেচ্ছার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন, সম্মান দিয়েছেন, তা শুধু নরেন্দ্র মোদি নামের একজন ব্যক্তিকে সম্মান নয়, একশ কোটি ভারতের মানুষের প্রতি সম্মান।
এই দুই দিনের সফর নিয়ে শুধু এশিয়া নয়, সারাবিশ্ব ময়নাতদন্তে নামবে। কেউ হিসাব নিয়ে বসবে কী পেয়েছি, আর কী হারিয়েছি। তবে এক কথায় আমি বলব, সবাই ভাবে আমরা পাশাপাশি আছি, তবে এবার তাদের স্বীকার করতে হবে আমরা পাশাপাশিও আছি, আবার এক সঙ্গেও আছি। আমি বাংলাদেশের সঙ্গে আবেগে যুক্ত আছি। আমার জীবনে এবং আমার রাজনীতিতে যিনি হাতে ধরিয়ে শিখিয়ছেন তিনি হলেন অটল বিহারী বাজপেয়ি। আর তাকে আজ বাংলাদেশ সম্মানিত করল। আর সম্মান হাতে তুলে দিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি। সম্মান পেলেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ের উপস্থিতিতে। তার সম্মান বহনের দায়িত্ব, ওই ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো এমন একজনের কাছে, যার কিনা যৌবনে রাজনীতির সঙ্গে কোনও সংযুক্তি ছিল না। আমিই সেই ব্যক্তি, রাজনীতিতে অনেক দেরিতে এসেছি, প্রায় ৯০-এর আশেপাশে।
যুবক বয়সে খবরের কাগজে বাংলাদেশের খবর পড়তাম। বাংলাদেশের লড়াই সম্পর্কে, এখানে হওয়া অত্যাচার সম্পর্কে জানতে পারতাম। তখন আপনাদের যেমন রক্ত গরম হতো, তেমনি আমারও রক্ত গরম হতো। জুলুমের বিরুদ্ধে এখানে যেই আওয়াজ উঠছিল তা আমার কানে বাজতে থাকত। আর সেই আওয়াজ আমাকে তাড়িত করেছিল, প্রথমবারের মতো গ্রাম থেকে দিল্লি এসে ভারতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে। বাংলাদেশের দাবি আদায়ের জন্য যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন চলছিল, সেই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আমার সৌভাগ্য হয়েছিল। এটি আমার জীবনের প্রথম রাজনৈতিক কাজ ছিল। এরপর বহু বছর আর কোনও রাজনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। সামাজিক জীবন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। হয়তো উপরওয়ালার ইচ্ছা, তাই তিনি আজ আমাকে আপনাদের সঙ্গে এই বন্ধনে আবদ্ধ করলেন।
দুনিয়ায় সমৃদ্ধ দেশগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, তবে আমাদের মতো গরীব দেশের দিকে দুনিয়ার নজর অনেক কম আসে। বাংলাদেশ একটি সংঘর্ষ থেকে সরে এসে অনেক কম সময়ে সমৃদ্ধির পথে হাঁটা শুরু করেছে। আর এখানে রাজনৈতিক সংকট চড়াই-উৎরাই, প্রাকৃতিক সংকট বারবার এসেছে। তবে সব কিছুকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সবার দৃষ্টি এখানকার গার্মেন্টস শিল্পের দিকে যায়। আর তা প্রশংসার যোগ্যও বটে।
আমি চীন গিয়েছিলাম, সেখানকার একটি গার্মেন্টস কোম্পানির সিইও আমাকে বলছিল, মোদি জি কী করছেন? আমি বল্লাম কী হয়েছে ভাই? সে বলল, আপনার দেশ এক শ’ কোটি লোকের, আর আপনার পাশে মাত্র ১৭ কোটি লোকের দেশ বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে।
অনেকের মনে হতে পারে, তখন মোদির কেমন লেগেছে, তবে আমি মন থেকে বলছি, আমার তখন এতো আনন্দ লেগেছে, এতো আনন্দ লেগেছে। কারণ আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ যারা কিনা দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করে আমার সেই সঙ্গী, প্রতিবেশী এত বড় কাজ করেছে! তাতে আমার আনন্দিত হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, সূর্য প্রথম এখানে (বাংলাদেশ) উঠলেও পরে আমাদের (ভারত) বাড়িতেও তো যায়। আর এজন্য এখানে যত বিকাশ হবে আমাদের ওইখানেও সেই আলো একটু হলেও আসবেই। আমার এতে পুরো ভরসা আছে।
এখানকার মৃত্যুহার, পুষ্টিহীনতা এবং নারী শিক্ষা নিয়ে তারা যে অগ্রগতি করেছে, তা থেকে আমাদের দেশের অনেক রাজ্যকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। কারণ, যখন বাংলাদেশের কথা আসে, তখনই আমি গর্ববোধ করি এই ভেবে যে, আমার দেশেরও কোনো যোদ্ধা ছিল, যারা কিনা বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়েছে।
যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদের দেশের যোদ্ধারা রক্ত দিয়ে রচনা করেছে, এর চেয়ে বেশি আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি একটি মাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, আর তা হলো সমৃদ্ধি-উন্নয়ন (বিকাশ)।
আর লাগাতার ৬ শতাংশ অর্জন প্রবৃদ্ধি সহজ কথা নয়। আর এটি যে সামনের সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত শক্ত করছে তা আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি। ভারত এবং বাংলাদেশ দুজনেই একটি ব্যাপার ভাগ্যবান আর তা হলো, ভারতের ৬৫ শতাংশ জনগণ ৩৫ বছরের কম বয়সের অধিকারী আর বাংলাদেশেরও ৬৫ শতাংশ জনগণ ৩৫ বছরের কম বয়সী। এটি তারুণ্যের অধিকারী দেশ, তাই এদের স্বপ্নও তরুণ। যেই দেশের এমন শক্তি এবং নেতৃত্ব আছে তাদের পেছনের দিকে তাকাতে হবে না।  
এখন সময় এবং দুনিয়া বদলেছে। একটা সময় ছিল যখন সাম্রাজ্যবাদ/আধিপত্যবাদ (বিস্তারবাদ) শক্তির পরিচয় মানা হতো। কে কত জুলুম এবং বিস্তার করতে পারে তার ওপর শক্তি প্রকাশ পেত। তবে এই যুগে সম্প্রসারণবাদের কোনও সুযোগ নেই। তাই এখন দুনিয়ার দরকার সম্প্রসারণবাদের বিপরীতে দরকার সমৃদ্ধিবাদ। এটি বিকাশবাদের যুগ। খুব কম লোকই উপলব্ধি করতে পারে তা। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার সীমান্ত চুক্তি কি শুধু একটি জমি বিরোধ সংক্রান্ত চুক্তি?
এটি কয়েক কিলোমিটার জমি এদিক আর ওদিক যাওয়ার বিষয় না। এটি দুটি হৃদয়ের বন্ধনের সমঝোতা।
দুনিয়াতে সকল যুদ্ধ জমি নিয়ে হয়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশই একমাত্র  দেশ, যারা কিনা জমির সীমানাকে নিজেদের সমৃদ্ধির স্বরূপ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
আমি আজ এখানকার একটি পত্রিকায় কোন এক লেখককে লিখতে দেখেছি, তিনি এই চুক্তিকে বার্লিনের দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এটি একটি খুব বড় মাপের চিন্তা। এটি বিশ্বে অন্য কোথাও ঘটলে, অনেক খবর হতো, নোবেল প্রাইজের দরজা খুলে যেতো হয়তো। তবে আমাদের কেউ এবিষয় নিয়ে জিজ্ঞেস করবে না। কারণ, আমরা গরীব দেশ। আমাদের এক সঙ্গে চলতে হবে। তবে তারা অবশ্যই মানবেন এই সেই দুটি দেশ যারা নিজেদের ক্ষমতায় এতো ওপরে উঠে এসেছে।
সময় অনেক বদলে গেছে। আমাদের তরুণরা এখন আগের মতো চিন্তা করে না। তারা দুনিয়াকে নিজেদের বুকের সঙ্গে বাঁধতে চায়। জগতের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। এখন আমাদের দায়িত্ব যে তাদের জন্য এ পথটি সুগম করে তোলা।
আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনারা আমাকে আমন্ত্রণ করেছেন। এটি সেই বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি বাংলাদেশকে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রত্যেককে আলাদা আলাদা মানুষ হিসেবে তৈরি করছে।
অতীতের স্মৃতিচারণ করলে আমরা দেখব, বর্তমানে ভারতে অসংখ্য মানুষ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্ঞান অর্জন করেছে। আমরা প্রত্যেকের নাম সম্মানের সঙ্গে বলতে পারি।
আর এ কারণে সামনের দিনগুলোয় সমুদ্রবিদ্যা নিয়ে নিয়ে পড়ালেখা করতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে একযোগে কাজ করব আমরা। কারন, ব্লু ইকোনমি ভবিষত্যের একটি বড় ক্ষেত্র হতে যাচ্ছে।
এই ব্লু ইকোনমির ওপর আমাদের প্রভাব বিস্তার করতে একযোগে কাজ করতে হবে। আমাদের সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পাঁচটি দেশ সরাসরি সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত। আর সমুদ্রের পাশের দেশ হিসেবে ব্লু ইকোনমি নির্ভর কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি তাহলে আমার বিশ্বকে অনেক কিছু দিতে পারবো।
আমাদের কিছুদিন আগে নেপালে সার্ক সম্মেলনে সাক্ষাৎ হয়েছিল। এ সময় একটি বিষয়ে আমি খুব গুরুত্ব দিয়েছিলাম। আমরা একটি প্রস্তাব দিতে চেয়েছিলাম। সেটি ছিল, কানেকটিভির(যোগাযোগের), যা হতে পারে আসা-যাওয়ার এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের।  তবে, দুঃখজনক যে সবাই বাংলাদেশের মতো নয়। তাই বলে তো আর অপেক্ষা করে বসে থাকলে চলবে না।
আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, যে কাজটি আমরা সার্কে করতে পারিনি, সেটি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান একসঙ্গে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা আকারে গুছিয়ে নিয়েছে।
আমি এটি বিশ্বাস করি, পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে যে পরিবর্তন এসেছে, তার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। একইভাবে সার্কের সাফল্য এর ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে। আর যোগযোগের এ ক্ষেত্রটিতে সহযোগিতা আরও বাড়াতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত একযোগে রেল, সড়ক, আকাশ পথে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়গুলোতে আরও গুরত্বারোপ করেছে। এছাড়া, এরই মধ্যে সমুদ্রসীমার বিষয়টিও ফয়সালা হয়ে গেছে।
এটি না হলে ভারতকে বাণিজ্য করতে হতো সিঙ্গাপুর দিয়ে ঘুরে এসে। আর এখন আমরা একযোগে বাণিজ্য করতে পারব সামনাসামনি।
আর এ কারণে আমি বলছি, এ অঞ্চলে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। যে কোনও দেশ আর্থনৈতিক, সামরিক বা যে কোনওভাবে যত শক্তিশালী হোক না কেন, কারও পক্ষে এককভাবে কিছু করা সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাপী এখন পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া কোনও উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এ কারণে ভারত ও বাংলাদেশ দূরদৃষ্টি দিয়ে এই ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে। আর এ কারণে আমরা বাইশটি চুক্তি করেছি। যেগুলো সংখ্যা দিয়ে বিচার করা উচিৎ হবে না। বরং, এই চুক্তিগুলোর প্রতিটি ভবিষ্যতে একযোগে কাজ করার জন্য বড় ভূমিকা রাখবে। এটি আমি আজ বিশ্বাসের সঙ্গে বলে এখান থেকে যেতে পারি। এ কারণে আজ আমি বাংলাদেশের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানাই। এই দূরদৃষ্টির কারণে আজ আমরা এ ধরনের গুরত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিতে পেরেছি।
আজকে যদি স্যাটেলাইট দিয়ে এই উপমহাদেশের ছবি তুলে দেখেন, ভারতসহ সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের অনেক জায়গায় এখনও অন্ধকার দেখতে পাবেন। আপনারা কি মনে করেন না, সেই অন্ধকার জায়গাগুলো আলোকিত করা উচিৎ? আর এ কারণে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান যদি একযোগে কাজ করে,তাহলে এখানে কখনও কোনও জায়গা আর অন্ধকার থাকবে না।
একই সঙ্গে বলতে চাই, ত্রিপুরায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ভারি যন্ত্রাংশ বহনে বাংলাদেশ সহযোগিতা করেছিল বলেই আজ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হয়েছে। আর এ কারণেই সেখান থেকে ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে। আমরা বাংলাদেশকে পাঁচ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও গতকাল আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমরা বাংলাদেশকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করব।
আমরা দুটি দেশ একদিক থেকে ভাগ্যবান। আমাদের এখানে তীব্র রোদ হয় আর তা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আমরা বিদ্যুতে রূপান্তর করতে পারি। এর যথাযথ ব্যবহারও করতে পারি। আমার এ কথাটি বলার কারণ হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের মেধাবী তরুণরা একযোগে কাজ করে এই অঞ্চলটিকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করতে পারে।
গতকাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন, আমরা মহাকাশে যেতে চাই। আমরা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উড়াতে চাই মহাকাশে। আমি ওনাকে দুষ্টুমি করে বললাম, ‘বঙ্গবন্ধু’ আমাদের ছাড়া কিভাবে হতে পারে! বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভারতবন্ধু তো সঙ্গেই থাকবে। আমাদের ইচ্ছা আপনাদের মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে আমরা যুক্ত হতে চাই। কারণ, এ বিষয়ে বিশ্বের কাছে ভারতের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছি আমরা।
ভারত ইতোমধ্যে মহাকাশে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরেছে, আমাদের সে শক্তি আছে, যা বাংলাদেশের কাজে আসা উচিৎ। আমি তাকে (শেখ হাসিনা) বলেছি এবং আমি সার্ক দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের বলেছি, আমরা একটা সার্ক স্যাটেলাইট ছাড়ব। ২০১৬-এর মধ্যে সবার (সার্কের বাকি দেশ) সঙ্গে সে কাজ সম্পন্ন করব। এই উপগ্রহের মাধ্যমে সার্ক দেশগুলো যাতে সামুদ্রিক ঝড়, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে, শিক্ষা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যেন তারা বিভিন্ন তথ্য সহজে পেতে পারেন।
জনগণের বিকাশের জন্য আমাদের যে ধারণা, আমরা যেভাবে এগিয়ে যেতে চাই, আর এজন্য আমি বলতে চাই, আমরা পাশাপাশিও রয়েছি, সঙ্গে সঙ্গেও রয়েছি। বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যে কাজ করেছে, আমি মনে করি তা প্রশংসার যোগ্য। এখানকার পুরুষদের হয়তো কখনও হিংসা হয় প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী এবং স্পিকারও নারী। এটি শুনে সত্যি গর্ব অনুভব হয় আমরা এশিয়ার দেশ। আজও বিশ্বের অন্যান্য দেশে নারীদের রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে দাঁড় করানোর মানসিকতা এখনও কম। কিন্তু এটি এমন একটি দেশ, যেখানে নারীরা দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ বারবার পেয়েছেন।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, তাইওয়ান, শ্রীলঙ্কায় এটি আমাদের একটি বিশেষত্ব। কিন্তু তবুও আমরা যদি অন্য কোথাও হতাম তাহলে হয়তো বিশ্বে আমাদের জয়জয়কার হতো। আমরা কিন্তু গরীব-দরিদ্র। আমরা পেছনে রয়েছি। কেউ আমাদের দিকে দেখতেই চান না। আমাদের সম্মানের সঙ্গে, গর্বের সঙ্গে দাঁড়াতে হবে যে দুনিয়াতে দেখানোর জন্য আমাদের শক্তি রয়েছে; দেখাতে হবে যে নারীর ক্ষমতায়নে আমরা কিন্তু দুনিয়ার চেয়ে পিছিয়ে নেই। আমি দু’দিন ধরে এখানে-ওখানে গিয়েছি। একটি বিলবোর্ডে দেখতে পেয়েছি, লেখা রয়েছে ‘আই অ্যাম মেইড ইন বাংলাদেশ’। সেখানে আপনাদের নারী ক্রিকেটার সালমা খাতুনের যে ছবি রয়েছে তা নারীর ক্ষমতায়নের নিদর্শন।
বাংলাদেশের যুবক সাকিব আল হাসান। দেখুন বাংলাদেশের বিকাশের গতি কত দ্রুত। কত দ্রুত ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে। আজ ভারতসহ সমস্ত ক্রিকেট দল বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কোনওভাবেই ছোট হিসেবে দেখতে পারে না।
নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়ার কথাও আমরা ভুলিনি! আপনারাও ভুলে যাননি তো! গরীব পরিবারের দুই কন্যা তারা এভারেস্ট থেকে ঘুরে এসেছেন। পর্বতশৃঙ্গে তারা পৌছেঁছেন। এটি বাংলাদেশের শক্তি। আর আমি গর্ব অনুভব করি যে, সেই বাংলাদেশের সাথে চলতে এসেছি। এটি একটি সামর্থ্য, শক্তি–যা আমাদের একটি নতুন শক্তি দেয়।
কিছু কথা রয়েছে, যা এখনও বলতে চাই । কয়েক ঘণ্টা পর দেশে চলে যাব। এখনও অনেক কিছু করার বাকি। আমাদের দেড়শ’ কোটি মানুষের দেশ, অনেক রাজ্য রয়েছে। সবাইকে সাথে নিয়ে চলতে হবে। আর বাংলাদেশের সাথে-সাথে চলি। তাহলে তো আমাদের রাজ্যের সাথে-সাথেও তো আমাকে চলতে হবে। বাংলাদেশে যখন এসেছি তিস্তার জলের ব্যাপারে তো আলোচনা হবেই।
আমি বিশ্বাস করি এবং আমার তো মনে হয় পাখি, বাতাস এবং জল–এই তিনটির কোনও ভিসা চাই না। আর এজন্য জল কোনও রাজনৈতিক বিষয় হতে পারে না। এটি মানবিক ভিত্তির ওপরে তৈরি। সেই মানবিক মূল্যের ওপর এই সমস্যা সমাধান করতে হবে। আমরা একজোট হয়ে করব। আমি আপনাদের আশ্বাস অবশ্যই দিচ্ছি। আমি নিজেও বিশ্বাস করি, চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে চলবে না। চলে গেলে চলবে না। আমরা সবাই একজোট হয়ে থাকব। কখনও কখনও সীমানাতে এমন ধরনের কিছু ঘটনা হয়, দু’পক্ষীয় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, কোনও নির্দোষ ব্যক্তির মৃত্যু সবার জন্য বেদনার বিষয়, দুঃখের বিষয়। গুলি এখান থেকেই চলুক বা অন্য কোথাও থেকে চলুক তার গুরুত্ব আছে। যার মৃত্যু হয়, সে গরীব হলেও মানুষ। আর আমাদের সীমানায় এমন কোনও ঘটনা যাতে না হয়, সেজন্য যারা আমাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করতে চায় তারা যেন শক্তি না পায়।
এবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। মানব পাচারের বিষয়ে কঠোরভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে দুই দেশ। বেআইনি যে আসা-যাওয়া সেজন্য ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আমরা দু’দেশ মিলে এ ব্যাপারে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি।
আমি বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, প্রশংসা করছি। এসবই তো আমাদের এক সঙ্গে চলতে এবং একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যায়। আজ এক সঙ্গে আমরা চলি এরপর এক সঙ্গে দৌড়াব। এভাবেই তো আমরা এগিয়ে চলব। আমরা যৌথ শক্তিতে এগিয়ে যেতে চাই। শুধু তাই নয়, বিকাশের যে নতুন উচ্চতা আমাদের পার করতে হবে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে, আমরা সহযোগিতা করছি, সহযোগিতা বাড়াতে চাচ্ছি। এবার আমরা ঋণ সহায়তা ২০০ কোটি ডলার করেছি, আর এ জন্য আমরা এ কারণেই সাহস পেয়েছি কাজ করার। কারণ আগে যেসব ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে যদি কেউ ভালোভাবে কাজ করে থাকে তা হচ্ছে বাংলাদেশ। আর সে জন্য নতুন ঋণ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ তার সঠিক ব্যবহার করবে।
আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা চাই ভারতীয় লোকেরা এখানে আসুক, বিনিয়োগ করুক। এখানকার যুবকদের উপার্জনের ব্যবস্থা করুক, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক, এখানকার যে কাঁচামাল তার মূল্যবৃদ্ধি হোক, এখানকার অর্থনীতির বিকাশ হোক। ভারত বাংলাদেশের যে পার্থক্য আছে তা দূর হোক। আমরা চাই না যে বাংলাদেশ শুধু ভারত থেকে বেশি জিনিস নিক এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে কম জিনিস যাক। আমি চাই যে,একই পরিমাণ দ্রব্য আদান-প্রদান হোক। আমি চাই বাংলাদেশের দ্রব্য ভারতে বিক্রি হোক।
আমরা সর্বদা আপনাদের বন্ধু দেশ হিসেবে রয়েছি। আর এ জন্য আমাদের ভূমিকা এটাই যে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব, কীভাবে আমরা সাথে সাথে চলব সে দিকে গুরুত্ব দিয়ে এক সঙ্গে চলা।
আজ  বিশ্বে কিছু সংকটের আমরা মোকাবিলাও করছি। সামনে জাতিসংঘ তার সত্তর বছর উদযাপন করবে। সত্তর বছরের যাত্রা কম নয়। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাতিসংঘের জন্ম হয়। সেসময় বিশ্বের পরিস্থিতি আলাদা ছিল। সেসময় শিল্প বিপ্লব হয়, আজ  ইন্টারনেট বিপ্লবের সময়। সময় বদলেছে, কিন্তু জাতিসংঘ সেই একই জায়গায় রয়ে গেছে। শতাব্দীর পরিবর্তন হয়েছে, জাতিসংঘের পরিবর্তন হয়নি। আমরা গরীব দেশগুলোর পক্ষ থেকে চাই, জাতিসংঘ যখন সত্তর বছর পালন করবে তখন বিশ্ব তাদের অন্যভাবে দেখুক। বাংলাদেশের মতো ছোট ছোট দেশ, ভারত-বাংলাদেশের মতো সংগ্রামকারী দেশ,সার্ক দেশ যেগুলো দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছে, তাদের সমস্যার ব্যাপারে মনযোগ দিন। আর এ জন্য এ ধরনের সব দেশকে এক জোট হয়ে কাজ করতে হবে।
যুদ্ধ হলে কী করতে হবে, লড়াইয়ের সময় কী করা হবে, সেনা কী করবে, সব জানা আছে, কিন্তু সন্ত্রাসবাদ জঙ্গি মোকাবিলা কীভাবে হবে তা কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না। কোনও রাস্তা কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘও আমাদের পথ দেখাতে পারছে না। আমরা খুব খুশি যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও স্পষ্টভাবে বলছেন, দৃঢ়ভাবে বলছেন, জিরো টলারেন্স সন্ত্রাসবাদের প্রতি। আমি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই যে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কোনও আপস নয়। সন্ত্রাসবাদের কোনও সীমা নেই, কোনও অঞ্চল নেই। ভারত গত চল্লিশ বছর থেকে এ জন্য সমস্যায় রয়েছে। কত নিরাপরাধ লোকের জীবন চলে গেছে, কত রক্ত বয়েছে। আজ যারা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত তারা কী পেয়েছে? কী দিয়েছে? আজ সন্ত্রাসবাদের রূপ এমন যার কোনও আদর্শ নেই, কোনও মূল্যবোধ নেই, কোনও সংস্কৃতি নেই, কোনও ঐতিহ্যও নেই। তাদের যা আছে তা হলো মানবতার শত্রুতা। আর এ জন্য আমরা যে কোনও পূজা পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি না কেন, যে কোনও সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না কেন, আমরা ঈশ্বর বা আল্লাহতে বিশ্বাস করি আর না করি কিন্তু মানবতাবাদী শক্তির এক জোট হওয়া খুবই দরকার।
যারা মানবতাবাদে বিশ্বাস করেন,সে সমস্ত দেশের একেজোট হওয়া খুব প্রয়োজন। আমরা এ জঙ্গি, জঙ্গিবাদের যে মানসিকতা তাকে সরিয়ে দেবো। তাকে শেষ করে দেবো। এ কাজে আমরা এগিয়ে যাবো এবং বাংলাদেশের সরকার যে জিরো টলারেন্সের দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছে, আমি আবারও অভিনন্দন জানাচ্ছি সে জন্য।
আমি মনে করি বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও সার্ক দেশে আমাদের পর্যটনকে উৎসাহ যোগাতে হবে। পর্যটন সারাবিশ্বকে একত্র করে। আর সন্ত্রাসবাদ বিশ্বকে আলাদা করে দেয়, বিভক্ত করে দেয়। আমরা একে অপরকে জানি, পরিচিত হওয়ার গর্ব অনুভব করি। আর আমরা যখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়বো, একে অপরকে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে এক নতুন শক্তির উন্মোচন হবে এবং বিকাশ ঘটবে আমাদের।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এখনও ভারত স্থান পায়নি। স্থায়ী সদস্য পদ পাইনি। আপনারা ভাবতে পারেন কি, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন ভারতের। কিন্তু সে দেশের বিশ্বের শান্তির বিষয়ে আলোচনা করার কোনও অধিকারই নেই। বিশ্বের সামনে আমি খোলাখুলি বলতে চাই, সময়ের পরিবর্তন হয়েছে সেটা বুঝতে চেষ্টা করুন। ভারত সেই দেশ যেটি ভূমির জন্য কারও ওপর হামলা করেনি, লড়াই করেনি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতের ১৩ লাখ জওয়ান যুদ্ধে গিয়েছিল নিজেদের জন্য নয়, ভারতকে বাঁচানোর জন্য নয়, ভারতের অঞ্চল বৃদ্ধির জন্য নয়, অন্য কোনও দেশের জন্য লড়েছে তারা এবং এদের মধ্যে ৭৫ হাজার জওয়ান শহীদ হন বিশ্বযুদ্ধে। তা সত্ত্বেও বিশ্ব আমাদের জিজ্ঞাসাই করছে না শান্তির জন্য। আমরা কি বিশ্বের শান্তির জন্য উপযুক্ত নই? আমাদের কি তার জন্য প্রমাণ দিয়ে যেতে হচ্ছে না? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে, সেখানে ১৫ লাখেরও বেশি ভারতীয় সৈন্য অন্যের জন্য যুদ্ধ করেছে, জীবন দিয়েছে। অন্য দেশে গিয়ে তাদের মরতে হয়েছে। আর সেসময় আমরা সবাই এক ছিলাম। বিভাজিত হইনি। আমাদের ৯০ হাজার সৈন্য, যুবক সে যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। এখনও জাতিসংঘ গর্বের সঙ্গে বলে, শান্তিরক্ষা বাহিনীতেও ভারত সবচেয়ে শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ করে। কিন্তু ভারত নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও যখন তারা পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে রক্ত দিচ্ছিলেন, নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন তো জানতাম না বাংলাদেশ তৈরি হবে কি হবে না, একটা নতুন রাষ্ট্র তৈরি হবে কি হবে না। বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে ছিলেন, প্রত্যেক বাঙালি মৃত্যুর জন্য তৈরি ছিল, দেশকে গঠনের জন্য তৈরি ছিল। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বলতে হবে, সেই একাত্তরের সময়ে আমরাই সেই লোকেরা ছিলাম, যে আমরা মুক্তিযুদ্ধে লড়েছি। এখানে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামীরা বসে রয়েছেন, তাদের আমি প্রণাম করি। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের সঙ্গে ভারতীয় সৈন্যরা লড়াই করেছেন, রক্ত দিয়েছেন। আর কেউ বলতে পারে না এই রক্ত কোনও মুক্তিযোদ্ধার, না ভারতীয় সেনা জওয়ানের। কোনও পার্থক্য ছিল না তখন। তখন একটা উন্মাদনা ছিল।
আর ইতিহাস দেখুন, ৯০ হাজার সেনা বাংলাদেশের জনগণের ওপর অত্যাচার করেছে, সেই ৯০ হাজার পাকসেনাকে আত্মসমর্পণে ভারতীয় সেনারা বাধ্য করেছিল। আপনারা কল্পনা করতে পারেন কি, যে পাকিস্তান প্রত্যেকদিন ভারতকে সমস্যায় রাখে, জঙ্গিবাদকে উৎসাহ জোগায়। ৯০ হাজার সৈন্য তখন তাদের কাছে ছিল, যদি তাদের বিকৃত মানসিকতা থাকত, তাহলে কী হতো? উড়োজাহাজকে যদি কেউ অপহরণ করে তাহলে পঞ্চাশজন যাত্রীর বদলে অনেক কিছু দাবি করা হয়, পাকিস্তানের হাজার হাজার সৈন্য ভারতের কাছে ছিল, কিন্তু ভারতের যে চরিত্র তা দেখুন, ভারতের সেনাদের চরিত্র দেখুন, আমরা বাংলাদেশের বিকাশের চিন্তা করেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চিন্তা করেছি।
আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গুরুত্ব দিয়েছি। যে কারণে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গুলি ছুড়তে আমরা বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করিনি। আমরা পকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু, আমরা কখনও আটক ৯০ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যদের নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করিনি। কারণ, আমরা চাইতাম বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সামনে এগিয়ে যাক।
ভারত বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, সেই ৯০ হাজার সৈন্য পাকিস্তানের কাছে ফেরত দিয়ে। এটি সরাসরি প্রমাণ করে ভারত কতটা শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র। এ কারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কমিটির সদস্যপদ ভারতের পাওয়া উচিৎ। কিন্তু, আমি জানি আমাদের মতো গরীব বা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দূরে বসেই একসঙ্গে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। বিশ্ব মঞ্চে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে একটি শক্তি হয়ে আভির্ভূত হতে হবে।
আমাদের সমস্যার সমাধান করতে নিজেদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে । কারও সহযোগিতায় কোনও কাজ যদি হয়, তাহলে কারও সাহায্য ছাড়া পাঁচবছরে তো হবে। আমরা মাথা নিচু করব না।
আমাদের উন্নয়নের পথে একযোগে চলতে হবে। আমার নির্বাচনে  জয়লাভ করার পর সরকার গঠন করার আগেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা সে দিনই বার্তা দিয়েছিলাম সবাইকে, আমরা সার্কভুক্তদেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এক সঙ্গে চলতে চাই। এটি এমনই একটি চক্র যার কাছে বিশ্বকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু আছে। আমাদের দু’দেশের মধ্যে ফল-ফসল থেকে অসংখ্য বিষয় আছে, যাতে রয়েছে বিভিন্ন মিল। এমন কখনও দেখা গেছে কি যেখানে দু’দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা একই ব্যক্তি! এই মিলগুলোই আমাদের শক্তি–যা আমাদের সব সময় এক করে রাখবে।
আপনাদের প্রধানমন্ত্রী আর আমার চিন্তা পুরোপুরি একরকম। আমাদের মাথায় একটিই বিষয়: উন্নয়ন, উন্নয়ন, উন্নয়ন।
আপনার দেওয়াল যতই শক্তিশালী হোক পাশের দেয়াল শক্ত না হলে আপনারটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। আর এ কারণে ভারত ও বাংলাদেশের অবস্থান সমান হতে হবে। দু’দেশকে সমান শক্তিতে এক সঙ্গে সামনের পথে এগুতে হবে, যেন ভবিষ্যতে কোনও সংকট তৈরি না হয়। আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আমার আসার পরপরই অনেকে বলেছিলেন, মোদিজি আরও কিছু বেশিদিনের জন্য আসলে ভালো হতো। আমারও মনে হয়, এ সফরে কিছু বিষয় অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
আমাকে গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন যে, বাংলাদেশের অতিথেয়তা ভোলার মতো নয় এবং আমিও সেটিই পেয়েছি। আর এ কারণে আমি চাই, আবার কোনো একদিন বাংলাদেশ আসতে।
আড়ং এর বিষয়ে শুনেছি। কুটির শিল্পে অনেক নাম করেছে। সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা আছে…।
মনে চায় নোয়াখালী চলে যাই, যেখানে মহাত্মা গান্ধীর আশ্রম আছে।
আমার মন আরও বলে, যদি সম্ভব হতো তাহলে কুঠিবাড়ী চলে যাই। আর ঠাকুর বাড়ি দেখি।’