বাংলাদেশের নাগরিক থাকতে চান ৩৩ ছিটমহলবাসী

9

স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ৩৩টি ছিটমহলের নাগরিক বাংলাদেশ থেকে চাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে ৬৪ বছর ধরে এসব ছিটমহলের অধিবাসীরা মানবেতর জীবন যাপন করে আসছিল।

ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুই দেশের মোট ছিটমহল রয়েছে ১৬৪টি। এর মধ্যে বাংলাদেশের অভান্তরে ভারতের ১১১টি এবং ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। লালমনিরহাট জোলায় রয়েছে ৩৩টি আর পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলায় রয়েছে ১৮টি ছিটমহল।

লালমনিরহাট জেলায় অবস্থিত ভারতীয় ছিট বার্শপচাই ভিতর বন্দ ছিটমহল নাম্বার ১৫২, পাটগ্রাম উপজেলায় ছোটবড় ২৭টি ছিটমহল ছিটমহলের মধ্যে রাজারহাটা, জহুর আলী ছিট, লতাবাড়ী ছিট, ছিটের বাড়ী, পানবাড়ী ছিট, ষোল ঘড়িয়া ছিট মহল।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়ন সংলগ্ন ভারতীয় বাশপচাই ছিটমহলের অধিবাসী কুদ্দুস আলী (৫৫) বলেন, এখান থেকে ভারতের দুরত্ব ৫ কিলোমিটার। আমরা ছিটমহলবাসী হওয়ায় ভারতের কোন সুযোগ সুবিধা পাইনা। অপর দিকে এখান থেকে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলা শহরের দুরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। তাই আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বসবাস করতে চাই। একই ছিটমহলের ফুলমতি রানী বলেন, বাংলাদেশে আমাদের আত্মীয় স্বজনরা বসবাস করেন। আমরা ভারতের কোনো সুযোগ সুবিধা গ্রহন করতে পারি না। আমাদের বাপ দাদারাও এ ছিটমহলে বসবাস করে মারা গেছেন। এ ছিটমহল থেকে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের দূরত্ব কম হওয়ায় বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বসবাস করতে পারলে আমরা বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবো।

এ ছাড়াও রাজারহাটা, জহুর আলী ছিট, লতাবাড়ী ছিট, ছিটের বাড়ী, পানবাড়ী ছিট, ষোল ঘড়িয়া ছিট মহলসহ আরো বিভিন্ন ছিটমহলের অধিবাসীরা জানিয়েছেন, তাদের আদি বংশধররা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় ছিটমহলে বসবাস করে আসছেন।

তারাও বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ায় বাংলাদেশেই থেকে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

চুক্তি মোতাবেক ছিটমহলবাসীরা এখন নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী যে কোনো দেশে চলে যেতে পারবে। নিতে পারবে সে দেশের নাগরিকত্ব ।

আগামী ৩১ জুলাই হস্তান্তর হতে যাচ্ছে ছিটমহল। লালমনিরহাট জেলা ছিটমহল বিনিময় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম জানান, ছিটমহলবাসীরা কোনো দেশে চলে যাবে তা নিয়ে অধিবাসীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে নানা ব্যস্ততা। আমরা ছিটমহলবাসী দীর্ঘ বছর বন্দি থাকার পর আজ আমরা আলোর মূখ দেখতে যাচ্ছি।

পাটগ্রাম উপজেলার ভোটবাড়ি ছিটমহলের অধিবাসী জাহিদুল ইসলাম জানান, চুক্তিতে ছিটমহলবাসীর নাগরিকত্ব বেছে নেয়ার সুযোগ থাকায় তিনি বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তার চাচা আবু তালেব ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহলের ৭১১০ একর জমি ভারতের অংশ হয়ে যাবে । আর ভারতের ১১১ টি ছিটমহলে ১৭১৬০ একর জমি বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাবে। ছিটমহল বিনিময়ের ফলে ভারত প্রায় ১০০০০ একর জমি বেশি হারাবে ।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। এটি মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হিসেবেই পরিচিত। ওই চুক্তিতেই ছিটমহল বিনিময়ের কথা উল্লে¬খ করা হয়।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের তাগাদা দিলে তখনকার কংগ্রেস সরকার এ নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ে ঢাকা সফরে একটি প্রটোকল সই হয়। এর পর ভারতের রাজ্যসভায় বেশ ক’বার বিলটি উত্থাপিত হলে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ বিরোধী পক্ষের তোপের মুখে পড়েন। আর গত বছর ভূমিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বহুল প্রতীক্ষিত স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পন্ন হওয়ায় ছিটমহলবাসীরা দীর্ঘ দিনের দুঃখ দুর্দশার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।