গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে

17

তীব্র গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীতে মহাখালীর কলেরা হাসপাতালে এখন ঠাঁই নেই অবস্থা।

এখন হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগী এলে তাদের অস্থায়ী তাঁবুতেও জায়গা দেওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, কলেরা হাসপাতালে একে একে রোগী আসছে আর ভর্তি হচ্ছে। ৩০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ৪০০। ফলে অতিরিক্ত রোগীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে তাঁবু।

হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগের প্রধান চিকিৎসক ড. আজহারুল ইসলাম খান জানান, সারা বছর গড়ে আড়াইশ থেকে ৩০০ রোগী হয়। কিন্তু মার্চ থেকে গরম শুরু হওয়ার পর রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় প্রচুর। এ সময় রোগীর সংখ্যা ৪০০ থেকে ৮৫০ পর্যন্ত হয়ে যায়।

তিনি জানান, এখন ৪০০ রোগী আছে। হাসপাতালের ভেতরে ৩০০ আর অস্থায়ী তাঁবুতে আছে ১০০ জন। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। আর এই সময় শিশু ও বয়স্করাই বেশি আক্রান্ত হয়।

তিনি বলেন, যদি রোগীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়, তখন এই তাঁবুতে জায়গা দেওয়া যাবে না। নতুন করে তাঁবু তৈরি করতে হবে। আর এর মধ্যে অনেক রোগী সুস্থ্ হয়ে বাড়ি চলে যাবে। কারণ এখানে যারা আসে তাদের ৮০ শতাংশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ্ হয়ে বাড়ি চলে যায়। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ১০০ ভাগ সুস্থ হয়ে সবাই চলে যায়।

তিনি জানান, এই রোগ মূলত দূষিত পানি ও বাসি খাবারের কারণে হয়ে থাকে। বেশিরভাগ রোগী আগে মিরপুর থেকে আসত। তাই এখন সেখানে একটি সেন্টার করে দেওয়ায় এখন আর আসে না। এখন বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে বেশি পরিমাণে রোগী আসে।

এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কেউ কেউ সেবার মান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। গুলশান থেকে সিনহা নামের ১১ মাসের একটি শিশুকে তার মা কল্পনা আক্তার গতকাল নিয়ে আসেন এই হাসপাতালে।

তিনি জানান, তার সন্তান তিন দিন ধরে অসুস্থ। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তার পাতলা পায়খানার অবস্থা আগের মতোই আছে। ডাক্তার শুধু স্যালাইন খাওয়াতে বলছে। আর কোনো ওষুধ দিচ্ছে না।

মুন্সীগঞ্জ থেকে ইরা নামের সাত মাসের শিশুকে নিয়ে এসেছেন রানী আক্তার। তিনি বলেন, চার দিন ধরে হাসপাতালে আমার সন্তান চিকিৎসাধীন তবুও বাচ্চার কোনো উন্নতি দেখছি না। পাতলা পায়খানার পাশাপাশি বমি করে আর মাথাটা উঠাতেই পারে না। ডাক্তার বলছেন, ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আর কত দিনে ঠিক হবে তা বলেন না। কিছু বললে বলেন, হাসপাতাল থেকে চলে যান। নাম কেটে দিই। কিন্তু আমার প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই।

তিনি বলেন, আগে এই হাসপাতালের চিকিৎসা ভালো ছিল। ১০ বছর আগে আমার ছেলেকে নিয়ে আসছিলাম তখন এক দিনে সুস্থ হয়ে যায়।

গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আসা ৬৫ বছর সাফিয়া বেগমকে একই রোগের কারণে এই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কিন্তু উন্নতি হয়নি। ডাক্তার বলছে ঠিক হয়ে যাবে। এ সময় তিনি এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো না বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমাদের খোঁজখবর ঠিকমতো নেওয়া হয় না।

এ সম্পর্কে ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, ভাইরাল ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে কারো কারো সুস্থ হয়ে উঠতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ রোগীই ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ্য হয়ে যায়। সূত্র: রাইজিংবিডি