মাদ্রাসাগুলিরে কেন মাদ্রাসাই রাখতে হবে

0
মাদ্রাসাগুলিরে কেন মাদ্রাসাই রাখতে হবে
কোনো বিদ্যালয় যখন ধর্মীয় শিক্ষামূলক হবে তা মাদ্রাসাই হবে। সেইটা পুবে হউক কী পশ্চিমে। তার নাম কী দেওয়া হবে, সেইটা একেক ভাষায় একেক নাম।
২.
“ইসলামি মাদ্রাসাগুলি চেঞ্জ কইরা কেন এখনও আধুনিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় করা গেল না”—এইটা অযৌক্তিক ও দূরভিসন্ধিমূলক চাহিদা।
পশ্চিম তার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে উপনিবেশগুলিতে পেশাগত শিক্ষা ও ট্রেনিং এবং একই সঙ্গে পশ্চিমা সংস্কৃতি শিখাইতেছে, সে তো প্রায় কয়েক শ বছরের কাহিনী।
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নাম্নী এই প্রতিষ্ঠানগুলি মূলত ছোট ছোট একটা একটা পশ্চিম। বা পশ্চিমের বিজ্ঞাপন তরঙ্গ।
এগুলিই যথেষ্ট কোনো জাতিরে তার অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মসহ খাইয়া দিতে! মাদ্রাসাগুলিরও একই নতজানু পশ্চিমগিরির কোনো প্রয়োজন নাই।
৩.
বরং মাদ্রাসাগুলি পশ্চিমা শিক্ষার বাইরে থাকা ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে পশ্চিমের আগ্রাসন থিকা নিজে যেমন রক্ষা পাইতেছে, তেমনি লোকাল কালচার বা লোকাচার এবং নিজস্ব মূল্যবোধরে তার ধর্মীয় শৃঙ্খলাসহই রক্ষা করতে পারতেছে।
অনেকে বলবেন, মাদ্রাসা তো আরবীয় সংস্কৃতি লইয়া আসতেছে, তার বেলা!
এইভাবে বলার মাধ্যমে পশ্চিমা শিক্ষার আগ্রাসনের সঙ্গে ছোট জাত ও পাতের মানুষদের ঐতিহাসিক ইসলাম ধর্মে সমর্পণ ও ধর্মরক্ষারে মিলাইয়া দেখানো হয়। লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমগত ভাবে দেখলে এই তুলনা খণ্ডিত তুলনা।
পশ্চিমা আদলে তৈরি শিক্ষায়তনগুলি যেইভাবে প্রধানত পশ্চিমের বিজ্ঞাপনী এজেন্সি, মাদ্রাসাগুলি তেমন নয়।
কারণ ইসলাম ধর্ম যেইভাবে এই অঞ্চলে বিকশিত হইছে তারে কেন্দ্র কইরাই মাদ্রাসাগুলি গইড়া উঠছে। স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগুলি যেহেতু খ্রীষ্টান ধর্ম উপজাত প্রতিষ্ঠান, তাই এই দেশে এগুলির গইড়া ওঠা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ ও সংস্কারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বিষয়।
এবং মাদ্রাসাগুলি পশ্চিমের তো নয়ই, মধ্যপ্রাচ্য বা সৌদী আরবেরও বিজ্ঞাপন করতেছে না। মাদ্রাসা শিক্ষা পশ্চিমা অপ্রয়োজনীয়, ফ্যাশনেবল ও হাওয়াই লাইফস্টাইল প্রডাক্টের ক্রেতা কইরা তুলতেছে না পাবলিকরে।
তবে অবশ্যই নানা সময়ে পশ্চিমের শিক্ষাপদ্ধতির প্ররোচনা, চাপ ও অনুসরণ মাদ্রাসাগুলিরে ধর্মশিক্ষা থিকা সরাইয়া অর্থনৈতিক অর্থাৎ পশ্চিমা শিক্ষার দিকে পরিচালিত করতে চাইছে। তার কারণে মাদ্রাসাগুলি মতার্দশগত ভাবে ভাগও হইছে।
৪.
আপনারা ভাইবেন না আমি পশ্চিমা শিক্ষার একজন বিরোধী লোক। মোটেই না।
আমি অর্থনৈতিক শিক্ষারে দেশের জন্যে অতি প্রয়োজনীয় জ্ঞান করি। মাদ্রাসা শিক্ষা আমি নিজেও নেই নাই, এবং খুব বেশি পশ্চিমা শিক্ষাও না।
যেহেতু আমি স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারের, তাই সার্বিক ভাবেই আমার শিক্ষার প্রয়োজন কম ছিল।
শিক্ষা যতটা দরিদ্র ব্যক্তিমানুষের (জনগোষ্ঠীর নয়) অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তর লইয়া আসতে পারে, মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে তা ততটা পারে না। মধ্যবিত্তের কয়েক ধাপ পর্যন্ত আর্থিক রূপান্তর তারে মধ্যবিত্তই কইরা রাখে। এইটা মজার জিনিস।
মিডল ক্লাসের ক্ষেত্রে রূপান্তর ঘটাইতে পারে ব্যবসা, সেইটা ভিন্ন আলাপ। পরে করা যাবে।
৫.
আপনারা জানেন, মাদ্রাসাগুলির ভার সরকারের বা রাষ্ট্রের। মি. সরকার সেই দায়িত্ব আর নিতে চাইতেছেন না। দুই কারণে।
এক, প্রতিবেশী দেশের সরকারের হি ন্দু ত্ব বাদরে কেন্দ্র কইরা তার সরকারে ক্রমাগত আসীন থাকার কলাকৌশলগত কারণে, দুই ওয়ার অন টেররের চাপে।
অথচ মাদ্রাসা রক্ষা সরকারের নিজেরে রক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত।
আমাদের সরকার যেইটা বুঝতেছে না, একটা দেশে যদি ধর্মীয় শিক্ষার বিলোপ ঘটে তবে দেশ শাসন অনেক বেশি কঠিন হইয়া পড়বে।
রাষ্ট্রে যেগুলি রেডি সিস্টেম তা নষ্ট করতে নাই। ওইটা বিপ্লবীদের কাজ। সরকারের না। কিন্তু আমরা জানি, বর্তমান সরকারের মধ্যে রুশ দেশীয় ছায়া বিপ্লবীদের অধঃপাতিত কিছু দ্রব্যাংশ বিরাজ করে। তারা চায় ইসলামের উচ্ছেদ। তাই তারা মেবি সরকারের কানে কুমন্ত্রণা দেয় মাদ্রাসা উৎখাতের। এই কাজ যে বিধ্বংসী, তা শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান দেশনায়কদের বুঝতে হবে।
বাইরের শক্তিগুলিরে নিউট্রাল করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শাসনে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে অনুগত মাদ্রাসা ভিত্তিক ধর্মীয় নেতৃত্ব অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৬.
যাতে ধর্মীয় পেশাতে বিলং কইরাই ধর্ম অনুশীলন করা যায় তার জন্যেই মাদ্রাসা বা ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
পশ্চিমে ধর্মকেন্দ্রিক বিদ্যালয় এখনও আছে কিনা আমি জানি না। এবং চার্চগুলির কোনো শিক্ষাকেন্দ্র আছে কিনা এবং সেখানে স্কুল, কলেজ, ইউনি অনুসারে শিক্ষা দেওয়া হয় কিনা তার কিছুই জানি না। মহাজ্ঞানী জীবন্ত রেফারেন্সম্যান গুরুসম বড়ভাই সলিমুল্লাহ খান তা জানবেন।
তার ব্যাপারে দেখলাম সেক্যুলাররা চেইত্তা আছেন! হাঃ হাঃ। বাট আমি মনে করি, সলিমুল্লাহ খান মাদ্রাসার সঙ্গে তুলনা কইরা যা যা বলছেন সত্য কথাই বলছেন।
৭.
মাদ্রাসারে ইউনিভার্সিটি বানানোর ষড়যন্ত্রের অন্য নাম মাদ্রাসার বিলুপ্তিকরণ ঘটানো। এইটা ওয়ার অন টেররের ফাইট।
মাদ্রাসায় কী কী সমস্যা আছে, সেইখানে যে বলাৎকার ঘটে সেইটা সমাধানের উপায় মাদ্রাসাগুলির স্কুল কলেজে রূপান্তরের মধ্য দিয়া ঘটবে না।
মাথাব্যথার জন্যে মাথা কাইটা গোবরচাপা দেওয়া কোনো কাজের কথা না। রাষ্ট্র এইভাবে চলে না। ব্লগারদের বা ফেসবুক পোস্টারদের কথায় রাষ্ট্র চালাইয়েন না।
হে মাননীয়গণ।