বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো পতিতা তৈরির কারখানা!

82

একজন মানুষের রুচির প্রকাশ শৌচাগার বা স্নানাগার। বলা হয়ে থাকে যে ব্যক্তি যত রুচিশীল ও সৌন্দর্য্যপ্রিয় তার ব্যবহৃত প্রক্ষালম্বন কক্ষটিও তত গোছালো ও স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু রুচিশীলতা তো আসে শিক্ষা ও অর্জন থেকে।
এবার দেখা যাক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শৌচাগারগুলোতে রুচির কেমন প্রতিফলন ঘটে! জনশৌচাগারেও বোধহয় যেসব কথা লেখা থাকে না, সেগুলো লেখা থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৌচাগারে!
আমি কোন জরিপ নিয়ে বসিনি। কেবল প্রয়োজনের খাতিরে যেসব শৌচাগারের অবস্থা স্বচক্ষে দেখতে হয়েছে তার কথাই বলছি। কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতেই স্টেশনের যে টয়লেটটি চোখে পড়বে, তা কতটা নোংরা তা খুব সহজেই আপনার চোখে পড়বে। ঢুকতেই চোখে পড়বে স্যাঁতসেঁতে মেঝে, অপরিষ্কার বেসিন। পানির ট্যাপটা ছাড়ামাত্রই গায়ে এসে জল ছিটকে পড়ে!

এবার বাথরুমের দরজার দিকে তাকান। কিছু অস্বস্তিকর লেখা দেখতে পাবেন। ঢোকার পর ৯০ ডিগ্রি কোণেও ঘুরতে হবে না, নোংরায় ভরপুর কমোডের সাথে চোখে পড়বে পুরো দরজা জুড়ে থাকা ছাত্রদের অশালীন কাব্য প্রতিভার বিকাশ! সেই সঙ্গে ‘কল মি, নং-….., ফোন করুন এই নাম্বারে…’ এসব তো আছেই।

এরপর বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির বাথরুমগুলোতে ঢুঁ দিন। ব্যতিক্রমী কয়েকটি বিভাগ ছাড়া বাকিবিভাগগুলোর বাথরুমগুলোতে একবার গেলে দ্বিতীয়বার আর যাবার ইচ্ছা হবে না। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মেয়েদের কমন রুমের বাথরুম কত বছর অন্তর পরিষ্কার করা হয় ঈশ্বর মালুম। তাছাড়া বিভাগগুলোর মেয়েদের বাথরুমের অবস্থা খুব করুণ। প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন করবেন কিন্তু করণ কারক তথা উপকরণই নাই! আর ছেলেদের বাথরুমেতো যাওয়াই যায় না! দুয়েকবার বিপদে পড়ে যেতে হয়েছিল। ভেতরের অবস্থা দেখে বমি হতে হতেও হয়নি।

কলাভবনের বাথরুমের অবস্থাও একইরকম। নিতান্ত বিপদে না পড়লে কেউ যাবার নাম ধরে না। তারচেয়ে করুণ অবস্থা বিজ্ঞান অনুষদের। যাবতীয় বর্জ্য-জঞ্জালের স্তূপতো রয়েছেই, বেসিনও ভাঙাচোরা।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মেয়েদের বাথরুমের বেসিনে পানিই থাকে না। প্রশাসনিক ভনের বাথরুমগুলোর অবস্থাও যাচ্ছেতাই।

আইডি ক্যাফেটেরিয়ার বাথরুম মোটামুটি মানের। অন্ততপক্ষে নাক চেপে রাখতে হবে না। এবার আসি সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে। মোটামুটি পরিষ্কার এই বাথরুমগুলোও কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের কবল থেকে রেহাই পায় নি। হালকা-পাতলা উদাহরণ দিচ্ছি: ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েগুলো এক একটা পতিতা। আর হলগুলো পতিতা তৈরির কারখানা’!

যেদিন প্রথম ওই লিখা পড়েছি, পা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত জ্বলে যাচ্ছিল। লেডিস টয়লেটের দরজায় লেখা অন্যান্য কথাগুলোও ছাত্রীদের প্রতি চরম ব্যাঙ্গাত্বক ও অরুচিকর। রুচি চরম বিকৃত না হলে এইরকম কথা কেউ লিখতে পারে বলে আমার মনে হয় না।
এই হল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্ষালন কক্ষগুলোর অবস্থা। বাকি অনুষদ বা ভবনগুলোর কথা জানি না। তবে খুব বেশি রকমফের হবে বলে মনে হয় না।

এই যে অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর এসব শৌচাগার প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ ব্যবহার করছে, তাতে কী পরিমাণ রোগ-জীবাণুর সংক্রমন হতে পারে তা নিয়ে কি প্রশাসন কখনো ভেবেছে? কিংবা কেউ কি ভাবাতে বাধ্য করেছে? নিয়মিত শৌচাগার পরিষ্কারের ব্যাপারটি কি কেবল আকাশ-কুসুম কল্পনাই থেকে যাবে?

বিভাগগুলোও তো তাদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা সহজেই নিরসন করতে পারে। আর শিক্ষার্থীদের অবস্থাও বলিহারি! ব্যবহারের পর নোংরা করাই যেন তাদের ধর্ম!
আর রুচিহীন বিকৃতমষ্তিকের কাব্যপ্রতিভাসম্পন্ন সেইসব ছাত্রদের কথা ভেবে কেবল বিস্ময় জাগে, যে এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র! আর কাব্যেরও কি ধরণ! আক্রমণের শিকার হবে কেবল নারীরা!

এই সমস্যাগুলো থেকে কবে আমরা মুক্তি পাব?
নিত্যদিনের আবশ্যিক বিষয়টিও এইসব সমস্যার কারণে বারবার অস্বস্তির ঠেকে।
আরো মারাত্মক ব্যাপার হচ্ছে, এসবেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। নাক চেপে কাজ সারি, অতঃপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে খিস্তিখেওড় শেষ করে দশ মিনিট পর আবার যেই কে সেই।

অস্বাভাবিকতাই এখানে স্বাভাবিক, অনিয়মই এখানে নিয়ম হয়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা থাকি বা আসি, তারা প্রতিনিয়তই থাকছি এরকম অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের চক্রে।
কবে প্রশাসন এই দিকে নজর দেবে? কবে শিক্ষার্থীরাও তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলবে? কবে শিক্ষা আর রুচির সমন্বয়ে সুন্দর একটি পরিবেশ গড়ে উঠবে? কবে???
সায়মা নাসরিন রুম্পা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মেহেদী হাসান


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here