বইমেলায় ফাগুনের আগুন

47

Falgunস্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থেকে থেকে গান গাইছে কোকিল। গানের পাখি কোকিলের কুহুতানে ভিন্ন এক সুর প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল গ্রন্থমেলায় আগতদের হৃদয়ে। মিষ্টি সুরের সঙ্গে লাল-হলুদের বাসন্তী সাজ গ্রন্থমেলাকে করেছিল উচ্ছ্বসিত। ইট কাঠের যান্ত্রিক নগরীতে পলাশ ও শিমুল ফোটার দৃশ্য দেখা যায় না বলে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নিজেদের মধ্যে একইসঙ্গে ধারণ করেছিল পলাশ ও শিমুলের আভা। হলুদ পাঞ্জাবিতে তরুণদের হিমু সাজার পাশাপাশি তাদের প্রেয়সীরাও সারা অবয়বে ধারণ করেছিল হলুদের আলোকচ্ছটা। হলুদ শাড়ি, লাল ব্লাউজ আর মাথায় লাল-হলুদ ফুলের টায়রা সমগ্র রাজপথকে সাজিয়েছে বাসন্তী রঙে। যেন সারা দেহের সোনার অঙ্গ সোনা রঙের হলুদে মোড়ানো। ফাগুনের রূপ, রস, গন্ধে বিভোর হওয়ার প্রতিযোগিতায় চার দেয়ালের প্রকোষ্ঠ থেকে রাজপথে নেমে এসেছে তারুণ্য। তারুণ্যের উন্মাদনায় টিএসসি থেকে শুরু করে দোয়েল চত্বর, প্রশস্ত রাজপথ থেকে সংকীর্ণ গলিপথ সর্বত্রই ছিল বসন্তের বাঁধভাঙা জোয়ার। বাসন্তী সাজে প্রিয়তমের হাত ধরে প্রিয়ার ঘুরে বেড়ানো, কপোত-কপোতির ভালোলাগা আর ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে যাওয়া যেন ছিল ফাগুনের দিনে ভালোবাসা দিবসের মহড়া। সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে পলাশ ফোটার দিনে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালির বাঁধভাঙা জনস্রোতে ফুটে উঠেছিল বাঙালির অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা। বাসন্তী রঙে প্রাণের গ্রন্থমেলা ভিন্ন এক রূপ ধারণ করেছিল গতকাল মেলার ১৩তম দিনে। বসন্তের উপচেপড়া জোয়ার গ্রন্থমেলাকে উন্নীত করেছিল সফলতার সোপানে। বাসন্তী দিনের এই ধারাবাহিকতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে গ্রন্থমেলা নিঃসন্দেহে সফলতার সোনালি সোপানে আরোহণ করবে এমন প্রত্যাশা প্রায় সব প্রকাশকের। গতকাল ছিল মেলার তৃতীয় শিশুপ্রহর। এদিন বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ছোটাছুটি আর খেলাধুলায় মেতে ওঠে কোমলমতি শিশুরা। অভিভাবকদের কাছে বায়না ধরে প্রিয় কার্টুন, জোকস, সায়েন্সফিকশন ও ধাঁধার বইগুলো কিনে নেয় খুদে বন্ধুরা। আজ মেলার চতুর্থ ও শেষ শিশুপ্রহরও।

নতুন প্রকাশিত বই : অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৩তম দিনে শুক্রবার সর্বোচ্চ সংখ্যক বই এসেছে, ৩১১টি। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে মহাকাল থেকে প্রকাশিত আবদুল গাফফার চৌধুরীর ‘বিলাতের রাধা’, বাঁধন পাবলিকেশন্স থেকে ওবায়দুল কাদেরের ‘মেঘে মেঘে অনেক বেলা’, ঝিনুক প্রকাশনী থেকে সেলিনা হোসেনের ‘মুক্তিযুদ্ধের দুটি উপন্যাস’, নন্দিত পাবলিকেশন্স থেকে যতীন সরকারের ‘ব্যাকরণের ভয় অকারণ’, জাগৃতি প্রকাশনী থেকে জাকির তালুকদারের ‘গোরস্থানের জ্যোৎস্না’, বলাকা প্রকাশন থেকে চন্দন চৌধুরীর ‘পা-বজন্ম’ ও ‘ঢাকা সিরিজ’, চৈতন্য থেকে জিনাত জাহান খানের কাব্যগ্রন্থ ‘কথা বলা মাছ’ প্রভৃতি। গতকাল একাডেমির নজরুল মঞ্চে ২৫টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। এর মধ্যে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বহ্নিশিখার ‘সঞ্চয়ন’ কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।মেলার মূল মঞ্চ : গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি আবুল হোসেন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. তারেক রেজা। আলোচনায় অংশ নেন বায়তুল্লাহ কাদেরী, অনু হোসেন এবং হিমেল বরকত। সভাপতিত্ব করেন মনজুরে মওলা।    ঢাবিতে বসন্তবরণ : বর্ণিল সব আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে গ্রহণ করা হয় নানা কর্মসূচি। এ উপলক্ষে ঢাবির চারুকলা অনুষদে ‘বসন্ত উদযাপন পরিষদ’ আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বটতলায়, টিএসসি প্রাঙ্গণ এবং সড়ক দ্বীপে পৃথক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পুরো ক্যাম্পাস পরিণত হয় নানা বয়স আর শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলায়। ফাগুনের আগুন ঝরা গানে গানে আনন্দচিত্তে দিনটি কাটায় প্রিয়জনের হাত ধরে আসা মানুষগুলো। চারুকলা অনুষদে আয়োজিত সাংস্কৃতিক পর্বে পরিবেশিত বিভিন্ন গান মনে করিয়ে দেয় বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, কাজল দেবনাথ, মানাজার চৌধুরী সুইট প্রমুখ। –
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন