বাজেট ২০২১-২২ : জেনে নিন এক ঝলকে

552
বাজেট ২০২১-২২ : জেনে নিন এক ঝলকে

বাজেট ২০২১-২২ জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। ৩ জুন রোজ বৃহস্পতিবার এটি উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামের এ বাজেট বাংলাদেশের ৫০তম। যার আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট এটি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি তৃতীয় বাজেট।

এক নজরে বাজেট ২০২১-২২

বাজেটের আকার: ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা: ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা
ঘাটতি: ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা জিডিপি’র ৬.২ শতাংশ।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি: ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা
প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা: ৭ দশমিক ২ শতাংশ
মূল্যস্ফীতি: ৫ দশমিক ৩ শতাংশ
করমুক্ত আয়ের সীমা: বার্ষিক ৩ লাখ টাকা
করোনা মোকাবিলা: ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল
ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস আসবে: ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা এবং
অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা
অভ্যন্তরীণ উৎস: ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সংগৃহীত হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং
সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক-বহির্ভূত খাত হতে আসবে ৩৭ হাজার ১ কোটি টাকা।
শিক্ষা খাতে বরাদ্দ: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ৭১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা

অর্থায়নের উৎস : বাজেট ২০২১-২২
অর্থায়নের উৎস : বাজেট ২০২১-২২

বাজেট ২০২১-২২ : কোন খাতে কত বরাদ্দ

• সামাজিক অবকাঠামো: ১ লাখ ৭০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা।
• মানবসম্পদ: ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা।
• সামাজিক নিরাপত্তা: ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা।
• কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন: ৭৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা।
• যোগাযোগ ও অবকাঠামো: ৬৯ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা।
• বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা।
• করোনা মোকাবেলা: ১০ হাজার কোটি টাকা।
• স্বাস্থ্যখাত: ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা।
• স্বাস্থ্য শিক্ষা ও প্রযুক্তি গবেষণা: ১০০ কোটি টাকা।
• প্রাথমিক ও গণশিক্ষা: ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা।
• মাধমিক ও উচ্চ শিক্ষা: ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা।
• কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা: ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা।
• স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন: ৪১ হাজার ১০ কোটি টাকা।
• কৃষি: ২৪ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।
• মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়: ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা।
• তৈরি পোশাক খাত: ১ শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনা।
• এছাড়া পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।
এবারের বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এই ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।

বাজেট ২০২১-২২ : হাইলাইটস
বাজেট ২০২১-২২ : হাইলাইটস ( ছবি : প্রথম আলো)

বাজেট ২০২১-২২ : হাইলাইটস

পাঁচ বিষয়কে অগ্রাধিকার, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭.২ %

করোনার মধ্যেও ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ জন্য কিছু পণ্য ও সেবার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে, আবার ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। তবে বাজেট করতে গিয়ে পাঁচ বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমদানি পর্যায়ের শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি, সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন করসংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এগুলো হলো করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়, রপ্তানিমুখী শিল্প বহুমুখীকরণ এবং তার সংযোগ শিল্পে প্রণোদনা।

স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিকস এবং আইসিটি খাতের বিকাশ ও উন্নয়ন।
ব্যবসায় সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়ন এবং স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও প্রতিরক্ষণে শুল্কহার যৌক্তিককরণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব (মূল্য সংযোজন কর ও আয়কর) আহরণ বৃদ্ধি।

বাজেট : দাম বাড়বে কমবে

দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

বাজেটে কিছু পণ্যের শুল্ক-করহার বাড়ানো হয়েছে। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, বাজেটে শুল্ক-করের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা ঘোষণার পরই কার্যকর হয়।

মুঠোফোন
বাজেটে মুঠোফোন (ফিচার ফোন) আমদানিতে আমদানি শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বিদেশি মুঠোফোনের দাম আরও বাড়তে পারে।

বিদেশি মাংস
মাংস আমদানিতে শুল্কহার বাড়ানো হয়েছে। বসানো হয়েছে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট। আবার ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিদেশি মাংসের দাম বাড়বে। দেশীয় খামারিদের সুরক্ষা দিতে কাজটি করেছে সরকার।

মাশরুম
বিদেশি মাশরুমের দাম অনেকটাই বাড়তে পারে। এই মাশরুম আমদানিতে আমদানি শুল্ক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাশরুম আমদানিতে ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য আরোপের কথা বলা হয়েছে।

বিদেশি গাজর-টমেটো
চাষিদের সুরক্ষা দিতে গাজর, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচ, টমেটো ও কমলা আমদানিতে ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য আরোপের কথা বলা হয়েছে। এতে এসব পণ্য আমদানিতে কম দাম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া যাবে না। দাম বাড়তে পারে। গাজরের ওপর ভ্যাটও আরোপ করা হয়েছে।

শিল্প লবণ
শিল্প লবণের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। এত দিন শিল্প লবণের নামে ভোজ্য লবণ আমদানি হতো। এখন দুই লবণের করহারের সমন্বয় করা হয়েছে।

বিদেশি সাবান
সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম বাড়তে পারে।

চুইং গাম
এর ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে দাম বাড়বে।

বিদেশি বিস্কুট
বিস্কুট ও সমজাতীয় সুগার কনফেকশনারির ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম অনেকটাই বাড়তে পারে।

বিদেশি রড ও সমজাতীয় পণ্য
আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এতে দাম বাড়তে পারে। অবশ্য রডের বাজার মূলত দেশীয় কোম্পানির দখলে।

যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে

২০২১-২০২২ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পণ্যের করহার কমানো হয়েছে। এতে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। উল্লেখ্য, বাজেটে শুল্ক-করের প্রস্তাব ঘোষণার পরই কার্যকর হয়।
বাজেটে শুল্ক কর বাড়ানো বা কমানোর যে প্রস্তাব করা হয় তা বাজেট ঘোষণার পরপরই কার্যকর হয়।

স্যানিটারি ন্যাপকিন
দাম কমতে পারে স্যানিটারি ন্যাপকিনের। কারণ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে উৎপাদিত ন্যাপকিনের সমুদয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

করোনার কিট
সুরক্ষা সামগ্রীতে শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা আগেই ছিল। এবার করোনা শনাক্তের আরটি-পিসিআর কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।

শৌচাগারের প্যান
গ্রামের মানুষের স্যানিটেশন সুবিধা বাড়াতে দেশে উৎপাদিত লং প্যানের সম্পূরক শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ছিল।

অটিজম সেবা
এ সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মেডিটেশন সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

ইস্পাত
ইস্পাতের ওপর সুনির্দিষ্ট শুল্ক টনপ্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।

মুরগি/মাছের খাবার
উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে মুরগি, মাছ ও গবাদিপশুর খাবারের দাম কমানোর সুযোগ তৈরি হবে।

ক্যানসারের ওষুধ
ক্যানসারের ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামালে আবার শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। এতে ক্যানসারের ওষুধ উৎপাদনে ব্যয় কমবে। এ ছাড়া ওষুধ শিল্পের আরও কিছু কাঁচামালে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।

মেডিকেল ডিভাইস
বেশ কিছু মেডিকেল যন্ত্রাংশ উৎপাদনে উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

দেশি এলপিজি সিলিন্ডার
দেশে এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

দেশি খেলনা
দেশে খেলনা উৎপাদনে উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দিয়েছে সরকার।

ডায়ালাইসিসের টিউব
ডায়ালাইসিস সেবায় ব্যবহার করা ব্লাড টিউবিং সেটের কর কমানো হয়েছে।

৮০% মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ভাগ ভাগ করে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকার আওতায় আনা হবে। প্রথম পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষ টিকা পাবেন।
টিকার জন্য আর্থিক সহায়তা কোথা থেকে আসছে, কোথা থেকে আসতে পারে, তারও বর্ণনা আছে অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায়। তিনি বলেন, টিকা কেনার জন্য বিশ্বব্যাংকের ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং লজিস্টিক সহায়তার জন্য ১৪ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হচ্ছে। টিকা কিনতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ৯৪০ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার জন্য ঋণচুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক থেকে টিকা কেনার সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে টিকার ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে।

গৃহস্থালিকাজে ব্যবহৃত পণ্যে করছাড়

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে গৃহস্থালিকাজে ব্যবহার্য পণ্য যাতে দেশে উৎপাদিত হয়, সে উদ্দেশ্য ভ্যাট ও আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করছি।’
জুসার, মিক্সচার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইসকুকার, মাল্টি কুকার, প্রেশার কুকারের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া মুড়ির স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট এবং তাজা ফলের ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

গ্রামে বাড়ি বানাতে দিতে হবে কর

বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে শহরে বা গ্রামে যে কোনো জায়গায় বাড়ি করতে হলে টিআইএন নিতে হবে। এতে বাড়ির মালিকরা করের আওতায় আসবেন।
এছাড়া যে কোনো সমবায় সমিতির নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, করজাল সম্প্রসারণে বাড়ির নকশা অনুমোদন ও সমবায় সমিতির নিবন্ধনে টিআইএন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রস্তাব করছি। এছাড়া বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের নিয়ে কোনো সমবায় সমিতি করলে সেটার নিবন্ধন নিতে হলেও টিআইএন নিতে হবে।

বাজেট ২০২১-২২ : সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০ উন্নয়ন প্রকল্প

১. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ পাচ্ছে ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা।
২. মাতারবাড়ি ৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট পেয়েছে প্রায় ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।
৩. চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) পেয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা।
৪. ঢাকা ম্যাস র্যা পিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) পেয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
৫. পদ্মা সেতু রেলসংযোগ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।
৬. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।
৭. পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পে মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
৮. ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা।
৯. পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা।
১০. হযরত শাহজালাল আন্তর্জঅতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (সংশোধিত) প্রকল্প পেয়েছে ২ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের বাজেটের খুঁটিনাটি তথ্য

অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক প্রবণতা হিসেবে বাজেটের আকারও বাড়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই ৪৯টি বাজেটে রেখার সোজা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। এবারও গতবারের তুলনায় বাড়ছে বাজেটের আকার।
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে একটি বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্পদের পুনর্বণ্টন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি। এ লক্ষ্য পূরণে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আয়তন বাড়ছে। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, বড় বাজেটে সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। প্রথমে গণতান্ত্রিক, এরপর সামরিক, শেষে আবারও গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। স্বাধীনতার পর ৪৯টি অর্থবছরে ১১ জন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পেশ করেছেন। সব মিলিয়ে মোট ১৩ জন বাজেট পেশ করেছেন। ১৯৭২ সালে প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। শেষ প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

প্রথম বাজেটের পর এক হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল তিন বছর। এরপর ১৪ বছর লেগেছে ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে। ১৯৮৮ সালে এ বাজেট পেশ করা হয়। এরপর ২১ বছর পর এক লাখ কোটিতে উন্নীত হয় বাজেটের আকার। এটি ২০০৯ সালের কথা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে এক লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করে। এর ১০ বছরের মাথায় এবার একই সরকার ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দেয়।

স্বাধীনতা–পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন ওই বাজেট পেশ হয়। তাজউদ্দীন আহমদ ওই দিন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর, অর্থাৎ দুই অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এরপর আরও দুবার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ, সেটি সবশেষ দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকার।

১৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দিয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইফুর রহমান। দুজনেই ১২টি বাজেট উত্থাপন করেছেন। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিতই টানা ১০ বার বাজেট পেশ করেছেন আওয়ামী লীগের হয়ে। তিনি প্রথম বাজেট দেন ১৯৮২-৮৩ সালে, এরশাদের শাসনামলে। সেটার আকার ছিল ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। আর সবশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তার বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার।

অর্থমন্ত্রীরা বাজেট বক্তৃতায় বিভিন্ন ধরনের উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন। তবে একই উদ্ধৃতি দুজন অর্থমন্ত্রীর ব্যবহার বিরল। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরের বাজেটে এম সাইফুর রহমান বক্তব্য শেষ করেছিলেন এভাবে- ‘পৃথিবীর একটি সুপ্রাচীন দেশের একটি উক্তির কথা মনে পড়ে: “হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় একটি পদক্ষেপ দিয়েই।” আসুন আমরা সমবেত হয়ে সেই একটি পদক্ষেপ নেই।’ পরে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যের শেষে অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া বলেছিলেন, ‘চীনা ভাষায় একটি প্রবাদে যথার্থই বলা হয়েছে, “হাজার মাইলের ভ্রমণ শুরু হয় একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপের মাধ্যমেই।” আমাদের গন্তব্য যত দুর্গমই হোক না কেন আমরা চলতে শুরু করেছি।

এক অর্থবছরে দুবার বাজেট উপস্থাপনের উদাহরণও আছে। যেটি হয়েছিল ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এর পরে নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়ে মূল আর্থিক কাঠামো ঠিক রেখে নতুন করে বাজেট উপস্থাপন করেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া।

পঞ্চম মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের ৫ জন অর্থমন্ত্রী ২১টি বাজেট দিয়েছেন। বিএনপির তিন মেয়াদের শাসন আমলে ৩ জন ১৬টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। জাতীয় পার্টির আমলে নয়টি বাজেট চারজন অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন। তিনটি বাজেট দিয়েছে দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সাবেক অর্থমন্ত্রী এস এ এম এস কিবরিয়া টানা ছয়টি বাজেট ঘোষণা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুটি বাজেট ঘোষণা করেন এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি ২০০৭-০৮ অর্থবছর ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অসুস্থতার কারণে পুরো বাজেট সংসদে উপস্থাপন করতে না পারায় উত্থাপন করেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সূত্র: প্রথম আলো, যুগান্তরইত্তেফাক