আইজ্যাক হারজোগ : ইসরাইলের নতুন প্রেসিডেন্ট

373
আইজ্যাক হারজোগ : ইসরাইলের নতুন প্রেসিডেন্ট

প্রবীণ রাজনীতিবিদ আইজ্যাক হারজোগ ইসরাইলের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার মেয়াদ ৭ বছর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর আইনপ্রণেতাদের ধন্যবাদ দিয়ে হারজোগ বলেন, ‘আমি সবার প্রেসিডেন্ট হতে চাই। আমি সবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করব। আমাদের অবশ্যই ইসরাইলের আন্তর্জাতিক অবস্থান এবং খ্যাতি রক্ষা করতে হবে। আমি ইসরাইলি সমাজকে একত্রিত করার প্রচেষ্টাগুলিতে মনোনিবেশ করব। ইসরাইলের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে শক্তিশালীকরণ, ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়ায় মনোযোগ দেব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও সারাবিশ্বের ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধন বাড়ানোয় মনোনিবেশ করব।

ইসরাইলের নতুন প্রেসিডেন্ট : কে এই আইজ্যাক হারজোগ?

জন্ম ও বংশ পরিচয়

আইজ্যাক হারজোগের জন্ম ইসরাইলের এক বিখ্যাত জায়নবাদী পরিবারে। তার বাবা চাইম হারজোগ ইসরাইলের ৬ষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলে প্রেসিডেন্ট। তার আগে, তিনি ছিলেন জাতিসংঘে ইসরাইলের দূত।

তার চাচা আব্বা ইবান ছিলেন ইসরাইলের কিংবদন্তিতুল্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলের দূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আইজ্যাক হারজোগের দাদা ছিলেন ইসরাইলে ইহুদিদের প্রধান ধর্মগুরু।

লেবার পার্টির প্রধান

আইজ্যাক হারজোগ ২০০৩ সালে ইসরাইলের পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০ বছর ধরে মধ্য-বামপন্থী লেবার পার্টির এই নেতা নেসেটের সদস্য ছিলেন। ইসরাইলের লেবার পার্টির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৫ সালের নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেসময় তিনি লড়ে বিজয়ী হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং বিরোধীদলের নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

বিরোধী নেতা হিসেবে চিন্তাধারা

বিরোধী নেতা হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ইসরাইল গৃহযুদ্ধের মুখে রয়েছে। ডানপন্থি রাজনীতিকরা ইসরাইলের ভেতরে ঘৃণা ও বর্ণবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছেন যার কারণে গৃহযুদ্ধের আশংকা বাড়ছে। ঘৃণা, বর্ণবাদ, অন্ধকার এবং বেড়ে চলা হত্যাকাণ্ড ও গুপ্তহত্যার কারণে আমরা গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি।

ইহুদি সামরিক রাবাইরা নারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন; তেমনি করে ইহুদিদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে নানা রকমের ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এ ধরনের ঘৃণা, বিদ্বেষ ও বর্ণবাদী চিন্তার যে বীজ বপন করা হয়েছে যা ইসরাইলকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে। প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় এ হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব রয়েছেন।

ইহুদি সংস্থার প্রধান

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানো ইহুদিদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক রক্ষায় নিয়োজিত আধা-সরকারি সংস্থা ইসরাইলি ইহুদি সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছেন হারজোগ।

২০১৮ সালে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং ইহুদি সংগঠন জুইশ এজেন্সির নির্বাচিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখনো তিনি সংগঠনটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটি বিশ্বে ইহুদিদের বৃহত্তম অলাভজনক সংগঠন।

তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি সংগঠনের নেতাদের সমর্থন পেয়ে নেতানিয়াহুর পছন্দের প্রার্থীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

নেতানিয়াহুর দুর্নীতি হারজোগের আশির্বাদ

নেতানিয়াহুর দল কোনও প্রার্থী মনোনীত করেনি। নেতানিয়াহু এর আগে তার দুর্নীতির বিচার থেকে দায়মুক্তি অর্জনের প্রয়াসে নিজেই ভোটে লড়াইয়ের বিষয়টি বিবেচনা করেছিলেন। তিনি কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করেননি সম্ভবত এই সত্যটি বিবেচনায় নিয়ে যে, দুর্নীতির বিচারে শাস্তি হলে রাস্তা থেকে তাদের ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

সাত বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট

আগামী ৯ জুলাই দেশটির ১১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন তিনি। এদিন থেকে তার সাত বছর মেয়াদি দায়িত্ব শুরু হবে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রুয়েভেন রিভলিনকে সরিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন তিনি।

১২০ সদস্যবিশিষ্ট ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেট প্লেনিয়ামে ২ জুন অনুষ্ঠিত গোপন ব্যালট ভোটে ৮৭জন আইনপ্রণেতার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ৬০ বছর বয়সী হারজোগ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিরিয়াম পিরেটজ পেয়েছেন ২৭ ভোট।

এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন?

হারজোগের প্রেসিডেন্ট হওয়া এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এমন সময়ে নির্বাচিত হলেন যখন- ইসরাইলের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নতুন সরকার গঠনের সমর্থন দিয়েছেন। ইসরাইলে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সময় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনাও করতে পারে, সেক্ষেত্রে তার ভূমিকাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি

ইসরাইলের পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতার পরিধি খুবই সীমিত। প্রাথমিকভাবে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং সরকার গঠনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কাজ করেন।

আর দেশটির নির্বাহী কর্তৃত্ব এককভাবে থাকে প্রধানমন্ত্রীর। তবে প্রেসিডেন্ট অপরাধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমার ঘোষণা দিতে পারেন।