তালেবানের গলারকাঁটা কে এই আহমেদ মাসুদ?

246
তালেবানের গলারকাঁটা কে এই আহমেদ মাসুদ?

পানশির আফগানিস্তানে একটি ছোট এলাকা। মাত্র ৩ লাখ লোকের বসবাস। পুরো আফগানিস্তানে যার শাসনেই থাকুক না কেন পানশিরের শাসন ভার কেউ হাতে নিতে পারেনি।
এর কারণ পানশির পাহাড় পর্বতে ঘিরে থাকায় এটি প্রাকৃতিকভাবে নিরাপত্তায় আবদ্ধ। বাইরে থেকে এসে কোনো শক্তির জন্যই পানশির দখল করা সহজ ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগান দখল করলেও নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি পানশীরের। ১৯৯০ সালের পর তালেবানরাও পারেনি এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিতে।

কিন্তু বর্তমানে তালেবানরা সেখানকার নেতা আহমেদ মাসুদের বাহিনীকে পরাজিত করে পানশির উপত্যকা দখলের দাবি করছে।

কিন্তু কে এই আহমেদ মাসুদ? তালেবানরা পুরো দেশ দখল করে নিলেও যার চ্যালেঞ্জে এ অঞ্চলর নিয়ন্ত্রণ নিতে হিমশিম খাচ্ছে?

আহমেদ মাসুদ পানশির সেনাবাহিনী, ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা এনআরএফ -এর প্রধান। আফগানিস্তানে বিখ্যাত তিনটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম তাজিক-এর নেতা। তিনি আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ১৯৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আহমেদ শাহ মাসুদ। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত সোভিয়েত যোদ্ধা। পরবর্তী তালেবানবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের দলনেতা। তার উপাধি লায়ন অব পানশির বা পানশিরের সিংহ।

আহমেদ মাসুদের প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে বাবার সাথে অসাধারণ সাদৃশ্য। কিন্তু পার্থক্য হলো- তার বাবার ছিল অনেক যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা। কিন্তু মাসুদের তালেবানদের ছাড়া অন্য কোনো যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নেই।

তার বয়স যখন ১২ বছর, তখনই তার বাবাকে আলকায়দা হত্যা করে। সেই দিনটি ছিল নাইন ইলেভেনে টুইন টাওয়ারে হামলার মাত্র ২ দিন আগে।

বাবার মৃত্যুর পরে তিনি ইরানে চলে যান। সেখান থেকে লেখাপড়া শেষ করে ইংল্যান্ডে যান। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডে তিনি রয়েল মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নেন। পাশাপাশি তিনি বিশ্ব রাজনীতিতে লন্ডন সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন। এরপর দেশে এসে এনআরএফ নামে একটি শক্তিশালী বাহিনী তৈরি করেন।

পানশিরে মাসুদ বাহিনীর পতন যেভাবে

তালেবান সমগ্র আফগানিস্তানের দখল নিলেও পানশির প্রদেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন আহমদ মাসুদ বাহিনী। তার সঙ্গে ছিলেন আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ ও সাবেক প্রতিরক্ষমন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান।

 

পানশিরে আহমদ মাসুদের বিদ্রোহ ঘোষণার পর অঞ্চলটির ভাগ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিভিন্ন সমীকরণ কষা হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবান সহজে পাঞ্জশির দখল করতে পারবে না।

কিন্তু রোববার রাতে পানশিরের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। সোমবার সকালে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ পানশির বিজয়ের ঘোষণা দেন। প্রদেশটি দখলের পর তালেবান যোদ্ধারা গভর্নর ভবনের সামনে ছবিও তোলেন।

পানশির দখলের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেন মাসুদ বাহিনী আরও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারল না এবং কোন কৌশল প্রয়োগ করে তালেবান পানশির দখল করেছে।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, তালেবান পানশিরের টেলিফোন লাইন এবং ইন্টারনেট কেটে দেয়।  এ কারণে বিদ্রোহী যোদ্ধারা যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেনি। একটি ফ্রন্ট থেকে আরেকটি ফ্রন্টের যোদ্ধারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন, তারা কোনো তথ্য পাচ্ছিলেন না।

পানশিরে তালেবানের হাতে বিদ্রোহী বাহিনীর মুখপাত্র ও  আহমদ মাসুদের বন্ধু ফাহিম দাস্তি নিহত হলেও আহমদ মাসুদ এখন কোথায় আছেন এবং কী অবস্থায় আছেন সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তালেবান পানশির বিজয় ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক অডিও বার্তায় আহমদ মাসুদ তার বাহিনীর লোকদের যুদ্ধ চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন।

মাসুদ অভিযোগ করেন, তালেবান বিদেশি শক্তির সহায়তায় পানশির দখল করেছে। বিদেশি শক্তি বলতে তিনি পাকিস্তানকে বুঝিয়েছেন।

১৯ মিনিটের ওই অডিও বার্তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা করে আহমেদ মাসুদ বলেন, তালেবানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বৈধতা দিচ্ছে। এ কারণে তালেবানের সামরিক ও রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবান পূর্বের তুলনায় এবার অনেক শক্তিশালী। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা উঠেপড়ে লেগেছে। এছাড়া তালেবানের দখলে ব্যাপক পরিমাণে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র রয়েছে। এসব কারণে পানশির দখল তাদের জন্য খুব বেশি কঠিন ছিল না।