আফগানিস্তানের নতুন সরকার : কারা কোন দায়িত্বে?

182
লেবান মুখপাত্র বলেছেন, নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে থাকবেন মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ
লেবান মুখপাত্র বলেছেন, নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে থাকবেন মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ

এতদিন বিশ্ব মিডিয়াজুড়ে আফগানিস্তানের পরবর্তী সরকার প্রধান হিসেবে মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের নাম ওঠে আসছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাবুলে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে পরবর্তী তালেবান সরকারের নেতৃত্ব দেবেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ।

প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহম্মদ হাসান আখুন্দ তালেবানের সিদ্ধান্ত নির্ধারণকারী বিভাগ ‘রেবারি শুরা’র প্রধান। তিনি গতবার তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বর্তমানে জাতিসংঘের কালো তালিকাভুক্ত। জাতিসংঘের জঙ্গি তালিকায় তার নাম রয়েছে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের।

আর নতুন সরকারের উপপ্রধান হিসেবে স্থান পেয়েছেন তালেবানের আলোচিত নেতা আব্দুল গনি বারাদার

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তালেবানের প্রধান জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।

জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আমরা জানি আমাদের দেশের মানুষ নতুন সরকারের অপেক্ষায় রয়েছে।

কে কোন মন্ত্রণালয় পেলেন

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, সর্বমোট ১৯ জন মন্ত্রী, তিন জন পরিচালক, ৭জন ডেপুটি মন্ত্রী, এবং একজন সেনাপ্রধান ঘোষণা করা হয়।

নতুন সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি।

তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুবকে দেওয়া হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তার ডেপুটি হিসেবে থাকবেন মোল্লা আবদুল সালাম হানাফি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন আমির খান মুত্তাকি। উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন আবাস স্টানিকজাই।

দোহা নিউজের খবরে বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রী শায়েখ আল্লাহ মুনির, গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আবদুল হক ওয়াতেক, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মোহাম্মদ ইদ্রিস। সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ফাসিহ আল দীন।

মাথার মূল্য ছিল ৫০ লাখ ডলার, তিনিই এখন আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে সিরাজুদ্দিন হাক্কানীর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড ছিলেন।

মাথার মূল্য ছিল ৫০ লাখ ডলার, তিনিই এখন আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মাথার মূল্য ছিল ৫০ লাখ ডলার, তিনিই এখন আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আফগানিস্তানে নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানীর মাথার মূল্য ৫০ লাখ ডলার আছে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের ওয়েবসাইটে। হাক্কানী নেটওয়ার্ককে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সংগঠনটির বর্তমান প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানীর নাম এফবিআইর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় মঙ্গলবারও দেখা গেছে।

তাতে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে কাবুলে হোটেলে বোমা হামলা চালিয়ে ছয়জন আমেরিকানকে হত্যার অভিযোগে তাকে খোঁজা হচ্ছে।

একই বছর তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগও রয়েছে সিরাজউদ্দিন হাক্কানীর বিরুদ্ধে।

হাক্কানীকে ধরিয়ে দিলে কিংবা তাকে গ্রেফতারে তথ্য দিলে ৫ মিলিয়ন ডলার (৫০ লাখ) পুরস্কার মিলবে বলে এফবিআইর ওয়েবসাইটে ঘোষণা দেওয়া আছে।

সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ের ‘মুজাহিদ’ নেতা জালালুদ্দিন হাক্কানীর ছেলে হলেন সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। তিনি এখন হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান, আবার তালেবানের উপপ্রধান।

আমেরিকা মনে করে এটি পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানের উপজাতীয়দের একটি সশস্ত্র সংগঠন। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র হাক্কানী নেটওয়ার্ককে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। হাক্কানী নেটওয়ার্ক তালেবানসহযোগী সংগঠন।

মোল্লা ওমরের ছেলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী

তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব। ইয়াকুব এতদিন এই বাহিনীর সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।  তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব।

সোভিয়েত সৈন্যদের আফগানিস্তান ত্যাগের পর আফগানিস্তানে গোত্রে গোত্রে কোন্দলের মধ্যে ১৯৯৬ সালে মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে তালেবান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে।

এক চোখ নষ্ট থাকা মোল্লা ওমর পরে আল কায়দার শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনেন।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী আক্রমণ শুরু করে আফগানিস্তানে। তাতে ক্ষমতা হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ে দলটি।

এরমধ্যে শুধু আত্মঘাতী কিংবা আচমকা হামলার মাধ্যমেই তাদের অস্তিত্বের খবর পাওয়া যেত।

২০১৩ সালে মোল্লা ওমরের মৃত্যু হলেও তা দুই বছর গোপন ছিল।

 নতুন সেনাপ্রধান মৌলভী ক্বারী ফাসিউদ্দিন

আফগানিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মৌলভী ক্বারী ফাসিউদ্দিন। তিনি দেশটির আর্মি চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

পাকিস্তানের সামা টিভির অনলাইন জানায়, পানশির অভিযানের সময় মৌলভী ক্বারী ফাসিউদ্দিনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে তালেবান তা প্রত্যাখ্যান করে তার নতুন ভিডিও প্রকাশ করে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে তালেবানের সামরিক কমিশনের ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার নেতৃত্বে পানশির ছাড়াও তালেবান বিভিন্ন অভিযানে সাফল্য পেয়েছে।

দিল্লি-ভিত্তিক একটি থিংক ট্যাংক, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন জানায়, মৌলভী ক্বারী ফাসিহ উদ্দিন খুব দ্রুততার সঙ্গে তালেবানের শীর্ষ পর্যায়ে চলে আসেন। তিনি চীন-তাজিকিস্তান সীমান্তবর্তী বাদাকশান প্রদেশের ছায়া গভর্নর হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। পানশিরে মাসুদ বাহিনীকে পরাস্ত করতে ক্বারী ফাসিহউদ্দিন বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। তার পুরস্কার স্বরূপ তাকে তালেবানের নতুন সরকারে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মতে, তালেবানকে দ্রুত ক্ষমতায় আনতে যে ২২জন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের গবেষণায় এসেছে তার মধ্যে ক্বারী ফাসিহ উদ্দিনও অন্যতম।

সামা টিভির খবরে বলা হয়, এই মুহূর্তে ক্বারী ফাসিহ উদ্দিনকে তালেবানের বিশেষ ‘ক্যারিশমেটিক নেতা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, পানশির জয় করে তিনি বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে ওই পদ পেয়েছেন।