শেষ পর্যন্ত ভারতের কাছে নতি স্বীকার করলো আইসিসি!

19

শেষ পর্যন্ত ভারতের কাছে নতি স্বীকার করতেই হলো আইসিসিকে। সিডনির উইকেট নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। উইকেটে ঘাস থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক, দ্বন্দ্ব এবং অবশেষে ভারতের শক্তির কাছেই হারতে হলো আইসিসিকে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর হঠাৎ করেই অসি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক বলে বসলেন, ‘সিডনিতে আমাদের বোলাররা বাউন্সার পাবে আশা করি।’

ম্যাক্সওয়েল আর জস হ্যাজলউড বলেছিলেন, ‘হোম অ্যাডভান্টেজ হিসেবে সিডনিতে আমরা উইকেটে ঘাস আশা করতেই পারি।’ এই তিন অসি ক্রিকেটারের মন্তব্যের পর হঠাৎই করেই পরিবেশ গরম করে তোলে ভারতীয় মিডিয়া। যে আইসিসিকে পকেটে পুরে তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে লজ্জাজনক ম্যাচ জিতেছিল, সেই আসিসিকে প্রভাবিত করেই সিডনির উইকেট পরিবর্তণের যে দাবি অসিরা করছিল, তা থমকে দেয়।

হোম অ্যাডভান্টেজ সব দেশই পেয়ে থাকে। ২০১১ বিশ্বকাপে হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগিয়েই বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিল ভারত। হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগিয়েই নিউজিল্যান্ড প্রথমবারেরমত উঠে এসেছে ফাইনালে। অস্ট্রেলিয়া সেখানে হোম অ্যাডভান্টেজ দাবি করতেই পারে। কিন্তু ভারতীয়দের দাবি, কোনমতেই সেটা দেওয়া যাবে না অস্ট্রেলিয়াকে। আইসিসির কোন নিয়ম নেই এ ব্যাপারে। সিডনির উইকেটে যেন কোন ঘাসের চিহ্নও না থাকে। শেষ পর্যন্ত সেটাই করা হলো।

এমনিতেই সিডনির উইকেট স্পিন বান্ধব। এই উইকেট থেকে পেসাররা কোন সুবিধা পাবে না। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য যেন এই উইকেট আশীর্বাদ। এছাড়া ভারতীয় স্পিনার অশ্বিন এবং জাদেজার জন্য একেবারে পারফেক্ট উইকেট। বিশেষ করে, এই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলংকা ম্যাচে ইমরান তাহির আর জেপি ডুমিনির স্পিণ ঘুর্ণি সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এ কারণেই ভারতীয়রা যে কোন মূল্যে চাইছে- সিডনির উইকেট যাতে কোন পরিবর্তণ করা না হয়।

ভারতীয়দের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত সিডনির পিচ কিউরেটর টম পার্কারকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে আইসিসি। এই ভদ্রলোক, প্রায় ২০ বছর ধরে সিডনির উইকেট প্রস্তুত করে আসছিলেন। আবার তাকে কেউ নৈতিকভাবে পরস্তাও করতে পারে না। তিনি যে অস্ট্রেলিয়ার কথা শুনবেন সে সম্ভাবনাও নেই। এমনকি আইসিসির কথাও শোনার সম্ভাবনা কম। তবুও সেমিফাইনালের আগে সরানো হলো টম পার্কারকে।

পরিবর্তিত হিসেবে উইকেট প্রস্তুত করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইসিসির পিচ কমিটির প্রধান অ্যান্ডি অ্যাটকিনসনকে। তিনিই তৈরী করবেন ভারতের মনমতো উইকেট। ইতিমধ্যে সেটা যে সত্যি তার প্রমান পাওয়া গেলো কলকাতার মিডিয়াগুলোর রিপোর্টে। কলকাতার আজকাল পত্রিকার রিপোর্টার দেবাশিস দত্ত সিডনি থেকে লিখেছেন, ‘মঙ্গলবার সকালেও উইকেট তৈরির কাজ চলেছে।‌ হ্যাঁ, দূর থেকে ফ্যাটফ্যাটে সাদা বা ঘিয়ে রঙের উইকেটই মনে হল। ঘাসের ‘ঘা’ নেই উইকেটে।‌ যা ভারতকে খানিকটা হলেও পরোক্ষে সুবিধা দেবে।’
স্বাগতিক হয়েও সুবিধা নিতে পারলো না অস্ট্রেলিয়া। উপরন্তু সবচেয়ে বড় মোড়ল ভারতের পকেটে ঢুকে আইসিসি তাদের কথামতোই উইকেট তৈরী করে দিচ্ছে সিডনিতে। যাতে সহজেই স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে তারা উঠে যেতে পারে ফাইনালে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তো এমনিতেই আইসিসি ভারতের পকেটস্থ হয়ে কাজ করেছে- সেটা স্পষ্ট। ভারতের উপযোগি উইকেট বানিয়েছে মেলবোর্নে, আম্পায়ারকে দিয়ে ম্যাচ হারিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, মাঠের পরিবেশও তারা এমনভাবে দখল করেছে যাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মানসিকভাবেই হার মানতে বাধ্য হয়। মেলবোর্নের জায়ান্ট স্ক্রিনে ম্যাচের শুরু থেকেই কিছুক্ষণ পর পর একটি বিজ্ঞাপনের আড়ালে প্রচার করা হচ্ছিল, ‘জিতেগা ভাই জিতেগা।’ সুতরাং, আইসিসি মানে যে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’- সেটা এবার অস্ট্রেলিয়াও টের পেতে শুরু করেছে।