মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ : বাংলাদেশের ম্যান অব দ্য ক্রাইসিস

179

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক ভরসার নাম। অভিষেক হয়েছে ২০০৭ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচেই ৩৬ রান করেন ও ২টি উইকেট নেন।

পরিচিত মুখ সনাথ জয়সুরিয়া, কেভিন পিটারসেন, স্টিভ স্মিথ, শোয়েব মালিকদের মতো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে পরিচিত করেছে জাত ব্যাটসম্যান রূপে। জয়সুরিয়া বা স্মিথদের মতো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সুযোগ পাননি বাংলাদেশ দলে নিজের পছন্দের জায়গায় ব্যাটিং করার। সবসময় দলের প্রয়োজনে তার ব্যাটিং পজিশন পরিবর্তন করতে হয়েছে।

অভিষেকের পরে অনেকদিন ব্যাটিং করতে হয়েছে ৮ নম্বরে। এরপর ব্যাটিং ধারাবাহিকতায় পজিশন পরিবর্তন হয়ে আসে ৬ নম্বরে। এরপর শুরু হয় পজিশন পরিবর্তন। যে পজিশনে দল নড়বড়ে হয়েছে, সেই পজিশনেই খেলতে হয়েছে তাকে। তারপরেও নির্বাচকদের চোখে পছন্দের হয়ে উঠতে পারেননি।

হয়তো টপ অর্ডারে নিয়মিত হতে পরলে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখা যেত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। তারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। টপ অর্ডারদের ব্যর্থতায় সুযোগ পান ৪ নম্বরে ব্যাট করার।

সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চিনিয়ে ছিলেন বিশ্বমঞ্চে। মাত্র ৬ ম্যাচে ৩৬৫ রান করেন। যা গড়ে ৭৩। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। করেন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি। কিন্তু বিশ্বকাপের পরেই আবার সেই দলের ফিনিশারদের দুর্বলতা। ফিরে যেতে হয় ৬ নম্বর ব্যাটিং পজিশনে।

বাংলাদেশ দলের নড়বড়ে অবস্থা হওয়ায় নিয়মিত ৬ নম্বরে চাপেই খেলতে হয় তাকে। এ পজিশনে ব্যাটিং করে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ খুবই কম থাকে। হয়তো যোগ্য সঙ্গীর অভাব, অনেক সময় রানের তাড়া, আবার কখনও ফিনিশিং মারমুখী ব্যাটিং করতে হয় তাকে। সবকিছু মেনে নিয়েই নিরবে দলের জন্য ব্যাট হাতে ভরসার নাম হয়ে দাঁড়ান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

বড় ইনিংস খেলার সুযোগ না থাকলেও নিজের ধারাবাহিতা দিয়ে দলের অন্য তিন সেরা টপওর্ডার তামিম, সাকিব, মুশফিকের সাথে পাল্লা দিয়ে অ্যাভারেজ ধরে রেখেছন। লো-অর্ডারে ব্যাটিং করে মাহমুদুল্লাহ রিয়েদের গড় ৩৫। সেখানে ওপেনার তামিমের ব্যাটিং গড় ৩৬। টপ অর্ডারে ব্যাটিং করা মুশফিকের ৩৭ ছুই ছুই। আরেক টপ অর্ডার সাকিবেরও ৩৭।


কিংবদন্তি ক্রিকেটার : ওয়ান ডে-তে সেঞ্চুরি নেই একটিও


মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বড় ইনিংস খেলার সুযোগ না পেলেও ধারাবাহিকতাই তার মূল শক্তি। টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার সুযোগ পেলে হয়তো স্মিথ, পিটারসেনদের মতো স্মরণকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখা যেত বাংলাদেশের এ ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে।

সুযোগের জন্য নায়ক হয়ে ওঠা হয়নি এ সাইলেন্ট কিলারের। কিন্তু পার্শ্বনায়ক হিসেবে নিয়মিত থাকলেও ২/৪ ম্যাচে অফ ফর্মে থাকলেই বাংলাদেশের নির্বাচকদের চোখের কাঁটা হয়ে উঠেন।

২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দলে জায়গা হচ্ছিল না। অধিনায়ক মাশরফি বিন মর্তুজার কল্যাণে অন্তর্ভুক্ত হন দলে। বড় মঞ্চের নায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জ্বলে ওঠেন বাঁচা-মরার লাড়াইয়ে। শেষ চার নিশ্চিত করতে নিউজিল্যান্ডকে হারাতেই হতো বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩৩ রানে চার উইকেটে দল যখন খাদের কিনারায়; তখন পঞ্চম উইকেটে সাকিবে সাথে ২২৪ রানের জুটি গড়েন। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ১০২ রানের এক অনবদ্ধ ইনিংস খেলেন।

নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে শেষ ওভারে আম্পায়ার বিতর্কের স্মৃতি ভোলার কথা নয়। ইসুরু উদানার পর পর ২টি বাউন্সে আম্পায়ার নো বল না ডাকায় অধিনায়ক সাকিব মাঠ ছেড়ে চলে আসতে বলেন। মাহমুদুল্লাহ আত্মবিশ্বাসের সাথে শেষ ৪ বলে ১৪ রানের টার্গেটে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। ১ বল হাতে রেখেই ছক্কা হাকিয়ে জয় তুলে নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

এমন অনেক স্মৃতি রয়েছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ঘিরে। ২০১১ সালে বিশ্বকাপে ইংলান্ডের বিপক্ষে নিশ্চিত পরাজয়ের ম্যাচে নবম উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়ে শফিউল ইসলামকে নিয়ে অবিশ্বাস্য এক জয় উপহার দেন।

বড় মঞ্চে সবসময় উজ্জ্বল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর সবসময় ধারাবাহিকতা ধরে রেখেও এ সাইলেন্ট কিলার দলের নির্বাচকদের মন জয় করতে পারেননি। কোনো সিরিজ এলেই নিজের পছন্দের ব্যাটিং পজিশন তো পরের কথা, দলে জায়গা পেতেই হিমশিম খেতে হয়। মাঝেমধ্যেই ছিটকে যান দল থেকে।

সর্বশেষ ঘুরে-ফিরে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, টপ অর্ডারে সফল হওয়ার পরেও সব পজিশনেই ব্যাটিং করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু টপ অর্ডারের যখন নড়বড়ে অবস্থা, তবুও কেন মাহমুদুল্লাহ টপ অর্ডার ফিরে পেলেন না?