১০ হাজার ৫০ একর জমি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যোগ হবে

46

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ে ১০ হাজার ৫০ একর জমি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যোগ হবে। আজ সংসদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে ছিটমহল বিনিময়ে সীমান্ত চুক্তির দলিল বিনিময়ের পর এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চুক্তি অনুযায়ী, যে ছিটমহল যে দেশের অভ্যন্তরে সেই দেশ ওই ছিটমহলের মালিক হবে- একথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ ১০ হাজার ৫০ একর জমি বেশি পাবে। তিনি বলেন, ছিটমহলে বসবাসকারী জনগণ সংশ্লিষ্ট ছিটমহল যে দেশের অন্তর্ভুক্ত হবে, স্থানান্তরের মাধ্যমে তিনি সে দেশের নাগরিক হবেন। তবে ইচ্ছা করলে তাদের পূর্ববর্তী দেশের নাগরিক হওয়ারও সুযোগ থাকবে।

এস এম মোস্তফা রশিদীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা এই সমস্যা নিরসনকে আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন। ভারতের আইনসভায় সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় ৬৮ বছরের সমস্যার সমাধান হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য।

ছিটমহল বিনিময়ের ফলে ভারত যে প্রায় ১০ হাজার একর জমি বেশি হারাবে, সে জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না বলে ২০১১ সালে দুই দেশের স্বাক্ষরিত প্রটোকলে উল্লেখ রয়েছে।

প্রটোকলের আওতায় অপদখলীয় ভূমি নিয়ে বিরোধের অবসানও ঘটবে। এতে ভারত অপদখলীয় ২৭৭৭ একর জমির মালিকানা পাবে। আর ২২৬৭ একর জমির উপর বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে।

উত্তরাধিকার সূত্রে ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত নিয়ে এই সমস্যাটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবিভক্ত ভারতের অংশ থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়। এর আওতায় ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশের দিক থেকে সব প্রক্রিয়া সারা হয়েছিল, কিন্তু ভারতের প্রক্রিয়ায় আটকে ছিল চুক্তি কার্যকর।

এর মধ্যে ২০১১ সালে ভারতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল সই হয়। এরপর কংগ্রেস সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তার মধ্যেই নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি।

তবে কংগ্রেস সরকারের সেই উদ্যোগকে সফল করতে আরও সচেষ্ট ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি জানানো আঞ্চলিক দলগুলোকে মানান তিনি। এরপর গত মে মাসে ভারতের পার্লামেন্টে ছিটমহল বিনিময়ে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পাস হলে সমস্যার অবসান ঘটে।

উল্লেখ্য, স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরে সব বাধা অপসারণের পর আগামী ৩১ জুলাই থেকে ছিটমহল বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু করতে দুই দেশের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে। ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে, যার আয়তন মোট ৭ হাজার ১১০ একর; অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর।