স্পাইওয়্যার থেকে ফোন সুরক্ষিত রাখার উপায়

190
স্পাইওয়্যার থেকে ফোন সুরক্ষিত রাখার উপায়

পেগাসাস’ নামের ভয়ংকর স্পাইওয়্যার তথা নজরদারি সফটওয়্যারে আতঙ্কিত স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা। পেগাসাসের মতো এতটা শক্তিশালী না হলেও সাইবার দুনিয়ায় রয়েছে অসংখ্য স্পাইওয়্যার। এসব স্পাইওয়্যার থেকে সুরক্ষিত থাকার কৌশল জেনে নিন।

হ্যাকিং কী

হ্যাকিং এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে অবৈধভাবে জোরপূর্বক কোনো ডিভাইস বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে তথ্য-উপাত্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়। মোবাইল ফোন, ল্যান্ডফোন, গাড়ি ট্র্যাকিং, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও যন্ত্রপাতি অবৈধভাবে ব্যবহারও হ্যাকিংয়ের আওতায় পড়ে। উন্নত নিরাপত্তা বলয়ের ইন্টারনেট কানেকশন থেকে দুর্বল ইন্টারনেট কানেকশনেও হ্যাকাররা হানা দিতে সক্ষম। অ্যান্ড্রয়েড ফোন, আইফোনসহ সব ধরনের ফোনেই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারে।

হ্যাকিংয়ের শিকার স্মার্ট ফোন

প্রাত্যহিক ব্যস্ত জীবনের অন্যতম সঙ্গী স্মার্টফোন। স্মার্টফোনে যেন পুরো বিশ্বই আজ মুঠোবন্দি। কথা বলা, মেসেজিং কিংবা ছবি ও ভিডিও করা ছাড়াও ইন্টারনেট নির্ভর যাবতীয় কার্যক্রম চলছে স্মার্টফোনে। ফলে ব্যবহারকারীর দিনযাপন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে এখন স্মার্টফোন হ্যাকারদের অন্যতম টার্গেটে পরিণত হয়েছে।

হ্যাকারদের দৌরাত্ম্যে ব্যবহারকারীর অজান্তেই ফোনের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত অন্যের হাতে চলে যাচ্ছে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা যতই শক্তিশালী হচ্ছে, হ্যাকারও তত নিত্যনতুন কৌশলে অবলম্বন করে হাতিয়ে নিচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য। চোখের পলকে সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বিশ্বজুড়ে অগণিত স্মার্টফোনসহ নানা ডিভাইস ব্যবহারকারী।

তথ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে এখন স্মার্টফোন হ্যাকারদের অন্যতম টার্গেটে পরিণত হয়েছে

পেগাসাস স্পাইওয়্যার

স্মার্টফোন হ্যাকিং নতুন কোনো ঘটনা নয়, তবে সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান ‘এনএসও’র তৈরি হ্যাকিং সফটওয়্যার পেগাসাস বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক তৈরি করেছে। বিশ্বের ১৭টি গণমাধ্যমে ১৮ জুলাই একযোগে এই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ফাঁসের পর এটি সাইবার বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়ি পাতার খবর প্রথম আসে প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছে। পরে দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ওয়্যারসহ অন্য গণমাধ্যমগুলোকে জানায় তারা। ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’ নামে একটি অনুসন্ধান পরিচালনা করে ৫০টি দেশে হ্যাকিংয়ের শিকার হাজারো নম্বরের সন্ধান পায় তারা।

এতে জানা যায়, ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ পেগাসাস নামে এই ম্যালওয়্যার তৈরি করেছে, যা মোবাইল ফোনে ঢুকে ব্যবহারকারীর ছবি, মেসেজ, ই-মেইল পাচার করতে সক্ষম এবং কল রেকর্ডসহ গোপনে মাইক্রোফোন চালু রাখতে পারে। মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আইনজীবীর ফোন এই স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল।

সাইবার বিশ্বে অসংখ্য স্পাইওয়্যার রয়েছে যা পেগাসাসের মতো শক্তিশালী না হলেও আপনার জন্য মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কেননা ব্যক্তিগত ফোনে নজরদারির এই ঘটনা ছাড়াও যে কোনো সময় হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারে আপনার স্মার্টফোন।

তবে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোনের পাশাপাশি ম্যালওয়্যার প্রতিরোধী বা অ্যান্ড্রয়েড থেকে নিরাপদ বিবেচিত আইফোনের মাধ্যমে পেগাসাস ছড়িয়ে পড়ার খবর বেশ আলোড়ন তুলেছে। এখন দেখা যাচ্ছে কোনো ডিভাইসই আসলে শতভাগ নিরাপদ নয়।

তবে প্রশ্ন হলো- কীভাবে এই ম্যালওয়্যারের আক্রমণ থেকে ব্যবহারকারীরা তাদের ফোন নিরাপদ রাখবেন। পেগাসাস ম্যালওয়্যার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া না হলেও অনেক ধরনের ম্যালওয়্যার তৈরির উদ্দেশ্যই থাকে অধিকসংখ্যক স্মার্টফোনে ছড়িয়ে দেওয়া। আর সব ক্ষেত্রেই নিরাপদ থাকার প্রক্রিয়া সিংহভাগ হলো স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন।

পেগাসাস ম্যালওয়্যার
পেগাসাস ম্যালওয়্যার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া না হলেও অনেক ধরনের ম্যালওয়্যার তৈরির উদ্দেশ্যই থাকে অধিকসংখ্যক স্মার্টফোনে ছড়িয়ে দেওয়া

স্পাইওয়্যার থেকে ফোন সুরক্ষিত রাখার উপায়

হ্যাকিং থেকে নিরাপদ থাকার অন্যতম উপায় যে কোনো ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন। তাই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া হ্যাকিং থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহারে সতর্কতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। স্মার্টফোন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী, শত কাজের তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদানের মাধ্যম। তাই এই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইসটি ব্যবহারে ক্ষেত্রে সব সময় কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখুন-

  • স্মার্টফোনে যে কোনো বার্তার লিঙ্ক এলে দুটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে- প্রেরক ও ওয়েবসাইট। যিনি বার্তাটি পাঠিয়েছেন, তিনি আপনার পরিচিত কিনা বা আপনার বিশ্বাসযোগ্য কিনা এবং যে লিঙ্কটি পাঠানো হয়েছে সেটি নির্ভরযোগ্য কোনো ওয়েবসাইটের কিনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা এ মাধ্যম দুটি ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।
  • অপরিচিত ও অনুমোদিত অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল থেকে বিরত থাকুন। স্বীকৃত ও অনুমোদিত অ্যাপ ব্যবহার করুন। রিভিউ ও পর্যালোচনার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য মনে হলে নতুন অ্যাপ ইনস্টল করুন।
  • আপনার ফোনের ব্যক্তিগত এবং স্পর্শকাতর তথ্য যেন বেহাত হয়ে না যায় সে কারণে গুগল, ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সচল রাখুন। এটি দ্বিতীয় পর্যায়ের ভেরিফিকেশন মেথড। এতে হ্যাকাররা আপনার তথ্য নিতে বাধার সম্মুখীন হবে।
  • আপনার স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে সব অ্যাপ সর্বশেষ আসা সংস্করণে হালনাগাদ করে নিন। নতুন সংস্করণ এলে আপনার ডিভাইসে তা প্রদর্শিত হয়। অনেকে অবহেলায় শেষ সংস্করণ থেকে বিরত থাকেন। তবে সফটওয়্যারের সর্বশেষ হালনাগাদে নিরাপত্তার সর্বশেষ কৌশল অন্তর্ভুক্ত থাকে।
  • ম্যালওয়্যার তৈরিতে সময়, শ্রম ও অর্থের খরচ কম হয় না। এরপর সেটি ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনে ছড়িয়ে দিতে পারলে তবেই নজর রাখার সুযোগ পায় হ্যাকার। এটা তো গেল ভার্চুয়াল দিক। ‘ফিজিক্যাল’ দিকটাও মাথায় রাখুন। যে কেউ যেন আপনার ফোন ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য পিন কোড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস লকের মতো অপশন সচল রাখতে ভুলবেন না।
  • ফ্রি পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার না করাই ভালো। বিশেষ করে যখন গোপনীয় তথ্য ব্যবহার করছেন। আর ব্যবহার যদি করতেই হয়, তবে ভিপিএন একটি ভালো সমাধান হতে পারে।
  • সম্ভব হলে ফোনে থাকা সংবেদনশীল তথ্য এনক্রিপ্ট করে রাখুন। আর যেসব ক্ষেত্রে দূর থেকে তথ্য মুছে ফেলার সুবিধা রিমোট ওয়াইপ আছে, সেসব ক্ষেত্রে সেটি সচল রাখুন। এতে আপনার ফোনটি হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে অন্তত হাতে একটা অপশন থাকবে।
  • লোকেশন ও ডিভাইস ট্র্যাকিং পরিষেবা চালু রাখুন। ডিভাইস হারিয়ে গেলে লোকেশন ট্র্যাকিং করতে এবং ফোনের তথ্য-উপাত্ত মুছে ফেলতে পারবেন।
  • পাসকোড লক ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। সংখ্যা, বর্ণ ও চিহ্নের ব্যবহারে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। এই পাসওয়ার্ড একাধিক স্থানে ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • আনঅফিসিয়াল অ্যাপস্টোর থেকে অ্যাপের ব্যবহার না করা, নিয়মিত ইন্টারনেট হিস্ট্রি মুছে ফেলা, ই-মেইল ও টেক্সট পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা. ভিপিএন ব্যতীত পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার না করার মাধ্যমেও আমরা ফোন হ্যাকিং থেকে নিজেদের তথ্য-উপাত্ত সুরক্ষিত রাখতে পারি।