কিডনি ভালো আছে তো?

39

শরীরের যেকোনো অঙ্গের গোলযোগ নানা উপসর্গের মধ্য দিয়ে শরীর জানান দিতে থাকে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের বেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দীর্ঘদিন রোগীর কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। শুরুতে খাবারে অনীহা, বমি বমি ভাব, প্রস্রাবের পরিমাণে তারতম্য, ঝিমুনি, ক্লান্তি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এসব লক্ষণকে অনেকে সাধারণ ক্লান্তি বা দুর্বলতাজনিত বলে এড়িয়ে যান—চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ ধরা পড়লে জটিল বা ব্যয়বহুল চিকিৎসা এড়ানো যেতে পারে সহজেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আছিয়া খানম জানালেন, কিডনি ভালো রাখতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হঠাৎ করে চেহারা ফুলে গেলে, কিংবা প্রস্রাবের পরিমাণ খুব কমে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এ ছাড়া পরিবারে কিডনি রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে মাঝেমধ্যে কিডনি পরীক্ষা করে নিন।’ কিডনির সুস্থতায় আরও যেসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে, জেনে নিন এখনই—
* শিশুদের গলাব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদির দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। এসব রোগ থেকেও কিডনির প্রদাহ হতে পারে।
* ডায়রিয়া, বমি, রক্ত আমাশয়, পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। কারণ, এসব থেকে কিডনি বিকল হতে পারে।
* প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।
* •নিয়মিত রক্তচাপ মেপে দেখা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা।
* •কিডনি ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটি কিডনি ভালো রাখার জন্য জরুরি।
* ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
* রক্তের সুগার নিয়মিত নিয়ন্ত্রণে রাখা।
* নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক প্রভৃতি ওষুধ খাওয়া যাবে না

আর কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত মাছ-মাংস-ডিম বা হাই-প্রোটিন কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কিডনি রোগীদের জন্য যেসব খাদ্য তৈরি হবে তাতে—
* কম পরিমাণের লবণ
* কম পরিমাণে ফসফরাস
* কম ক্যালরিযুক্ত খাবার
* কম পরিমাণের প্রোটিন থাকতে হবে।
আর যেসব খাদ্যে কিডনি রোগীর বিধিনিষেধ আছে, তার একটা ছোট তালিকাও দিলেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ। তিনি জানালেন, ‘লবণ, লবণযুক্ত খাবার, চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, নানরুটি, তন্দুর রুটি, কিমা, নোনা ইলিশ, টেস্টিং সল্ট, তামাক, জর্দা, আচার, কাঁচা সবজি, ডাল ও ডালজাতীয় খাবার, কোমল পানীয়, কফি, কেক, প্যাস্ট্রি, বাদাম, কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।’ যেকোনো অসুস্থতায়, কিংবা প্রচণ্ড গরমে ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেকে, কতটা যুক্তিসংগত জানতে চাইলে, তিনি আরও বলেন, ডাবের পানিতে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, সোডিয়াম থাকায় কিডনি রোগীদের বেলায় এই পানি খাওয়ায় খানিকটা বিধিনিষেধ আছে। এ ছাড়া যাঁরা কিডনি রোগের সঙ্গে অতি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁদের জন্য ডাবের পানিতে তৃষ্ণা মেটানো নয়।