আত্মবিশ্বাসী শিশুরা ১. কম উদ্বিগ্নতায় ভোগে, ২. স্কুলে ভালো ফলাফল করে এবং ৩. পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালো হয়। এর ফলে, অনেক বাবা-মা সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক বাবা-মা ৭ টি বড় রকমের ভুল করে বসেন।

১. ছোট ছোট কাজ থেকে বিরত রাখা
অনেক বাবা-মা মনে করেন, বাড়ির ছোট ছোট কাজ করতে দিলে সন্তান ক্লান্ত হয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে, আসলে ব্যাপারটা এর উল্টো! কোনো নির্দিষ্ট কাজ শেষ করতে পারলে শিশুদের মধ্যে দক্ষতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। এর মাধ্যমে, শিশুর মধ্যে ‘আমিও পারি’ ধারণা জাগ্রত হয়। ফলে, যখনই আপনি বাড়ির কোনো কাপড় লন্ড্রির কাজ কিংবা ছোট্ট একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দিবেন, এর মাধ্যমে, সন্তানের মধ্যে সক্ষমতা এবং দক্ষতার অনুভূতি জাগ্রত হবে।

২. সন্তানকে ভুল করতে না দেওয়া
সন্তান ব্যর্থ হচ্ছে, কোথাও প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে কিংবা কোনো সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছে, বাবা মায়ের চোখে এই দৃশ্য বড় কষ্টের। এরকম ক্ষেত্রে অনেক বাবা-মাকে দেখা যায় ব্যর্থ হবার আগেই সন্তানকে নিবৃত করা। কিন্তু সন্তানের ব্যর্থতা ঠেকানো মানে সন্তানকে শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা। সন্তানের ব্যর্থতা ঠেকানো মানে, ব্যর্থতা থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, সেই শিক্ষা থেকে সন্তানকে বঞ্চিত করা। অনেক বাবা-মাই ভুলে যান, প্রতিটি ভুলই জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। প্রতিটি ব্যর্থতাই পরের ধাপে ভালো করার এক সুবর্ণ সুযোগ।

৩. আবেগ প্রকাশে বাধা দেওয়া
আপনি ভাবছেন, যখন আপনার সন্তানের মন খারাপ তখন তাকে একটু হাসাতে পারাই বুঝি আসল কাজ! কিংবা যখন আপনার সন্তান রাগান্বিত হয় তখন তাকে শান্ত করাও হয়তো বেশ লোভনীয়। কিন্তু সন্তানের কোনো আবেগে আমরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া করি তা সন্তানের আবেগিক বুদ্ধিমত্তা এবং আত্মমর্যাদা গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো বিষয়ে দ্রুত ফল লাভের জন্য অস্থিরতার চেয়ে কেনো আমাদের মন খারাপ হয় কিংবা কেনো আমাদের মনে কোনো নির্দিষ্ট আবেগের সঞ্চার হয় এ বিষয়ে সন্তানকে শিক্ষা দেওয়াই ভালো। ফলে, সন্তান ভবিষ্যতে নিজের মতো করে নিজেকে সামলে নিতে শিখে।

৪. নিজেকে গরীব হিসেবে উপস্থাপন
‘অমুকের ছেলে বড় লোকের ছেলে, আমরা অত বড় লোক না বাবা, অমুকের ছেলে যে জুতা কিনেছে আমাদের সে জুতা কেনার সামর্থ নেই’, এমন ধারণা, সন্তানের মধ্যে সারাজীবনের জন্য যে ধারণা গেঁথে দেয় তা হলো, কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এধরণের কথার বিপরীতে বরং সন্তানকে মাটির ব্যাংকে টাকা জমাতে শেখান, যেন সে সেই টাকা দিয়ে তার কোনো দরকারী জিনিষ কিনতে পারে। সন্তানের নিজস্ব পছন্দের স্বীকৃতি পেলে সন্তান নিজের একটা সুন্দর ভবিষ্যত রচনা করতে পারে।

৫. নিরাপত্তার নামে সন্তানকে বুকে আগলে রাখা
এটা সত্য, সন্তান নিরাপদে থাকলে আপনি অনেক উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্ত থাকেন, তাই বলে নিরাপত্তার নামে সন্তানকে ঘরবন্দী করে রাখলে সন্তানের বিকাশ ব্যাহত হয়। আপনি হবেন সন্তানের পথ প্রদর্শক, রক্ষক নয়। সন্তানকে জীবনের অভিজ্ঞতা নিতে দিন, এমনকি মাঝে মাঝে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মাধ্যমে হলেও। এর ফলে প্রকৃতপক্ষে সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

৬. সন্তানের উপর নিজের স্বপ্ন চাপিয়ে দেয়া
উচ্চাকাঙ্খা ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত আকাঙ্খার জন্য অনেক মূল্যও কিন্তু গুণতে হয়। সন্তানের জন্য লং টার্ম লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছাড়ুন। ‘তোমাকে ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে,’ এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়াকে লং টার্ম লক্ষ্য বলে। এমনটি না করে, শর্ট টার্ম লক্ষ্যের দিকে সুকৌশলে জোড় দেওয়া ভালো। যেমন, এসএসসি, কিংবা এইচএসসিতে কীভাবে ভালো করতে পারে এ বিষয়ে সন্তানকে সহযোগিতা করুন। প্রতিদিনের বাড়ির কাজ প্রতিদিন সম্পন্ন করতে শেখান! ভবিষ্যতে সে ডাক্তার হবে না ইঞ্জিনিয়ার হবে সে লক্ষ্য নির্ধারণের বিষয়টি সন্তানের হাতেই ছেড়ে দিন।

৭. শৃঙ্খলা না শিখিয়ে শাস্তি দেওয়া
সন্তানের ভালো চাইলে আপনি বরং সন্তানকে জীবনের শৃঙ্খলা শেখাতে পারেন, সন্তানকে শাস্তি দিতে পারেন না। যে সকল শিশুকে শৃঙ্খলা শেখানো হয়, তারা কোনো ভুল করলে ভাবে, ‘ওহ, আমার পছন্দটা সঠিক ছিল না, অথবা আমার কাজের উপায়টি সঠিক ছিল না’, অন্যদিকে যে সকল শিশুকে শাস্তি দেওয়া হয়, তারা কোনো ভুল করলে ভাবে, ‘ওহ, আমি একজন নিকৃষ্ট মানুষ, আমি একজন ব্যর্থ মানুষ’।

শৃঙ্খলা সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে, ভবিষ্যতে সুন্দর পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে, অন্যদিকে শাস্তি কিংবা তিরস্কার আপনার সন্তানের ভবিষ্যত সম্ভাবনা এবং সক্ষমতা নষ্ট করে।

এই লেখাটি যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত নিউজ মিডিয়া সিএনবিসি ডট কমের ‘মেইক ইট’ সেকশনে প্রকাশিত সাইকোথেরাপিস্ট আ্যামি মরিনের লেখা ‘A psychotherapist shares the 7 biggest parenting mistakes that destroy kids’ confidence and self-esteem’ এর অনুবাদ। আ্যামি মরিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক এবং বহুল বিক্রিত দুটি বই ’13 Things Mentally Strong People Don’t Do’ এবং ’13 Things Mentally Strong Women Don’t Do’ এর লেখক।

ভাষান্তর : মিজান রহমান