দিলীপ কুমার : ইউসুফ খান যেভাবে হলেন কিংবদন্তী বলিউড অভিনেতা

96
দিলীপ কুমার

বর্ষীয়ান অভিনেতা দিলীপ কুমার ভারতের মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।

মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালের পালমোনোলোজিস্ট ডা. জলিল পার্কার দিলীপ কুমারের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করছিলেন। তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে কুমারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

দিলিপ কুমারের ভেরিফায়েড টুইটার পেইজ থেকে ৭ জুলাই বুধবার সকাল ৮টার কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়।

ছয় দশকের ক্য্যারিয়ারে তিনি ৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর স্ত্রী মুম্বাই চলচ্চিত্রের আরেক অভিনেত্রী সায়রা বানু।

ইউসুফ খান থেকে দিলীপ কুমার

দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান। তার বাবার নাম ছিল মোহাম্মদ সারোয়ার খান, যিনি ছিলেন একজন ফল ব্যবসায়ী ।

কৈশোরে মুম্বাই থেকে পুনে গিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন ইউসুফ খান।

এর কিছুদিন পর আবারো মুম্বাইয়ে (তৎকালীন বোম্বে) ফিরে বাবার সাথে ব্যবসায় যোগ দেন তিনি।

ব্যবসায়ের কাজেই একসময় ইউসুফ খানের পরিচয় হয় সেসময়কার প্রখ্যাত সাইকোলজিস্ট ডা. মাসানির সাথে, যিনি তাকে পরিচয় করিয়ে দেন ‘বোম্বে টকিজ’ -এর মালিকের সাথে।

১৯৪৩ সালে ‘বোম্বে টকিজে’ ইউসুফ খান যান চাকরি খুঁজতে, কিন্তু সেখানকার স্বত্বাধিকারী দেবিকা রানী তাকে অভিনেতার হওয়ার প্রস্তাব দেন। তার সিনেমার নাম বদলে দিলীপ কুমার রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

১৯৪৪ সালে মুক্তি পায় দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি ‘জোয়ার ভাটা।’ প্রথম দিকে দিলীপ কুমারের কয়েকটি ছবি ব্যবসায়-সফল ছিল না।

১৯৬০ সালে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসায়-সফল সিনেমা ‘মুঘল এ আজম’ দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

 সিনেমায় এনেছিলেন দেবিকা রাণী

গঙ্গা যমুনায় অশিক্ষিত এক গ্রামীণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমার এবং সেখানেও তিনি এত সাবলীল ছিলেন যেমনটি তিনি ছিলেন মুঘল ই আযমে প্রিন্স সালিমের চরিত্রে।

দেবিকা রাণীর সাথে এক সাক্ষাৎ পরিবর্তন এনে দেয় দিলীপ কুমারের জীবন।

যদিও চল্লিশের দশকে দেবিকা রাণী নিজেই ছিলেন ভারতীয় সিনেমার বিশাল তারকা। কিন্তু তারপরেও সম্ভবত হিন্দি সিনেমায় তার বড় অবদান হলো পেশওয়ারের ফল বিক্রেতার পুত্র ইউসুফ খানকে দিলীপ কুমারে পরিণত করা।

সুদর্শন ইউসুফ খান প্রায়ই বোম্বে যেতেন সিনেমার শুটিং দেখতে এবং সেখানে দেবিকা রাণীর চোখে পড়েন।

একদিন দিলীপ কুমার তার কাছে গেলে তিনি জানতে চান যে, দিলীপ উর্দু পারেন কি-না। যখনি বললেন যে হ্যাঁ পারেন তারপরের প্রশ্নই ছিল তুমি অভিনেতা হতে চাও কি-না।

আর এর পরেরটুকু হলো ইতিহাস।

মুম্বাইতে দিলীপ কুমারের আত্মজীবনী প্রকাশের অনুষ্ঠানে তিন জনপ্রিয় তারকা ধর্মেন্দ্র, আমির খান ও অমিতাভ বচ্চন
মুম্বাইতে দিলীপ কুমারের আত্মজীবনী প্রকাশের অনুষ্ঠানে তিন জনপ্রিয় তারকা ধর্মেন্দ্র, আমির খান ও অমিতাভ বচ্চন

দিলীপ কুমার হয়ে ওঠার গল্প

দেবিকা রাণী মনে করলেন যে, ইউসুফ খান নামটি একজন রোমান্টিক হিরোর জন্য মানানসই হবে না। সুপরিচিত হিন্দি কবি নরেন্দ্র শর্মা ওই সময় বোম্বে টকিজের জন্য তখন কাজ করতেন। তিনি তিনটি নাম প্রস্তাব করেন- জাহাঙ্গীর, ভাসুদেব ও দিলীপ কুমার।

ইউসুফ খান এর মধ্যে দিলীপ কুমার নামটিই পছন্দ করেন নিজের জন্য।

আর তার নাম পরিবর্তনের আরেকটি বড় কারণ ছিল। সেটি হলো যাতে করে তার রক্ষণশীল বাবা তার এই নতুন পেশার কথা শুরুতেই না জানতে পারেন।

তার বাবা ফিল্ম পেশাজীবীদের নিয়ে খুব একটা চিন্তা করেননি। বরং তিনি তাদের নিয়ে তামাশা করতেন।

মজার বিষয় হলো পুরো ক্যারিয়ারে দিলীপ কুমার মাত্র একবার মুসলিম চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং সেটি হলো মুঘল ই আযম।

সেতার শেখার প্রশিক্ষণ

ছয় দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৬৩টি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন কিন্তু প্রতিটিতে তিনি নিজেকে পুরোপুরি চরিত্রের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন।

উস্তাদ আব্দুল হালিম জাফর খানের কাছ থেকে কয়েক বছর সেতার শিখেছেন আর এটা করেছেন তিনি কোহিনূর সিনেমার একটি চরিত্রের জন্য যেখানে একটি গানের সাথে তাকে সেতার বাজাতে হতো।

বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “শুধু কিভাবে সেতার ধরতে হয় তা জানতে আমি কয়েক বছর ধরে সেতার বাজানো শিখেছি। এমনকি সেতারের তারে আমার আঙ্গুল আঘাত পেয়েছিল”।

দিলীপ কুমার লতা মুঙ্গেশকরের সাথে দ্বৈত সঙ্গীত গেয়েছেন যা সলিল চৌধুরী লিখেছিলেন হৃষিকেষ মুখার্জির মুসাফির ছবির জন্য।

একই সাথে দিলীপ কুমার টোঙ্গা (ঘোড়ার গাড়ি) চালনা শিখেছিলেন টোঙ্গা চালকদের কাছ থেকে। আর এটি তিনি করেছিলেন নয়াদৌড় সিনেমার একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য।

আর এসব কারণেই বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় দিলীপ কুমারকে বলেছিলেন ‘মেথড অ্যাক্টর’ অর্থাৎ যিনি চরিত্রের সাথে মিশে যান।

দিলীপ কুমারের নীরবতার ভাষা

দিলীপ কুমার তাঁর ছয় দশকের ক্যারিয়ারে মাত্র ৬৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু তিনি হিন্দি সিনেমায় অভিনয় শিল্পকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন।

খালসা কলেজে পড়ার সময় দিলীপ কুমারের সহপাঠী ছিলো রাজ কাপুর। তাঁরা ঘোড়ার গাড়িতে করে প্রায় ঘুরে বেড়াতেন।

এসময় রাজ কাপুর পার্সি মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতেন তখন দিলীপ কুমার এক কোনায় গিয়ে চুপ করে বসে থাকতেন এবং তাদের দিকে কমই তাকাতেন।

কেউ জানতো না যে, এই ব্যক্তিই একদিন ভারতীয় সিনেমাকে নীরবতার ভাষা সম্পর্কে শেখাবেন যা অনেক লম্বা সংলাপের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে।

বিরতি দেয়ার গুরুত্ব জানতেন দিলীপ কুমার

১৯৪৪ সালে দিলীপ কুমার যখন ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন তখনকার বেশিরভাগ অভিনেতা একটি স্টাইলে পারফর্ম করতেন যাকে বলা হতো ‘লাউড অ্যাক্টিং’ এবং এটি এসেছিলো মূলত পার্সি থিয়েটারের প্রভাবে।

বিখ্যাত গল্প লেখক সালিম বলছেন, “দিলীপ কুমার যেসব চরিত্রে অভিনয় করতেন তার সূক্ষ্ম বিষয়গুলো পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব হয়ে যেতেন কিন্তু সেটাও দর্শকের ওপর গভীর ছাপ রেখে যেতো”।

মুঘল-ই-আযম মুভিতে প্রখ্যাত অভিনেতা পৃথ্বীরাজ কাপুরের চরিত্র ছিল খুবই প্রভাবশালী ও বলিষ্ঠ। তার মতো করে আর কেউই চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পারতেন না।

কিন্তু দিলীপ কুমার তাঁর কণ্ঠকে নিচু স্বরে এমন অভিজাতভাবে ও দৃঢ়তার সাথে সংলাপ ছুড়ে দিতেন যা দর্শকের ভক্তি কুড়িয়েছে।

দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর ও দেব আনন্দকে বল হতো ‘ত্রিমূর্তি’ বা চলচ্চিত্রের তিন বিখ্যাত আইকন।

কিন্তু দিলীপ কুমারের মতো বহুমাত্রিক অভিনয় দক্ষতা রাজ কাপুর ও দেব আনন্দের ছিল না।

রাজ কাপুরের রোল মডেল ছিল চার্লি চ্যাপলিন আর দেব আনন্দ কখনো গ্রেগরি পেকের প্রভাব থেকে বেরুতে পারেননি।

দিলীপ কুমার দি ট্রাজেডি কিং

অনেক সিনেমায় রোমান্টিক চরিত্রে বহু অভিনেত্রীর সাথেই অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার। অনেকের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কিন্তু সেটি বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। সম্ভবত নিজের জীবনের হৃদয় ভাঙ্গার অভিজ্ঞতাই তাতে অনেক চরিত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে যা তাকে ট্রাজেডি কিং হিসেবে পরিচিত করিয়েছে।

অনেক ছবিতে তিনি মারা গেছেন এমন চরিত্রে অভিনয় করেছে। এমন সময় ছিল- যখন প্রতি দুটি ছবির একটিতে তিনি এমন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এসব ছবিতে তিনি তার মৃত্যুকে বাস্তবিক ও গ্রহণযোগ্য করে ফুটিয়ে তুলতে অনবদ্য অভিনয় করেছেন।

দিলীপ কুমার বিবিসিকে বলেছেন, “একটা সময় ছিল যখন মৃত্যুর দৃশ্য করতে গিয়ে আমি ডিপ্রেসড হয়ে যেতাম। বিষণ্ণতা কমাতে আমাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। চিকিৎসক আমাকে ট্রাজেডি বাদ দিয়ে কিছু কমেডি সিনেমায় অভিনয়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন। লন্ডন থেকে বিষণ্ণতার চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পর আমি কোহিনুর, আজাদ, রাম অর শ্যাম সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম যেগুলোতে কিছুটা কমিক উপাদান ছিল”।

দিলীপ কুমারের পোস্টার প্রদর্শনীতে একটি পোস্টারের সামনে সায়রা বানু
দিলীপ কুমারের পোস্টার প্রদর্শনীতে একটি পোস্টারের সামনে সায়রা বানু

মধুবালার সাথে ভালোবাসা ও দ্বন্দ্ব

সাতটি ছবিতে নার্গিসের সাথে জুটি ছিল দিলীপ কুমারের। কোনো একক অভিনেত্রীর সাথে এটাই ছিলো সবচেয়ে বেশি জুটি তাঁর। কিন্তু মধুবালার সাথে তার জুটি বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল এবং তিনিও মধুবালার প্রেমে পড়েছিলেন।

আত্মজীবনীতে তিনি স্বীকার করেন যে অভিনেত্রী ও নারী হিসেবে মধুবালা তাকে আকর্ষণ করেছিল।

তিনি বলেন, “মধুবালা ছিলেন প্রাণবন্ত ও তৎপর যার আমার মতো সংকোচবোধ করা কারও সাথেও কথা বলতে কোনো সমস্যা হতো না”।

কিন্তু মধুবালার বাবার কারণে তার প্রেমের গল্প বেশিদূর এগোয়নি।

মধুবালার ছোট বোন মাধুর ভূষণ স্মরণ করেন যে, “বাবা মনে করেছিলেন যে দিলীপ কুমার মধুবালার চেয়ে বেশি বয়সী হয়ে যান যদিও তাঁরা ছিলেন একে অপরের জন্য”।

“কিন্তু সে বাবাকে শোনেনি কারণ সেও দিলীপ কুমারের প্রেমে পড়েছিল। কিন্তু বি আর চোপড়ার নয়া দৌড় সিনেমা নিয়ে আইনগত সমস্যার উদ্ভব হলে বাবা ও দিলীপ কুমারের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়। পরে তাঁরা আদালতে গিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন”।

“এরপর দিলীপ মধুবালাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। মধুবালা বলেন যে, আমি তোমাকে বিয়ে করবো কিন্তু প্রথমে তোমাকে বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু দিলীপ তা মানতে রাজি হননি। সে এমনকি বলেছিল যে, দিলীপ বাড়িতে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরুক কিন্তু তাতেও রাজি হননি দিলীপ এবং তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়”।

তাদের সম্পর্ক এতোটাই কঠিন হয়ে পড়ে যে মুঘল ই আযম সিনেমায় অভিনয়ের সময় তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতেন না।

দিলীপ কুমার সায়েরা বানুকে বিয়ে করেন।

পরে যখন মধুবালা অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তিনি দিলীপ কুমারকে বার্তা পাঠান যে তিনি তাঁর সাথে দেখা করতে চান।

দিলীপ যখন তাঁর সাথে দেখা করতে গেলেন তখন অসুস্থতার কারণে মধুবালা খুবই শীর্ণ। সাধারণত মজার ও প্রাণবন্ত মধুবালা অনেক কষ্টে যে হাসি দিয়েছিলেন তাও খুব ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল।

মধুবালা তাঁর চোখের দিকে তাকালেন এবং বললেন, “আমাদের প্রিন্স তার প্রিন্সেসকে পেয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত”।

২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, মধুবালা মারা গেলেন। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ৩৫।

দিলীপ কুমার – অ্যা স্টাইল আইকন

কপালে ভি-শেপে একগুচ্ছ চুল আছড়ে পড়া জাতীয় ক্রেজে পরিণত হলো।

দিলীপ কুমারের জীবনী লেখক মেঘনাথ দেশাই লিখেছেন, “আমরা তাঁর চুলের স্টাইল, পোশাক, সংলাপ এবং আচরণগুলো অনুকরণ করতাম। পর্দায় তাঁর চরিত্রটা আমরা আত্মস্থ করার চেষ্টা করতাম”।

তিনি সাদা রঙ পছন্দ করতেন। প্রায়ই সাদা জামা ও কিছুটা ঢোলা সাদা প্যান্ট পড়তেন। উর্দু কবিতা ও সাহিত্যে ব্যাপক আগ্রহ ছিল তাঁর।

খুবই শিক্ষিত মানুষ ছিলেন তিনি, যিনি একই সাথে হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, পাঞ্জাবি ও পশতু ভাষা জানতেন।

এমনকি মারাঠি, ভোজপুরি ও পার্সিয়ানও বুঝতেন এবং কথা বলতে পারতেন।

ক্রীড়ামোদী দিলীপ

দিলীপ কুমার তাঁর তরুণ বয়সে ফুটবল খুব ভালোবাসতেন এবং উইলসন কলেজ ও খালসা কলেজের ফুটবল টিমের সদস্য ছিলেন।

পরে ক্রিকেটে তার আগ্রহ তৈরি হয়।

লখনৌর কেডি সিং বাবু স্টেডিয়ামে তিনি যখন মুশতাক আলী বেনিফিট ম্যাচ খেলছিলেন তখন ওই শহরেই তাঁর গোপি সিনেমার প্রদর্শনী হচ্ছিল।

দিলীপ কুমার ব্যাডমিন্টনও খুব পছন্দ করতেন।

সঙ্গীত পরিচালক নওশাদ উদ্দিন খাঁর সাথে প্রায়ই ব্যাডমিন্টন খেলতেন তিনি।

অনেক অ্যাওয়ার্ড আর প্রশংসা

১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ পদক পেয়েছিলেন দিলীপ কুমার। ২০১৬ সালে তিনি পেয়েছেন ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাব পদ্মবিভূষণ। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মুম্বাইতে তাঁর বাসায় গিয়ে পদক হাতে তুলে দেন।

এর আগে ১৯৯৫ সালে পেয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে পুরষ্কার।

অন্যদিকে ১৯৯৭ সালে পাকিস্তান তাদের সর্বোচ্চ খেতাব নিশা-ই-ইমতিয়াজ দেয় দিলীপ কুমারকে।

দিলীপ কুমার নিয়মানুযায়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর কাছ থেকে ওই পদক গ্রহণের জন্য অনুমতি নিয়েছিলেন।

১৯৮১ সালে ক্রান্তি সিনেমায় অভিনয়ের সময় শারদ পাওয়ার ও রজনি প্যাটেল তাকে শেরিফ অফ বোম্বে হওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিলেন।

শারদ পাওয়ার ও তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বাল সাহেব ঠাকরে দুজনের সাথেই বন্ধুত্ব ছিলো দিলীপ কুমারের।

ভারতের রাজনীতিকদের বাইরে আফগানিস্তানের রাজা জহির শাহ এবং ইরানের শাহ রেজা পেহলভীও তাঁর খুব ভালো বন্ধু ছিলেন।

রাজ কাপুরের প্রশংসা

মুঘল ই আযমের পর দিলীপ কুমার বেশি প্রশংসা পেয়েছেন গঙ্গা যমুনার জন্য।

অমিতাভ বচ্চন বলেছেন তিনি সিনেমাটি অনেকবার দেখেছেন শুধু এটি দেখতে যে উত্তর প্রদেশের সাথে যার কোনো যোগসূত্র ছিল না, সেই পাঠান সন্তান কিভাবে সেখানকার সঠিক স্থানীয় উচ্চারণে কথা বলেছেন।

পরে দুজনই শক্তি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

তাঁর সমসাময়িক প্রতিদ্বন্দ্বী ও শৈশবের বন্ধু রাজ কাপুর ছবিটি দেখে ব্যাঙ্গালোর থেকে ফোন দিয়েছিলেন দিলীপ কুমারকে এবং বলেছিলেন, “বন্ধু আজ রায় এসেছে। তুমিই সেরা শিল্পী”।