আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ তারকারা

30

853ddc294f4531289155c61f7a63e9c1-Untitled-1ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। গতকাল ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে আম্পায়ারদের একাধিক প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। খেলার আম্পায়ারিং বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে বলে মত দিয়েছেন অনেকে। এমনটা না হলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত বলেও মনে করছেন তাঁরা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের একাধিক তারকা। আর ক্ষোভ প্রকাশের জন্য তাঁরা বেছে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুক। তাঁদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সেই ক্ষোভ।

সুবর্ণা মুস্তাফা:
দেশের প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা লিখেছেন, ‘এটা ক্রিকেট ছিল না। স্কোরকার্ডে বাংলাদেশ হয়তো ম্যাচ হেরেছে, কিন্তু লাখ লাখ মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে তাঁরা। আজ কেউ যদি হেরে থাকে, তবে হেরেছে ক্রিকেট…ক্রিকেট খেলার কালো একটি দিন এটি।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী:

বাংলাদেশের খেলা মানেই ফেসবুক আর টিভি আলোচনায় তারকা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উচ্ছ্বাসমাখা নানা অনুভূতি। ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচ নিয়েও ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর স্ট্যাটাসটি উচ্ছ্বাসমাখা ছিল না। সেখানে ছিল প্রতিবাদের সুর। আরও অনেকের মতো তিনিও আম্পায়ারিং এবং আইসিসির কড়া সমালোচনা করেছেন। ফারুকী লিখেছেন, ‘আমাকে কেউ বুঝাতে আসবেন না যে, এটি একটি ফেয়ার খেলা। কেউ কি আমাকে বলতে পারবেন, বিশ্বকাপ ফুটবলের দোহাই টেনে একটা কোয়ার্টার ফাইনালের ভেন্যু আর তারিখ কীভাবে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে? যে সিদ্ধান্তটি নিয়ে বিতর্কের শুরু, সেটিকে আমি নিশ্চিত আউট বলেই মনে করি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তের বলির শিকার হলো।’

মেহের আফরোজ শাওন:
অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনের মতে, বাজে আম্পায়ারিংয়ের বলি হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শুধু তাই নয়, আম্পায়ারকে ভ্যাম্পায়ার বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। শাওন ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমরা অলরেডি জিতে গেছি। আম্পায়ারের এত ভ্যাম্পায়ারগিরি এবং আইসিসির ডাকাতির পরেও আমাদের ১১ জন টাইগার যে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে পারছে, এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমরা যারা টিভিতে খেলা দেখছি, তারাই মাথা ঠান্ডা রাখতে পারছি না। রাগে বাসার কী কী জিনিস ভেঙেছি, তার কথা না হয় বাদই দিলাম। সবচেয়ে মজা লাগছে, ভারতের খেলোয়াড়দের ভিতুর মতো চেহারা দেখে। আইসিসির এত পক্ষপাতিত্বের পরও বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে তাঁদের জান বের হয়ে যাচ্ছে। আমাদের বাঘের বাচ্চা খেলোয়াড়গুলো দেশে ফিরলে একটা গ্র্যান্ড রিসিপশন দিতে চাই…।’

শাফিন আহমেদ:
দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের ভোকাল শাফিন আহমেদ লিখেছেন, ‘না, আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিততে পারবে না। কোয়ার্টার ফাইনাল নকআউট ম্যাচে তিনটি ভুল সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের অভিযোগ জানাতে হবে। ক্রিকেটপ্রেমী জাতি, অনেক বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই ঘুম থেকে জেগে ওঠ।’

ওমর সানি:

আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তে বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের রোমান্টিক হিরো ওমর সানিও বেশ ক্ষুব্ধ। রুবেলের বলকে নো বল ধরায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে সানি লিখেছেন, ‘রুবেলের বল যদি নো বোল হয়, তাহলে আমিও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি ও মৌসুমী বেদনাহত। খানিকটা নিশ্চুপ।’

হাসান:
আরও অনেকের মতো আর্ক ব্যান্ডের হাসানও তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ভারত যেকোনো উপায়ে বাংলাদেশকে হারাতে চাচ্ছিল। ম্যাচ আর আম্পায়ারদের নাটক দেখেই তা স্পষ্ট বোঝা গেছে। ম্যাচ চলাকালে ও ম্যাচ শেষে তা ভালোভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। খেলায় আম্পায়ারের তিনটা ডিসিশন আমাদের বিরুদ্ধে গেছে। রোহিত শর্মা, সুরেশ রায়না ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সিদ্ধান্ত আমাদের বিরুদ্ধে গেছে। সিদ্ধান্তগুলো সঠিক হলে খেলাটা আরো উপভোগ্য হতো। সবকিছু মিলিয়ে দিনটা বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। আমাদের জন্য দিনটা ছিল ব্যাডলাক। খেলার আম্পায়ারিং সম্পূর্ণ বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল। যদি এটা না হতো, তাহলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত। খেলা দেখে আমি রীতিমত ধাক্কা খেয়েছি। আইসিসিকে মনে হয়েছে, ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। যেখানে আইসিসির উচিত ছোট দেশগুলোকে উৎসাহ দেওয়া, সেখানে আইসিসি ছোট দেশগুলোকে দাবিয়ে রাখছে। আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার টার্গেট ছিল। আমরা খেলেছি। আমাদের লক্ষ্য একটা সময় বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে ধাবিত হবে বলে আশা করছি। মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়দের মানতেই হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটা আমরা দর্শকেরা মানতে পারছি না। তবে আমাদের দলের মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরাও খুব বেশি ভালো খেলতে পারেননি। যদি তাঁরা ভালো করতে পারতেন, তাহলে খেলাটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো।’

পান্থ কানাই:
জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী পান্থ কানাই তাঁর ফেসবুক ওয়ালে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি রোহিত শর্মার আউট বিতর্ক নিয়ে একটি নিউজ শেয়ার দিয়ে নিজের দেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘সত্যের জয় হবেই…কোনো শক্তি নেই যা আমাদের আটকে রাখে…বুকে সাহস রেখে খেল…জয় আমাদের হবেই…।’ আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমি সজ্ঞানে ও সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা দিলাম…কারণ এটা কোনো ফেয়ার গেম হচ্ছে না…বাংলাদেশকে একাধারে আইসিসি এবং ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রেসার নিয়ে খেলতে হচ্ছে…এরকম করে জেতার আনন্দ ভারত পেতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ না…আমরাই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন।’

বিজরী বরকতউল্লাহ:
মডেল, অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী বিজরী বরকতউল্লাহ লিখেছেন, ‘মাথা ঠান্ডা রেখে সঠিকভাবে খেলার জন্য বাংলাদেশি টাইগারদের সাধুবাদ। আমরা তোমাদের অনেক ভালোবাসি…।’

জাকিয়া বারী মম:
ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় তারকা অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এই বিশ্বকাপ দেখার আর কোনো দরকার আছে কি? যেখানে আম্পায়ারও ভারতের একজন খেলোয়াড়!!! বাঘকে খেলায় হারাতে ভারতের সঙ্গে আইসিসিকেও যোগ দিতে হলো…।’

ইরেশ যাকের:
জনপ্রিয় অভিনেতা ইরেশ যাকের তাঁর ফেসবুক ওয়ালে একটি ছবি পোস্ট করে আইসিসির নিরপেক্ষতা নিয়ে কঠিনভাবে প্রশ্ন তোলেন। ছবি পোস্ট করার পাশাপাশি তিনি লেখেন, ‘এটা খুবই লজ্জার। এ ধরনের স্বজনপ্রীতি আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টে আগে কখনো দেখিনি।’

কোনাল:
বর্তমান প্রজন্মের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কোনাল লিখেছেন, ‘আমাদের শৈশব কেটেছে সত্যের কথা বলে, সত্য লড়াই দিয়ে অধিকার আদায় করে…যে দেশের মায়েরা গব্বর সিংয়ের ভয় দেখিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়ায়, তাঁরা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন শুনে তো ভয় পাবেই!! তাইতো এত প্রতারণা, এত ফিক্সিং, এত জুয়া!! ধন্যবাদ তোমাদের, আমাদের সঠিক অবস্থান বিশ্ববাসীর কাছে বুঝিয়ে দেবার জন্য…বাংলাদেশ টাইগারস, আমরা তোমাদের নিয়ে অনেক গর্বিত!!’

জ্যোতিকা জ্যোতি:
ছোট পর্দার ব্যস্ত অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি বাংলাদেশের খেলা মিস করেন না। আরও অনেকের মতো তিনিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে চরম হতাশ হয়েছেন। তিনি এমন সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেই মনে করেন। জ্যোতিকা জ্যোতি তাঁর ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘টেনে রাখতে চাইলেও, জায়গা না দিলেও, যড়যন্ত্রের কাঁচির ফাঁকে ফেললেও আমাদের যোগ্যতার জায়গায় আমরা ঠিক পোঁছাই। সে আগুন তো আমাদের আছে! আগুন নিয়ে যারা খেলা করে, তারা সেই আগুনে পুড়ে মরে।’