বাজেট পাসের আগেই মোবাইলে শুল্ক কর্তন শুরু

113

প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোনের সেবায় ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের ইতিহাসে ৪৪তম বাজেটে এই প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংসদ সদস্যদের আলোচনা শেষে এটি আগামী ৩০ জুন পাস হওয়ার কথা।

বাজেট পাস হলে মোবাইলে কথা বলা ও ডেটা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ব্যয় বাড়ার কথা। কিন্তু মোবাইল অপরারেটরগুলো বাজেট প্রস্তাবনার দিন (৪ জুন) থেকেই কল ও ডেটা স্থানান্তরে এই অতিরিক্ত অর্থ কাটা শুরু করেছে।

তবে মোবাইল অপরারেটগুলোর দাবি, সরকারের নির্দেশে তারা এই শুল্ক আরোপ করেছেন। সরকার তাদের ৪ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে এই শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছে।

সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক শুক্রবার সকালে Govt.Info- থেকে গ্রাহকরা একটি এসএমএস পেয়েছেন। সেখানে লেখা রয়েছে- ‘মোবাইলের সব ব্যবহারের উপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা আপনার সকল মোবাইল রেটের সাথে প্রযোজ্য হবে।’

এরপর কল করে ৫ শতাংশ শুল্ক কর্তনের সত্যতা মেলে। বিভিন্ন মোবাইল অপরারেটর থেকে কল শেষে রেটের একটি এসএমএস দেয়া হয়। একটি এসএমএস এমন- LastCall00:00:54, Charged Tk 0.42+ (SD+VAT) 0.09.

পরে এ বিষয়ে বাংলালিংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সত্যতা পাওয়া যায়। মোবাইল অপারেটরটির অনলাইন কাস্টমার কেয়ারের একজন প্রতিনিধি জানান, ‘৪ জুন ২০১৫ থেকে সরকারি নির্দেশে মোবাইলের সেবায় (কল রেট এবং সেবা) ৫ শতাংশ সাপ্লিমেন্টারি চার্জ কাটা হচ্ছে। এর সঙ্গে আগে থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, এর আগে গত ৩০ মার্চ মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের বিধান রেখে নতুন একটি আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

জাতীয় সংসদে আইন পাস হলে মোবাইল কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে যে বিল নিচ্ছে, তার সঙ্গে এই ১ শতাংশ সারচার্জ যোগ হবে।

একটি আইন পাস হয়নি বলে এখনো সে অর্থ কাটা হচ্ছে না। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটের দিন থেকেই ৫ শতাংশ শুল্ক কর্তন করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মোবাইল অপরারেটরের সেবা নেওয়া গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেটে মোবাইল সিম বা রিমের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবায় ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন।

তবে নতুন মোবাইল সিমের শুল্ক হার ৩০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০০ টাকা করার প্রস্তাব রেখেছেন তিনি। সিমকার্ড প্রতিস্থাপনের ওপর ১০০ টাকা শুল্ক হার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

সিমকার্ড প্রতিস্থাপন কর নিয়ে আগে থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল।

মুহিত বলেন, ‘মোবাইল ফোন খাতের উত্তরোত্তর উন্নয়নের স্বার্থে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার সহজলভ্য করার লক্ষ্যে এ খাতের সার্বিক সুষম প্রবৃদ্ধির জন্য এ শুল্কহার ধার্য করা হয়েছে।’

এছাড়া মোবাইল সিম কার্ডের উপর বর্তমান সম্পূরক শুল্কহার ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।

বিটিআরসির হিসাবে, গত এপ্রিল মাস নাগাদ বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৪৭ লাখের বেশি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৪ কোটি ৪২ লাখের বেশি।

মোবাইল সিমের শুল্কহার কমানোকে স্বাগত জানালেও সেবার উপর কর বাড়ানোর প্রস্তাবকে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার ও এ খাতে সার্বিক অগ্রযাত্রার অন্তরায় হিসেবে দেখছে মোবাইল ফোন অপারেটররা।

একাধিক কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, এ প্রস্তাব কার্যকর হলে গ্রাহকরা কথা বলা ও ডেটা স্থানান্তরে যদি ১০০ টাকার ব্যয় করেন, তাহলে আরো ৫ টাকা যোগ হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে গ্রাহকদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এছাড়া সারচার্জ এক শতাংশ যোগ হলে ১০০ টাকার ব্যবহারে গ্রাহকদের মোট ২১ টাকা বেশি খরচ করতে হবে। এর ফলে কথা বলার প্রবণতা কমবে এবং অপারেটরদের আয় কমে যাবে।

গত ৩০ মার্চ মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের বিধান রেখে নতুন একটি আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। জাতীয় সংসদে আইন পাস হলে মোবাইল কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে যে বিল নিচ্ছে, তার সঙ্গে এই ১ শতাংশ সারচার্জ যোগ হবে।

বৃহস্পতিবার রাতেই বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় মোবাইল ফোন অপারেটর রবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সিম কর কমানোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে মোবাইল সংযোগের বিস্তার ঘটানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে তারা আশা করেছিল যে সিম কর পুরোপুরি মওকুফ হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘তবে সিম কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবেই সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ এবং পদক্ষেপসমূহকে ত্বরান্বিত করবে।’

৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে উদ্বেগ জানিয়ে রবি বলেছে, ‘এটা আমাদের গ্রাহকদের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে দেখা দেবে। এর ফলে এই খাতের সামগ্রিক রাজস্ব কমে আসার আশঙ্কাও রয়েছে।’