সারাদেশে কালবৈশাখী নিহত ২৬

30

night_photo_3_386033145শনিবার সন্ধ্যার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে কালবৈশাখী ঝড়। এতে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় গাছ বা দেয়াল চাপা পড়ে ২৪ জন নিহত হয়েছেন।

 

এছাড়া ঝড়ের পর ভেঙে পড়া বিলবোর্ড মেরামত করতে গিয়ে ঢাকায় ২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলের। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি। এছাড়া দেশের অনেক জেলায় ঘটনার পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা:সদরঘাটে নদী পারাপারের সময় ঝড়ের কবলে পড়ে হানিফ শেখ (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ের সময় দু’নৌকার মাঝখানে চাপা পড়ে তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছেন নিহতের চাচাতো ভাই।

এছাড়া রাজধানীর রমনা থানাধীন শাহবাগের কাছে (শিশুপার্ক সংলগ্ন) সংলগ্ন রাস্তায় ঝড়ে বিলবোর্ড ভেঙে দুই রিকশাচালকসহ এক প্রাইভেটকার আরোহী আহত হয়েছেন। আহত রিকশাচালদের মধ্যে একজন হলেন তারা মিয়া (৩৮)।

এছাড়া, ঝড় আঘাত হানার পর শনিবার দিনগত রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর বিজয় সরণি এলাকায় বিলবোর্ড মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। দুই শ্রমিক হলেন- মিজানুর রহমান (৩৯) ও আব্বাস আলী (৩০)

এদিকে, বিলবোর্ড ভেঙে সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজশাহী:ঝড়ের কবলে পড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর চত্বরে অজ্ঞাতপরিচয় এক বৃদ্ধা ভিক্ষুকের মুত্যু হয়।

ঝড়ে দেয়াল চাপা পড়ে বাঘা উপজেলার পাকুরিয়ায় জাহানারা বেগম (৬৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া একই উপজেলার কিশোরপুর গ্রামে নদীতে মাছ ধরে ফেরার পথে নৌকা বাঁধতে গিয়ে পাড় ধসে মারা গেছেন এমাজউদ্দিন  (৪৫) নামে এক জেলে।

এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে আম, লিচুসহে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে ও উপড়ে গেছে কয়েক হাজার গাছ। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে জেলার অনেক এলাকা।

জামালপুর:জামালপুরের পাঁচ উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ের আঘাতে পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

ঝড়ের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জ এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

মেহেরপুর: মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের গাংনী উপজেলার চোখ তোলার মাঠ ও বাঁশবাড়িয়া মাঠের মধ্যে রাস্তার ওপর গাছপালা ভেঙে পড়ে। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন আটকে পড়ে। পরে গাছপালা সরিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।

এদিকে, ঝড়ের কবলে পড়ে মাঠের সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ও উঠতি ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া প্রবল ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালাসহ বেশ কয়েক স্থানে কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

নওগাঁ:মান্দা উপজেলার মহানগর গ্রামে ঝড়ের কারণে দেয়ালধসে শাহনাজ বেগম (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরো অন্তত ১৫ জন আহত হন। তাদের মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদিকে জেলার সদর, আত্রাই, রানীনগর, বদলগাছী, পোরশা, সাপাহার, নিয়মতপুর, মান্দাসহ আশেপাপশের এলাকার শত-শত বাড়িঘরের চাল উড়ে গেছে। এসব এলাকার হাজার হাজার গাছপালা ও ফসলের ব্যবপক ক্ষতি হয়েছে। আকস্মিক ঝড়ে এসব এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

পাবনা: পাবনায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে চাঁদমারী এলাকায় ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে জামেল উদ্দিন (৮০) নামে এক বৃদ্ধ চা বিক্রেতার মৃত্যু হয়েছে।

নিহত জামেল উদ্দিন পাবনা পৌর এলাকার চক গোবিন্দা মহল্লার বাসিন্দা।  তিনি ‍রাতে চাঁদমারী মোড়ের অভিযান ক্লাবের পাশে নিজস্ব চায়ের দোকানে ‌ দুর্ঘটনার শিকার হন। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

সিরাজগঞ্জ:সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়িতে ঝড়ের কবলে পড়ে যমুনা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মোজাম্মেল হক নামে একজনের মৃত্যু হয়।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই ব্যক্তির লাশ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। নিহত মোজাম্মেল হক উপজেলার পীরগাছা গ্রামের বাসিন্দা।

সুনামগঞ্জ:সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের কার্ত্তিকপুর গ্রামে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘর ধ্বসে পড়ে ফারজানা নামের এক বছর বয়সী এক শিশু মারা গেছে।

নিহত শিশু ফারজানা উপজেলার কার্ত্তিকপুর গ্রামের ছলেক মিয়ার মেয়ে।

এছাড়া ঝড়ে উপজেলার শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বগুড়া:বগুড়া সদর উপজেলায় ঝড়ের সময় নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় আব্দুল ওয়াহেদ সরকারের স্ত্রী আজিরন বিবি (৪০), নজরুল ইসলামের শিশুকন্যা নীলা (৩ মাস), সাজাহান মিয়ার ছেলে মো. রজব (১৫) ও আইজলের ছেলে মো. পলাশ (১৮) নামে  ৪ জনের।

সাজাহানপুর উপজেলায় লুৎফর রহমানের ছেলে আব্দুল মান্নান ওরফে ফাননা (৩৫), মৃত তায়েব আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেওয়া (৬৫) ও বাবলু মিয়ার ছেলে পায়েল ওরফে বুদার (১৬) মৃত্যু হয়েছে।

সারিয়াকান্দিতে ঝড়ের কবলে পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আরিফুর রহমান মন্ডল।

তবে সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাইয়িদ মোহাম্মদ ওয়াহেদুজ্জামান জানান, ঝড়ে ফুলবাড়ী বাজারের নূরু প্রামাণিকের ছেলে চা বিক্রেতা সুজন মিয়া (৩০), একই ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকার সিজান চন্দ্র বর্মণের ছেলে সুবল চন্দ্র বর্মণ  (২৫) ও নারচী ইউনিয়নের নারচী গ্রামের ইয়াদ আলীর স্ত্রী শান্তা বেগমের (২৫) মৃত্যু হয়।

কাহালু উপজেলায় মারা গেছেন আব্দুর সাত্তারের ছেলে আজিজুল (১৯) ও আবেদ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩৮)।

ধুনট উপজেলায় ফয়েজ প্রামাণিকের ছেলে আফজাল হোসেন (৬০), সোনাতলা উপজেলায় মৃত ম‍কো প্রামাণিকের স্ত্রী ফিরোজা বেওয়া (৫৫) এবং গাবতলী উপজেলায় আছরউদ্দিনের ওরফে আসাদের স্ত্রী সামিয়া বেগম ওরফে আসমা (৩২)।

এদিকে, ঝড়ে ও ‍বৃষ্টিতে জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া গাছপালা উপড়ে পড়ে বন্ধ রয়েছে অনেক রাস্তায় যান চলাচল।

ঝড়ের তোপে উড়ে গেছে অসংখ্য বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠানের টিনের চাল এবং বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি।

এছাড়া ঝড়ের পর থেকেই পুরো জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবারহ কবে শুরু হবে তা বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে সন্ধি বেগম (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

মৃত সন্ধি উপজেলার খলশি ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকার মৃত আজমত আলীর স্ত্রী। তিনি বাড়িতে একাই বসবাস করতেন।