মাশুল ছাড়া বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় গেল ভারতীয় চাল

30

মঙ্গলবার সকালে ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় চাল নেয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় ১০ গাড়ি চাল সরাসরি আগরতলা খাদ্যগুদামে চলে গেছে। এবারও চাল পরিবহন থেকে মাসুল নেয়নি বাংলাদেশ।
আখাউড়া স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রথম দফায় মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টায় দশটি কাভার ভ্যান ভর্তি ৩ হাজার ৫ শ চল্লিশ ব্যাগে মোট ১৭৭ মেট্রিক টন চাল গেছে ভারতের ত্রিপুরা খাদ্যগুদামে। আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে এই চাল খালাস হয়ে কাভার ভ্যান ভর্তি করে রাতে মোজাহিদ ফিলিং স্টেশনে পুলিশি নিরাপত্তায় ছিল। সকালে গাড়িগুলো আখাউড়া বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে।
রাকিব পরিবহন সংস্থার মালিক নাছির মিয়া জানান, নয়াদিল্লীর গুরগাঁওভিত্তিক কোম্পানি ’দারসেল লজিস্টিকস’ এই চাল পরিবহনের দায়িত্ব পেয়েছে। তারা শনিবার কোলকাতা বন্দর থেকে ছোট আকারের জেড শিপিং লাইন্সের জাহাজ এমভি নিউ টেক-৬ করে ৯১২ মেট্রিক টন চাল বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নদীবন্দরে এনেছে। আশুগঞ্জ ফেরিঘাট থেকে মাল খালাস করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা হিসাবে রাকিব পরিবহণ সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছে। সে অনুযায়ী তারা চাল পরিবহন করছে। ত্রিপুরায় সরকারী ছুটি থাকায় আগামী ১ ও ২ এপ্রিল চাল পরিবহন বন্ধ থাকবে। ৩ এপ্রিল থেকে বাকী ৭৩৫ মেট্রিক টন চাল যাবে। দ্বিতীয় দফায় আরো এক জাহাজ চাল আশুগঞ্জ বন্দরে আসছে আগামী সপ্তাহে। পর্যায়ক্রমে ২৫ হাজার মেট্রিক চাল আসবে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারতের নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল পরিবহনের অনুমোদন করেছে। গত বছরের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ও অক্টোবর মাসে ৫ হাজার নিয়ে এই অনুমোদনের মোট ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল ভারতের ত্রিপুরায় যায়। এবার বাকী ২৫ হাজার হাজার মেট্রিক টন চাল নিচ্ছে তারা। ইতিমধ্যে মঙ্গলবার ১৭৭ মেট্রিক টন চাল গেল সরাসরি ভারতের ত্রিপুরা খাদ্যগুদামে। ৭৩৫ মেট্রিক টন চাল পরিবহনের জন্য আশুগঞ্জ নৌবন্দরে অপেক্ষায় রয়েছে। এই মাল পরিবহনে এবারও কোনো মাসুল নিবেনা বাংলাদেশ সরকার। তবে প্রতি মেট্রিক টন চালে ৩০ টাকা করে ল্যান্ডিং চার্জ এবং নৌবন্দরে জাহাজ অবস্থানের জন্য দৈনিক ১৬০ টাকা করে বার্থিং চার্জ নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে আখাউড়া কাস্টমস কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, মাসুল নেয়ার অনুমতি না থাকায় গাড়ির ক্রুদের পরিচয়পত্রসহ কাগজপত্রের কাজ শেষে ছাড়পত্র দেয়ায় চালের গাড়িগুলো সরাসরি চলে গেছে ত্রিপুরায়। চাল পরিবহনে আখাউড়া স্থলবন্দরের জলি এন্টারপ্রাইজ সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে ।
খোঁজ নিয়ে আরো জানাগেছে, ত্রিপুরার পর আসামের বরাক উপত্যকাসহ মিজোরাম ও মণিপুরের জন্য পিডিএসের খাদ্যপণ্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নেয়া হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বের জন্য খাদ্যপণ্য পরিবহন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য এবারও ভারতকে বাংলাদেশের নদী ও সড়কপথ ব্যবহার করতে দিয়েছে। যেহেতু উত্তর-পূর্ব ভারত বিশেষত ত্রিপুরা, মিজোরাম ও বারাক উপত্যকাসহ নিম্ন আসামের জন্য খাদ্যপণ্য পরিবহন করা একটি সমস্যার ব্যাপার। তাই ভারতের অনুরোধে এবার আরো পচিশ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যপণ্য পরিবহনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
আখাউড়া স্থলবন্দরে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুধু মানবতার খাতিরে ভারতকে বাংলাদেশ এই সুবিধা দিয়েছে। তারা আরো জানান, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বা হলদিয়া বন্দর থেকে উত্তর-পূর্বে তথা আগরতলায় পণ্য সরবরাহের জন্য পাড়ি দিতে হয় এক হাজার ছয়শ পঞ্চাশ কিলোমিটার সড়ক পথ। শিলিগুড়ি, চিকেন নেক হয়ে গুহাটি, শিলং করিমগঞ্জ হয়ে এই সড়ক পথটি একেবারে সহজ নয়। সময় ও খরচ বেড়ে যায় অনেকগুণ কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে আশুগঞ্জ-আখাউড়া পথে সেটি নেমে আসে মাত্র তিনশত পঞ্চাশ কিলোমিটার। কমে খরচও। তাই গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই রুট দিয়ে দশ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পরিবহন অনুমতি চেয়েছিল ভারত। বাংলাদেশ তা অনুমোদন দেয়। প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার অ্যান্ড ট্রেড-এর অধীনে দেয়া এই অনুমোদনে প্রথম দফায় গত আগস্ট মাসে ভারত থেকে নৌপথে পাঁচ হাজার টন খাদ্যশস্য আশুগঞ্জ পৌঁছে। বাকি পাঁচ হাজার খাদ্যশস্য নেয়ার আগেই একই বছর ২১ সেপ্টেম্বর আরো পঁচিশ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পরিবহনের অনুমোদন চায় ভারত। এতে বলা হয়, যে সড়ক দিয়ে এসব পণ্য পরিবহন করা হবে, প্রয়োজনে তা সংস্কার করে দেয়া হবে। কয়েক দফা বৈঠকের পর গত ১৩ জানুয়ারি নৌ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ভারতের এই প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ। এতে প্রটোকল অনুযায়ী মাসুল নেয়ার কথা থাকলেও ‘বন্ধুত্বের’ খাতিরে তা নিচ্ছে না বাংলাদেশ।
এর আগে ২০১১ সালের শেষে দিকে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুত কেন্দ্রের সুবিশাল দুটি টারবাইনসহ ভারী যন্ত্রপাতি এই পথ দিয়েই পরিবহন করতে দিয়েছিল বাংলাদেশ। যার বিনিময়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পালাটানা থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কাছে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অবশ্য যার বাস্তবায়ন এখনও হয়নি।