কূটনীতিকদের ফর্মূলায় জাতীয় সরকার?

13

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তোরণের উপায় হিসেবে বিদেশি কূটনীতিকরা তিনটি বিকল্প ফর্মূলা উপস্থাপন করেছেন। তারমধ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবটি এখন সক্রিয়ভাবে এগুচ্ছে বলে জানা গেছে, যদিও সরকারের তরফ থেকে এর কোনোটির পক্ষেই যথাযথ সাড়া নেই। প্রস্তাবিত এই জাতীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের আয়োজন করার কথা বলা হচ্ছে। এ সরকারের প্রধান করা হবে রাষ্ট্রপতিকে। তার নেতৃত্বেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ ধরনের যে কোনো উদ্যোগেরই বিপক্ষে। বরং জাতিসংঘসহ বিদেশি কূটনীতিকদের এমন ব্যাপক তৎপরতায় সরকার বিব্রত ও বিরক্ত বলা যায়। তারপরও বিদেশিরা বসে নেই। তারা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো লবি থেকে ‘ইনফরমাল আলোচনায়’ মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চাওয়া হলেও বিদেশিরা তাতে রাজি নয় বলে জানা গেছে। তারা এই জুনের মধ্যেই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের চূড়ান্ত মীমাংসা অর্থাৎ নির্বাচন চেয়েছেন। তবে জুনের মধ্যে নির্বাচন দিতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মোটেই মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়। আর এ কারণে সরকার প্রকাশ্যে আপাতত বিদেশিদের এড়িয়ে চলার নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদেরকে কতটা এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যেই সরকারের সমর্থক বিভিন্ন গ্রুপগুলোর মধ্যে হতাশা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, কূটনীতিকরা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে যে তিনটি ফর্মূলায়  নিয়ে আলোচনা করেছেন, তা হলো- (এক) শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে সবগুলো দলের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন এক জাতীয় সরকারের অধীন নির্বাচন। (দুই) রাষ্ট্রপতির অধীনে সবগুলো দলের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। (তিন) আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা হচ্ছে তা বন্ধ করে সংলাপ শুরুর পরিবেশ তৈরীর নিশ্চয়তা।

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, টানা দু’মাসের নজিরবিহীন হরতাল-অবরোধ দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, তেমনি সরকারকেও বেশ কাবু করে ফেলেছে। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনকে আইএস, জঙ্গি, চরমপন্থি প্রভৃতি নামে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও সেইসব প্রচেষ্টা বিদেশিদের কাছে সেভাবে ‘হালে পানি’ পায়নি। এর জবাব হিসেবে বিদেশিরা বরং বলেছেন সংলাপে বসার জন্য- যেটির ঘোর বিরোধী আওয়ামী লীগ। কারণ আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, সংলাপে বসা মানেই এ মুহূর্তে নির্বাচন দেওয়া, যা তাদের জন্য অসম্ভব। তবে জানা গেছে, প্রস্তাবিত এই তিনটি ফর্মূলার কোনোটির ব্যাপারেই আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে ইতিবাচক সাড়া না দিলেও ভেতরে ভেতরে সরকারের মধ্যে চরম টেনশন ঢুকেছে। ফলে সরকারের কেউ কেউ এর একটা সম্মানজনক সমাধানের কথাও ভাবছিলেন। কিন্তু, সরকারের মধ্যে কারো কারো এখনো ‘ইগো’ সমস্যা প্রকটভাবে কাজ করায় সেই ভাবনা এগুচ্ছে না। তাছাড়া ‘সম্মানজনক ও নিরাপদ’ এক্সিট এ মুহূর্তে আদৌ তাদের জন্য আছে কিনা এ নিয়েও তারা সন্দিহান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় সরকারের ধারণাটি বেশ পুরনো হলেও এ সময়ে সেটিই একমাত্র গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। যেহেতু আওয়ামী লীগের বিরোধিতার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমানে একটি জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তাতে সংবিধান সংশোধনেরও প্রয়োজন রয়েছে। বিদেশিরাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে জাতীয় সরকার নিয়ে ভাবছেন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও এ ফর্মূলার পক্ষে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। খালেদা জিয়া ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর পর সংকট সমাধানে কূটনীতিকরা এই ফর্মুলা নিয়েই এগুচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সূত্রঃ শীর্ষ নিউজ