জি-৭ একাট্টা চীনকে ঠেকাতে, পাল্টা হুশিয়ারি চীনের

260
জি-৭ সম্মেলন

জি–৭ ভুক্ত দেশগুলোর ২০২১ সালের তিন দিনব্যাপী সম্মেলন ইংলিশ কাউন্টি অব কর্নওয়ালের করবিস উপসাগরের সমুদ্র–উপকূলীয় কর্নিশ রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার ১১ জুন থেকে রোববার ১৩ জুন পর্যন্ত চলা এই শীর্ষ সম্মেলনে জি–৭ ভুক্ত দেশগুলো বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছে যে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিকল্প প্রস্তাব দিতে পারে তারা। বিশ্বনেতারা বলেছেন, তারা পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও মূল্যবোধ বজায় রাখতে চান।

লেখাটিতে যা আছে.... লুকিয়ে রাখুন

জি-৭ জোট কী?

জি-৭ এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হল গ্রুপ অফ সেভেন, বা সাতটি দেশের দল। বিশ্বের তথাকথিত উন্নত অর্থনীতির সাতটি বড় দেশ ও একটি সংস্থা নিয়ে এই জোট গঠিত।

জি-৭ সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিশ্বের শীর্ষ সাত ধনী দেশের জোট জি-সেভেন। জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, ইটালি, ফ্রান্স এবং জাপান। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই জোটের একটি অংশ।

রাশিয়া ১৯৯৮ সালে এই জোটে যোগ দিলে সেটা জি-৮ হয়েছিল। তবে ক্রিমিয়া দখল করার কারণে ২০১৪ সালে রাশিয়া বাদ পড়ে যায়।

চীন একটি বড় অর্থনীতি এবং বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা কখনও এই জোটের সদস্য ছিল না।

কোনো দেশে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকলে ওই দেশকে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর মতো উন্নত অর্থনীতি হিসাবে দেখা হয় না।

জি-৭ কী করে?

সারা বছর ধরে সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা বৈঠক করেন, চুক্তি করেন এবং বৈশ্বিক ইভেন্টগুলিতে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেন।

এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনের আগে, জি-৭ এর অর্থমন্ত্রীরা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে বেশি বেশি কর আদায়ের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।

প্রধান ইভেন্টে জি-৭ নেতারা দিনের সবচেয়ে বড় ইস্যুগুলো নিয়ে একসাথে আলোচনা করতে বসেন।

জি-৭ এর সর্বশেষ সম্মেলন

জি-৭ সম্মেলন ২০২১

এবারের সম্মেলনের আয়োজক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ১১ জুন শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে জি-৭ সম্মেলন শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে জি-৭ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

বরিস জনসন ছাড়াও এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ দুই নেতাও এ সম্মেলনে যোগ দেন। এ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা।

এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও কানাডা সমন্বিতভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীনে। এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দ করা। এ ছাড়া উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে জিনজিয়ানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

জি-৭ সম্মেলন ২০২১
জি-৭ সম্মেলন ২০২১ : অংশ নেয়া নেতৃবৃন্দ

যুক্তরাজ্যে কেন জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন?

২০২১ সালের প্রেসিডেন্সি যুক্তরাজ্যের হওয়ায় এবারের জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন যুক্তরাজ্যেই হচ্ছে।

গত জানুয়ারি মাসে ভেন্যু ঘোষণা করে বলা হয়েছিল যে কর্নওয়ালের সেন্ট আইভেসের কাছে কার্বিস বে হোটেলে এই বৈঠক হবে।

যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে যে বিশ্বনেতাদের একে অপরের সাথে সাক্ষাত করা জরুরি ছিল।

১০০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইতোমধ্যে ১০ কোটি টিকা বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন ৫০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণের। কানাডা ঘোষণা দিয়েছে ১০ কোটি টিকার।

ভবিষ্যৎ মহামারি রোধে নতুন পরিকল্পনা

ভবিষ্যৎ মহামারি রোধে নতুন পরিকল্পনা নিয়েও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন জি–৭–ভুক্ত দেশের নেতারা। ১০০ দিনের মধ্যে করোনা চিকিৎসা, টিকার উন্নয়ন ও লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আগামী দিনে যেকোনো মহামারি কিংবা রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় একটি রূপরেখা দাঁড় করিয়েছে ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭।

‘কারবিস বে ডিক্লারেশন’ শীর্ষক রূপরেখায় স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির কথা রয়েছে।

অবকাঠামো খাতে চীনকে ঠেকাতে নতুন প্রকল্প

চীনের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অবকাঠামো সহায়তা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে জি-সেভেন ভুক্ত দেশগুলোর নেতারা। বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড (বি৩ডব্লিউ) নামে ঘোষিত এই পরিকল্পনা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের লক্ষ-কোটি ডলারের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের একটি জবাব হতে যাচ্ছে।

নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে উন্নত অবকাঠামো গড়ে তুলতে নতুন পরিকল্পনার উদ্দেশ্য, বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলা চীনের প্রভাব ঠেকানো।  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং অন্য জোট নেতারা আশা করছেন, তাদের এই পরিকল্পনা, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অবকাঠামো নির্মাণে একটি অংশীদারিত্ব অর্জনের পথ করে দেবে।

এজন্য চার লাখ কোটি ডলারের তহবিল যোগান দিতে যাচ্ছে জি-৭, যা ২০৩৫ সাল নাগাদ এসব দেশের অবকাঠামো খাতের জন্য প্রয়োজন। বাণিজ্য ও মানবাধিকার বিষয়ে চীনের প্রতি একটি অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও একমত জি-৭।

বিআরআই এর পাল্টা পরিকল্পনা বিথ্রিডব্লিউ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ডের (বিথ্রিডব্লিউ) পরিকল্পনা করেছেন। এটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) পাল্টা পরিকল্পনা। গুণগত দিক দিয়ে এটি আরও উন্নত মানের।

আসলে কী চাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র?

আমেরিকার বর্তমান সরকার তার মিত্রদের বলতে চাইছে যে, ‘পশ্চিমা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শ্রেষ্ঠত্ব‘ বাকি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাকি বিশ্বকে বলতে হবে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে আখেরে তাদের বিপদে পড়তে হবে, চীন মানবাধিকারের তোয়াক্কা করেনা, সুস্থ প্রতিযোগিতার ধার ধারে না।

গত তিন দশকে চীন বিআরআই এর আওতায় বিশ্বের একশটিরও বেশি দেশে অবকাঠামো উন্নয়নে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে – যা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। তাদের ভয়, গত কয়েকশ বছর ধরে উন্নয়নশীল বিশ্বে তাদের যে প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে তা হুমকিতে পড়ছে।

ব্রিটিশ রানির সঙ্গে জি-৭ নেতাদের সাক্ষাৎ

ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। শুক্রবার দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের কার্বিস উপসাগরের কর্নিশ সমুদ্র উপকূলের রিসোর্টের কাছে বিশ্বের বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ রেইন ফরেস্টের ছাউনির নিচে এ সাক্ষাৎগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রথমবার দেখা হয়েছে রানির।

তিনদিন ব্যাপী জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সাতটি ধনী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সংবর্ধনা দিয়েছেন ৯৫ বছর বয়সী ব্রিটিশ রানি। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পুত্র এবং উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস, তার স্ত্রী ক্যামিলা এবং নাতি প্রিন্স উইলিয়াম ও তার স্ত্রী কেট উইলিয়াম। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বসার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা কী নিজেদের এখানে উপভোগ করছেন? জবাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, হ্যাঁ। আমরা উপভোগ করছি।

জি-৭ এর অনুদান যথেষ্ট নয় বললেন গুতেরেস

কোভিড মোকাবিলায় যে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা জানিয়েছেলো জোট জি-৭ তা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস।  তিনি বলেন, ভয়াবহ এই সংকটে টিকার ঘাটতি দূর করা না গেলে এই ভাইরাস আরও সংক্রামক হয়ে উঠতে পারে।

দাতব্য সংস্থা অক্সফামের স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ক ব্যবস্থাপক আন্না ম্যারিয়ট জানিয়েছেন, কোভিড মোকাবিলা করতে হলে প্রয়োজন ১১’শো কোটি ডোজ টিকা। কিন্তু জি  জি-৭ নেতারা ঘোষণা করেছেন মাত্র একশ কোটি ডোজ টিকা যা কার্যকর হলে জি-৭ ব্যর্থ হবে।

টিকা নিয়ে প্রতিশ্রুতি মহাসাগরে একফোঁটা পানি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, “১০০ কোটি ডোজ কোভিড টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মহাসাগরে মাত্র একফোঁটা পানি দেওয়ার মতোই। এ দিয়ে ভারতেরই পুরো জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় আনা যাবে না, আর বাদবাকি বিশ্ব তো দূরের কথা।”

১ হাজার ১শ’ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন

দাতব্য সংস্থা অক্সফামের স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ক ব্যবস্থাপক আন্না ম্যারিয়ট টিকার একটি হিসাব দিয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর অবসান ঘটাতে বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ১শ’ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করা প্রয়োজন। সেখানে জি-৭ নেতারা মাত্র ১শ’ ডোজ টিকার ব্যবস্থা করতে পেরে থাকলে এ সম্মেলনই ব্যর্থ হবে।

এক বিশ্ব, এক স্বাস্থ্য

জি-৭ সম্মেলনে ‘এক বিশ্ব, এক স্বাস্থ্য’র ওপর গুরুত্বারোপ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, শুধু করোনাভাইরাস নয়, আগামী দিনে যে কোনও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থার সময় জি-৭ জোটকে সংঘবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। সেইসঙ্গে করোনাভাইরাস টিকা এবং প্রযুক্তি থেকে পেটেন্ট প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি। জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের ভার্চুয়াল ভাষণে সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যবান বিশ্বের কথা বলেন মোদি।

ভবিষ্যতে মহামারি রোখার জন্য গণতান্ত্রিক এবং স্বচ্ছ সমাজের বিশেষ দায়িত্বের ওপর জোর দেন মোদি। তিনি বলেন, জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের ভার্চুয়াল সেশন থেকে ‘এক বিশ্ব, এক স্বাস্থ্য’-এর বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেলও সেই একই বার্তা দেন।

চীনকে ঠেকাতে একাট্টা জি সেভেন নেতারা

‘বাজার বহির্ভুত অর্থনৈতিক চর্চা’, ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে চীনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে এবং সরবরাহ-শৃঙ্খলের শিথিলতা সমন্বয় করতে একটি অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একমত হয়েছেন জি-৭ নেতারা।

বাণিজ্য ও মানবাধিকার বিষয়ে চীনের প্রতি একটি অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ও জেন্ডার ন্যায্যতা ও সাম্য খাতে বেসরকারি খাতের মূলধন কাজে লাগাতে বি৩ডব্লিউ উদ্যোগকে ব্যবহার করবে জি-৭ এবং এর মিত্ররা।

জি-৭ নেতাদেরকে চীনের হুশিয়ারি

দলবেঁধে বিশ্ব চালানোর দিন শেষ। কয়েকটি দেশের ‘ছোট’ একটি গ্রুপ বিশ্বের ভাগ্য নির্ধারণ করবে- সেই দিন এখন আর নেই।  রোববার জি-৭ নেতাদের হুশিয়ারি দিয়ে এ মন্তব্য করেছে চীন। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৩ দিনের  জি-সেভেন সম্মেলনে শনিবার চীন বিরোধী ঐক্যের প্রতিক্রিয়ায় পরদিন লন্ডন দূতাবাস থেকেই এ বিবৃতি দিয়েছে চীন।

জি সেভেন সম্মেলনের নাম উল্লেখ না করেই দূতাবাসের এক মুখপাত্র  বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন আন্তর্জাতিক যে কোনও সিদ্ধান্ত বিশ্বের গুটিকয়েক দেশ ছোটখাট দল তৈরি করে নিয়ে ফেলত। সে দিন অনেক আগেই চলে গেছে। আমরা বিশ্বাস করি- ছোট বা বড়, শক্তিশালী বা দুর্বল, ধনী কিংবা গরীব বলে আলাদা কিছু নেই। বিশ্বে সবাই সমান। সব দেশকেই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বে বিষয়গুলো সমস্ত দেশের পরামর্শের মাধ্যমে পরিচালনা করা উচিত।’

নতুন এই চুক্তিকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর ক্ষেত্রে বড় চপোটাঘাত হিসেবে দেখছে বেইজিং। ২০১৩ সালে চীন এই বিআরআই প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং।

লাখ লাখ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি দেশ যুক্ত হয়েছে। এই বিআরআই প্রকল্পের মধ্যে রেলওয়ে, সড়ক, বন্দর, মহাসড়ক ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো রয়েছে। বিভিন্ন দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

জি-৭ সম্মেলনের মধ্যে লন্ডনে বিক্ষোভ

যুক্তরাজ্যের বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেন, ‘লন্ডনে আজ (শনিবার) ফিলিস্তিনের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে আমি অস্ত্র বিক্রি বন্ধেরও আহ্বান জানাচ্ছি। যুক্তরাজ্যের তৈরি অস্ত্র শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে। দেশের বাইরে সংঘাতে আমাদের দেশের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’

বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট জি-সেভেনের সম্মেলন চলাকালে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন যুক্তরাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। ওই সময় ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বন্ধে জি-সেভেনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বাসভবন অভিমুখে স্থানীয় সময় শনিবার বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে জায়নবাদী রাষ্ট্রটির নীতির প্রতিবাদে মিছিলে বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দেন। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে সমর্থন বন্ধে যুক্তরাজ্যসহ জি-সেভেনভুক্ত দেশের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান লন্ডনবাসী।

তথ্যসূত্র

  • এনডিটিভি
  • বিবিসি
  • বিবিসি বাংলা
  • রয়টার্স
  • এএফপি
  • হিন্দুস্তান টাইমস
  • আল-জাজিরা
  • সিএনএন
  • ডয়েচ এভেলে
  • ফক্স নিউজ