মুশফিকের চোখে জয়ের স্বপ্ন

25

লড়াই বাংলাদেশ ও ভারতের। লড়াইটা ক্রিকেটের। লড়াই মুশফিকুর রহিম-বিরাট কোহলি, তামিম ইকবাল-রোহিত শর্মা, সাকিব আল হাসান-হরভজন সিং, তাইজুল ইসলাম-রবীচন্দন অশ্বিনের। লড়াই দুই প্রতিবেশীর অস্টম টেস্টের শ্রেষ্ঠত্বের। মাঠের লড়াই, মাঠের বাইরের লড়াইয়ের রোমাঞ্চ নিয়ে জ্যৈষ্ঠের প্রখর রোদে আজ ময়দানি লড়াইয়ে নামছেন মুশফিকুর রহিম ও বিরাট কোহলিরা। কাগজে-কলমে যোজন যোজন এগিয়ে ভারত। শক্তির ফারাকটা ভালো করে জানেন ও মেনেই টাইগার অধিনায়ক অন্যরকম স্বপ্ন দেখছেন গত এক বছরের পারফরম্যান্সের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে। টাইগার অধিনায়ককে স্বপ্ন দেখানোর যে সারথী, সেই মোহাম্মদ শহীদ, তাইজুল, সাকিবদের উপর পূর্ণ আস্থা রেখে জানিয়েছেন, ভারতের ২০ উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে তার বোলারদের। অর্থাৎ একমাত্র টেস্টে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন মুশফিক। ড্র হলেও সন্তুষ্ট থাকবেন তিনি।

ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ মুখোমুখি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে। ব্যবধান বিশাল। কিন্তু ক্রিকেটপাগল বাঙালির বিশ্বাস ম্যাচটি ভারত জিতেছে আম্পায়ারের সহায়তায়। তাই প্রতিশোধের নেশায় ধিক ধিক করে জ্বলছে সবাই। কিন্তু সৌহার্দ্যের বাতাবরণে দুই দেশ যখন যুগপৎভাবে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে সামনের দিকে, তখন মাঠের বাইরের লড়াই নিয়ে মাথা ঘামাতে চাচ্ছেন না কোনো অধিনায়ক। প্রতিপক্ষের অধিনায়কের মতো মুশফিকও অতীতকে মনে রাখতে চাচ্ছেন না, ‘ওসব অতীত। আমরা এখন সামনের দিকে এগোতে চাই।’ ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেক। এরপর দুই দল খেলেছে ৭ টেস্ট। টাইগাররা হেরেছে ৬টিতে। ২০০৭ সালে ড্র টেস্টটি এসেছে বৃষ্টিভাগ্যে। এবারের আগে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামা মানেই ছিল নিশ্চিত হার। সেই ভারতের বিপক্ষেই এখন জয়ের স্বপ্ন দেখা! অক্সিজেন মাস্ক ছাড়া হিমালয় ডিঙানোর চেয়ে কোনো অংশ কম কী?

এমন স্বপ্ন দেখার রসদ কোথায় পেলেন টাইগার অধিনায়ক? গত ডিসেম্বর থেকে যে ক্রিকেট খেলছে টাইগাররা, তাতে স্বপ্ন দেখতেই পারেন। জিম্বাবুয়েকে টেস্ট ও ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং পাকিস্তানকে ওয়াডেতে হোয়াইটওয়াশ, সব মিলিয়ে সাফল্যের পারদ ঊর্ধ্বমুখী। তাই স্বপ্ন দেখছেন প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়ার, ‘ভারতের সঙ্গে আমরা সর্বশেষ যে টেস্ট সিরিজ খেলেছি, তার দুটোতেই হেরেছি। সেটা পাঁচ বছর (২০১০) আগে। বর্তমান ভারতীয় দল শক্তিশালী। আমরাও ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে উন্নতি করেছি। আমরা এখন আত্মবিশ্বাসী। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- তিন বিভাগে যদি ভালো করতে পারি, তাহলে তাদের সঙ্গে প্রতিটি বিভাগেই লড়তে পারব।’ লড়াই কিংবা জয়ের জন্য সেরাটা খেলতে হবে বলে মনে করেন মুশফিক। তবে এজন্য ব্যাটসম্যানদের ভালো করার তাগিদ দিলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘কাগজে-কলমে ভারত অনেক শক্তিশালী দল। তারপরও আমি মনে করি সিরিজে দুই দলের সম্ভাবনাই সমান। যদিও তাদের দুজন খুব ভালো স্পিনার রয়েছেন। তারপরও আমার মতে ভালো কিছু করতে হলে ব্যাটসম্যানদের ভালো করতে হবে।’

অনুশীলনে স্লিপ ফিল্ডিং করতে যেয়ে আঙুলে ব্যথা পান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইনজুরিটা এতই মারাত্মক যে, ভারত সিরিজ থেকেই ছিটকে পড়েন। তার ব্যাটিং পজিশন এখন শূন্য। সে জায়গায় ব্যাটিং করতে দেখা যেতে পারে টাইগার অধিনায়ককে, ‘রিয়াদ ভাই খেলছেন না। তাই তার জায়গা শূন্য। সে জায়গায় খেলার সম্ভাবনা আছে আমার।’ স্পিনের বিপক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারত। তারপরও ভারতের বিপক্ষে দুই বাঁ হাতি স্পিনার, একজন লেগ স্পিনার এবং একজন অফ স্পিনার নিয়ে স্কোয়াড সাজিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্ট। উইকেটের বিবেচনায় তিন স্পিনার খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল, ‘সত্যি বলতে আমরা একাদশ নিয়ে ভাবিনি। তবে এটা ঠিক খেলার মতো অবস্থায় রয়েছেন সবাই। উইকেট দেখে আমরা একাদশ ঠিক করব। কোচ বলেছেন, এই উইকেটে পেসারদের খুব ভালো করার সুযোগ নেই। আমাদের চারজন স্পিনার রয়েছেন। ভারতীয় একাদশ দেখেই আমরা ঠিক করব আমাদের কম্বিনেশন।’