প্রেমের বিয়ে টেকে না কেন?

212

বিয়ে হলো একটি বন্ধন। অথচ বর্তমান সমাজে বিবাহ ও বিচ্ছেদ যেন একই সরলরেখায় চলছে। প্রেমের বিয়ে নিয়ে সমাজে বেশ রসিকতা, কানাঘুষা চলে। প্রেমে পড়াটা সম্পূর্ণ একটা বায়োলজিক্যাল ব্যাপার। বিয়ে প্রেম করেই হোক আর পারিবারিক সম্বন্ধের মাধ্যমেই হোক— পান থেকে চুন খসলেই হলো, তা মেনে নিতে পরিবারে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। বিয়ে মানেই জীবনের নতুন রোমাঞ্চ শিহরণ ভরা রোমান্টিক ইনিংসের শুরু। তাতে নানা রকম বৈচিত্র্য থাকবেই।

প্রেমের বিয়ে হলে তো কথাই নেই। দুজনের বনিবনা না থাকলে তাঁদের চেহারার মধ্যে বিষণ্নতা–কষ্ট–অভিমান ফুটে ওঠে বেশি। তার সঙ্গে একরাশ হতাশা। প্রেম করলাম, ভালোবাসলাম, সবার মতের বিরুদ্ধে দাঁড়ালাম; তারপরও এত কষ্ট কেমন করে সওয়া যায়।

সমস্যা নিয়েই এসেছিলেন এক জুটি। যখন জানতে পারি তাঁদের প্রেমের বিয়ে; অবাক হইনি। বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলেও নিজের বা শ্বশুরবাড়ির দিকের কেউই ভালোভাবে নিতে পারেননি তাঁদের। নিজেদের বোঝাপড়ায়ও এখন কোথায় যেন চিড় ধরেছে। দুজনেই যেন নীরবে একে অপরকে বলছে, এক ছাদের নিচে থাকার চেয়ে আলাদা থাকা ভালো। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। স্ত্রীর কতই বা বয়স। এখনই চোখের নিচে ক্লান্তি আর হতাশার কালি। স্বামীও অকালে বুড়িয়ে গেছে। সামাজিক বৈরিতা ও মুখ দেখাদেখি বন্ধের নিঃশব্দ সংক্রমণ মোকাবিলা বড় কঠিন।

প্রেমের বিয়েতে মোহ কাজ করে। ভালোমন্দ, লাভক্ষতি— কোনো কিছুই চোখের সামনে দেখা দেয় না। অন্ধত্ব পেয়ে বসে। ছেলেমেয়ে দুজনেই তাদের দায়দায়িত্ব ভুলে গিয়ে ভালো লাগা নিয়েই সবকিছুতে বিভোর থাকে। পরিবার–পরিজন তখন গৌণ হয়ে যায়। বাবা-মা তখন না পেরে মুখ বন্ধ করে থাকেন। তাঁরা হাজারো ভালো পরামর্শ দিলেও সেসব ভালো লাগে না প্রেম–জুটির। শত্রুতা বাড়িয়ে লাভ কি? নিঃশব্দে সব তরফেই দূরত্ব বাড়তে থাকে।

এক দম্পতি এলেন। স্বামী–স্ত্রী দুজনেই উচ্চশিক্ষিত। পড়তে পড়তে প্রেম। তারপর পরিবারের অমতে বিয়ে। একসময় মেয়েটির খালি হাতে এক কাপড়ে শ্বশুরবাড়িতে এসে ওঠা। স্বামীর পরিবার কিছুটা অসচ্ছল। মেয়ের ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত শিক্ষিত পরিবার। মেয়ের বাবা, ভাইবোন সবাই প্রতিষ্ঠিত। মেয়েটি যখন শ্বশুরবাড়িতে গেল, কথায় কথায় শাশুড়ির মুখ ঝামটা। বউকে অকারেণ বকাঝকা করেন। নিজের ছেলেকে শিক্ষিত করেছেন বেশ কষ্ট করে। ছেলেকে এভাবে বউয়ের পেছন পেছন ঘুরতে দেখতে হবে, তিনি মেনে নিতে পারছেন না। বউ যা পারছে তা করছে কিন্তু বাড়ির মানুষদের মন ভরাতে পারছেন না। কাজের মেয়ের মতো খাটাতে না পারার কষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে। এর মধ্যে মেয়েটি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে, ‘ছেলের বউ হিসেবে কাজের বেটি খুঁজছেন, তাহলে মেইড সার্ভেন্টকে বিবাহ করান। শিক্ষিত মেয়েকে ঘরে তুলে সংসারকে নরক বানাবেন না।’ গরম কড়াইয়ে যেন জলের ছিটা পড়েছে।