ইন্টারপোলে তারেক সম্পর্কে তথ্য গোপনের অভিযোগ

36

পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল তারেক রহমানকে ওয়ান্টেড পারসন ঘোষণা করে রেড এলার্ট জারির পর, তারেক রহমান সম্পর্কে ওই সংস্থাটির কাছে তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ইন্টারপোলকে সঠিক তথ্য পাঠানো হলে সংস্থাটির বিধি অনুযায়ী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করার সুযোগ থাকেনা।

সংস্থাটির গঠনতন্ত্রের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো রাজনৈতিক, সামরিক, ধর্মীয় অথবা জাতিগত ব্যক্তিত্বের (ক্যারেকটার) ক্ষেত্রে এ সংস্থার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা কার্যক্রম চালানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।’’

অনুচ্ছেদ-৩ এর প্রথম উদ্দেশ্যই হচ্ছে কয়েকটি বিষয়ের নিরাপত্তা দেয়া। তার মধ্যে , ক. সংস্থাটির স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, যা রেজ্যুলেশন এজি-২০০৬-আরইএস-০৪ তে উল্লেখ করা আছে। খ. আন্তর্জাতিক বহিঃসমর্পন আইনের প্রতিফলন থাকা এবং গ. প্রতি ব্যক্তিকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করা।

আর এই বিধান অনুসরণ করা হলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিস জারি করতে পারেনা।

কারণ, তারেক রহমান একজন রাজনীতিক। বাংলাদেশের বৃহত রাজনৈতিক দল বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরও পুত্র।

অপরদিকে ইন্টারপোলের এ ধরনের রেড এলার্ট সাধারণত পলাতক আসামিদের ক্ষেত্রে জারি করা হয়। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে গিয়ে দেশ বিদেশ পালিয়ে বেড়ায়।

রেড এলার্টের মাধ্যমে ইন্টারপোলের ১৯০টি সদস্য দেশকে জানানো হয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করতে কোনো সদস্য রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ইন্টারপোল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় ও অবস্থান নিশ্চিত করতে সদস্য দেশগুলোর পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করে। যাতে এক দেশের সরকার অপর দেশের সরকারের কাছে অপরাধীকে গ্রেফতার ও প্রত্যর্পণে ব্যবস্থা নিতে পারে।

তারেক রহমানের দল বিএনপির দাবি, তারেক রহমান কোনোভাবেই পলাতক নন। তিনি সম্পূর্ণ বৈধভাবেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। তার অবস্থানও সুস্পষ্ট। তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। আর লন্ডনে তারেক রহমান পলাতক জীবন-যাপনও করছেন না। লন্ডনে তিনি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে যোগ দিয়ে বক্তৃতা করছেন। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও লন্ডনে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দিয়েছেন। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আগেও নিয়মিত বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তার বক্তৃতা- বিবৃতি প্রচারিত হতো।

এমনকি গতকাল মঙ্গলবার (যেদিন এই রেড এলার্টের খবর প্রকাশিত হয়েছে) সকাল ১০টা ৫৬ মিনিটে ট্রেনে করে লন্ডন থেকে রওয়ানা হয়ে ২টা ৫ মিনিটে বেলজিয়ামে পৌঁছান তারেক রহমান।

সেখানে তিনি অন্যন্যা দেশ থেকে আগত রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি বেলজিয়াম বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ৬টা ৫৬ মিনিটে তিনি পুনরায় ট্রেনযোগে বেলজিয়াম ত্যাগ করে রাতে লন্ডন পৌঁছান।

তারেক রহমানের এসব কার্যক্রম সবই হচ্ছে প্রকাশ্যে।

এমনকি তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন, সেই দেশের প্রায় অর্ধশতাধিক এমপির সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক রয়েছে এবং নিয়মিত যোগযোগও হচ্ছে। লন্ডনে অবস্থানরত বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থার লোকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি নিয়মিত বৈঠক করছেন। যা একজন পলাতক আসামির পক্ষে করা কখনো সম্ভব নয়।

প্রশ্ন উঠেছে, যদি সরকার ইন্টারপোলের কাছে তারেক রহমান সম্পর্কে যথাযথভাবে তথ্য সরবরাহ করে থাকে তাহলে সংস্থাটি কিভাবে এই রেড এলার্ট জারি করলো। এতে বোঝা যায় সরকার ইন্টারপোলকে তারেক রহমান সম্পর্কে পুরোপুরি সঠিক তথ্য দেয়নি। তথ্য গোপন করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইন্টারপোল কখনো কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে না। এক্ষেত্রে সরকার তারেক রহমান সম্পর্কে ইন্টারপোলে তথ্য গোপন করে তার বিরুদ্ধে রেড এলার্ট জারি করিয়েছে ।

বিএনপির দাবি অনুযায়ী, ইন্টারপোল রেড এলার্ট জারি করে ওই সব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যারা পলাতক। যাদের বিরুদ্ধে নিজ দেশে পরোয়ানা জারি হয়েছে কিন্তু তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না বা অন্য কোনো দেশে আত্মগোপনে থাকে। এক্ষেত্রে তারেক রহমানের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। তারেক রহমান কোনো পলাতক আসামি নন। তিনি চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন। যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দিয়েছে।

তারেক রহমান এদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বড় ছেলে এবং জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তার এই পারিবারিক ও রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড গোপন রেখে সরকার ইন্টারপোলকে তথ্য প্রদান করেছে বলেও মনে করছে বিএনপি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমেদ শীর্ষ নিউজকে বলেন, তারেক রহমান চিকিৎসা নিতে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন। তারেক রহমানকে পলাতক দেখিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এটা ঠিক না।

ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আমরা তিন-চার মাস আগেই ইন্টারপোলে রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) পাঠিয়েছিলাম।’

ইন্টারপোলের গঠনতন্ত্রের তিন নম্বর অনুচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিবির প্রধান মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘ইন্টারপোল যাচাই-বাছাই করে, সবকিছু ক্লিয়ার (স্পষ্ট) পেয়ে, তারপরই নোটিশ জারি করে। এটা তাদের এখতিয়ার। তাদের নিজস্ব লিগ্যাল অ্যাডভাইজার বডি (আইনি পরামর্শ শাখা) আছে, তারা যাচাই বাছাই করেই কারো বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে। এটা শুধু তারেক রহমানের ক্ষেত্রে নয়, সবার ক্ষেত্রেই এটা করা হয়।’

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গেনেড হামলা, মানি লন্ডারিং, রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। তবে ইন্টারপোলের নোটিসে শুধু আওয়ামী লীগের জনসভায় হ্যান্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ও হত্যা মামলার অভিযোগের কথা বলা হয়েছে।