অবশেষে দপ্তরবিহীন আশরাফ, এলজিআরডি মন্ত্রী মোশাররফ

49

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। আর এলজিআরডি মন্ত্রী করা হয়েছে খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। একই সঙ্গে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বেও থাকবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬ এর রুল ৩(৪)-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে দুই মন্ত্রীর দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করেছেন।
এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বাক্ষরিত আদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এর আগে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বাদ পড়েন। তবে তাঁর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি।
গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুপস্থিত থাকায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন উঠে। তবে ওই দিন সন্ধ্যায় নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ শহরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইফতারে অংশ নেওয়ার সময় তিনি বিষয়টিকে গুজব বলে অভিহিত করেন। আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও জানানো হয়, সরকারের পক্ষ থেকে তারা এমন কোনো সংকেত পায়নি।

কয়েক দিন ধরে মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে সরকারি দলের মধ্যে আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে সৈয়দ আশরাফকে অপসারণ বা তাঁর সরে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। একনেক সভায় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মন্ত্রীদের অনেকেই ধারণা প্রকাশ করেন, তাঁকে অপসারণের সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে। একনেক সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে একান্তে কথা বলায় গুঞ্জন আরও জোরদার হয়। তবে মন্ত্রিসভায় রদবদল ও দপ্তর বণ্টনের দাপ্তরিক কাজ করা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো নির্দেশনা নেই।’

সেই দিন একনেক সভায় উত্থাপনের জন্য আটটি প্রকল্প তালিকায় প্রথমেই ছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’। পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ সভার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরপরই প্রথম প্রকল্প হিসেবে এ প্রকল্প পাসের জন্য ওঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এ এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী প্রকল্পটির বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কেউই উপস্থিত ছিলেন না।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তখন বলেন, ছয় হাজার কোটি টাকার এত বড় প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দুজন মন্ত্রী রয়েছেন, একজনও আসেননি। তাই এ প্রকল্প একনেক সভা থেকে প্রত্যাহার করা হোক। তাঁদের মতামত নিয়ে প্রকল্পটি পাস করা দরকার। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, মনে করেন আমিই মন্ত্রী। প্রকল্পটা প্রত্যাহার করবেন না।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঠিক আছে, উনি যখন মিটিংয়ে আসেন না, আমি উনাকে সরিয়ে (চেঞ্জ করে) দিচ্ছি। এখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আছেন, আজকেই চেঞ্জ করতে বলব।’ এরপর একনেক সভার নিয়মিত কার্যক্রম চলতে থাকে। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন।

সূত্রঃ প্রথমআলো