ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা নেই দেশে

44

ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করার ব্যবস্থা নেই দেশে। ফলে দেশে বিভিন্ন সময় অনুভূত হওয়া ভূমিকম্প কী মাত্রায় আঘাত হেনেছে সে তথ্য জানাতে পারে না আবহাওয়া অধিদফতর। পরিবর্তে উৎপত্তিস্থলে কতো মাত্রায় ভূকম্পন তৈরি হয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকে আবহাওয়া অধিদফতর।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ভূমিকম্প মাপার যন্ত্র রয়েছে দেশের ৪টি আবহাওয়া অফিস- ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও রংপুরে। তবে এসব স্থান থেকে তারা ভূকম্পনের পরপরই তথ্য জানাতে পারে না প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করা হয় সাধারণত দুইভাবে- উৎপত্তির সময় এর মাত্রা এবং পরবর্তীতে অনুভূত হওয়ার পরিমাণ। এক্ষেত্রে যারা ভূমিকম্প অনুভব করেন তাদের সাথে কথা বলে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় কী পরিমান ভূকম্প অনুভূত হয়েছে। অবৈজ্ঞানিক হওয়ায় দ্বিতীয় ব্যবস্থায় দেশে ভূমিকম্প মাপা হয় না।

উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পের মাত্রা জানা যায় সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে। তবে সেই ভূমিকম্পের মাত্রা বাংলাদেশে এসে কী মাত্রায় অনুভূত হচ্ছে তা জানাতে পারে না আবহাওয়া অধিদফতর।

গত শনিবার ৭ দশমিক ৯ মাত্রায় ভুকম্পন হয়েছে নেপালসহ বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। রোববার দুপরে আবার ৬ দশমিক ৬ তীব্রতার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও নেপালে।

গত শনিবার নেপালে সৃষ্ট ভূমিকম্প এ অঞ্চলে বড়সড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের গবেষকেরা দাবি করেছেন। তারা বলছেন, এ অঞ্চলে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রজার বিলহাম সতর্ক করে বলেছেন, শনিবারের ভূমিকম্প আরও বড় কোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও হতে পারে। এমনকি এই ভূমিকম্পের পরাঘাত আগামী দুই মাস পর্যন্ত যেকোনো সময় আসতে পারে।

ভারতের বিশেষজ্ঞদের বরাতে দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ৮০ বছরের মধ্যে নেপালে গতকালের ভূমিকম্পই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। কিন্তু গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই এলাকায় এর চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকম্পের হতে পারে।

বাংলাদেশেও এমন গবেষকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের কাজে লাগাতে পারে না আবহাওয়া অধিদফতর।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আবহাওয়া অধিদফতরে পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, ‘সেন্টারের (কেন্দ্রস্থল) মাপটাই আমরা বলি। তবে ক্রমান্বয়ে কম্পন যত দূরে যাবে মাত্রা তত কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক। সারা দেশেই কম্পন অনুভূত হয়েছে, কম্পনটা বেশ বড় হয়েছে।’

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জাগোনিউজকে বলেন, আমরা তিনটি বিষয় বিবেচনা করে ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করি। যা অন্য যে কোনো দেশের থেকে বিশেষ আলাদা হয় না। সিসমোগ্রাফের মাধ্যমে ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপের কথা বললেও এ ব্যবস্থায় দ্রুত জানানো যায় না।

তিনি আরও জানান, পৃথিবীর কোনো দেশই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে না। তবে অনেক উন্নত দেশে ভূকম্প সম্পর্কে নিরবিচ্ছিন্ন গবেষণার ভিত্তিতে অনুমেয় আভাস দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে এমন সিস্টেম এখনো চালু করা সম্ভব হয় নি আর্থিক, যান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে।