বাংলাদেশে মীরজাফরের জায়গা শ্রীনির দখলে

13

‘বাংলাদেশে লোককে গালাগাল দিলে একটা সময় মীরজাফরের নাম উঠত। এখন ১৭৫৭ উধাও। নতুন নাম পাওয়া গেছে ২০১৫-তে। শ্রীনি। কারো ওপর কেউ প্রচণ্ড রেগে গেলে বা কারো সঙ্গে ঝগড়া হলে আমাদের দেশে লোকে এখন বলে, তুই ব্যাটা শ্রীনি। একদম কথা বলিস না।’

ভারতে আইপিএল খেলা দেখতে গিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ও আইসিসির চেয়ারম্যান নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের এভাবেই কঠোর সমালোচনা করেছেন সংস্থার সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই’র আমন্ত্রণে স্বপরিবারে ভারত রয়েছেন মুস্তফা কামাল দেশটিতে গেছেন।

সেখানে কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুস্তফা কামাল আইসিসির চেয়ারম্যান নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের এমন সমালোচনা করেন।

বিশ্বকাপ ফাইনালের দুই মাস বাদেও যেন তাকে ক্ষমা করতে পারেননি পদত্যাগ করে নজির গড়া প্রাক্তন আইসিসি সভাপতি।

মুস্তফা কামালের কাছে প্রশ্ন ছিল- শোনা যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের একাংশের মধ্যে তীব্র ভীতি রয়েছে যে, আসন্ন বাংলাদেশ সফরে তাদের উত্তেজিত গণসমর্থনের বিরুদ্ধে পড়তে হতে পারে। সোজা কথায়, তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোথা থেকে শুনছেন এসব কথা। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ঠিক উল্টো, গোটা বাংলাদেশ ভারতীয় ক্রিকেটারদের স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষায় আছে। ভারত এলে একটা দারুণ এক্সাইটমেন্ট হবে। ক্রিকেট উৎসবের চেহারা নেবে।’

কিন্তু বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের পর যেভাবে বাংলাদেশে ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট আছড়ে পড়েছে এবং তারও আগে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্লগার অভিজিৎ রায় খুন হওয়াতেই নাকি ক্রিকেটাররা এত উদ্বিগ্ন। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তাদের কারো কারো দুর্ভাবনা, আবার ক্রিকেট ঘিরে এমন উত্তেজক কিছু ঘটে না তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিন্দুমাত্র কোনো আশঙ্কা নেই। বরঞ্চ গোটা দেশ উদ্বেল হয়ে ভারতীয় সিরিজের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে হাজির থাকবেন ওয়ানডে দেখতে। জাগমোহন ডালমিয়াকে কাল দেখা করে আমরা বিশেষ আমন্ত্রণ জানাব অন্তত এক দিনের জন্যেও আসার জন্য। ডালমিয়া হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের গডফাদার। ওর জন্যই আমরা টেস্ট স্টেটাস পাই। সেই ঋণ বাংলাদেশ ভোলেনি।’

এরপর প্রশ্ন করা হয়, সে তো শ্রীনিবাসনও বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করেছেন বলে শোনা যায়। উনি না থাকলে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পেতো না।

জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘একদম বাজে কথ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোথায় হবে, উনি আসার আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল।’

আপনি ছিলেন আইসিসি প্রেসিডেন্ট। শ্রীনি চেয়ারম্যান। পদে বসার পরপর আপনি প্রচুর প্রশংসা করতেন শ্রীনির- প্রতিবেদকের এমন মন্তব্যের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘হ্যাঁ করতাম। তখনো জানতাম না ওর বাড়ির লোকেরা এইভাবে বেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। জানতাম না ক্রিকেট প্রসারের নামে উনি এতটা বেনিয়া। আইসিসিতে পরবর্তীকালে ওর হাবভাব দেখে আমার মনে হতো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আবার ফেরত এল নাকি?’

তিনি বলেন, ‘খালি ধান্দা টাকা রোজগারের আর নিজের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার। কোথায় ক্রিকেটের বিশ্বায়ন হবে, তা নয়। আইসিসি পরের বিশ্বকাপে টিমের সংখ্যা ১৪ থেকে ১০-এ নামিয়ে আনছে। খালি বলে টাকা, টাকা। কোথা থেকে কত রোজগার হবে। আরে, কোথাও তো ব্যাট আর বলের কথাটা বল।’

বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ভারত হারানোর পর আপনি যেসব কথা বলেছিলেন, অনেকের মতে উত্তেজনা তাতেই বাড়ে- এমন প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘একটা কথা ভাল করে বুঝুন। আমি কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে বলিনি। আমি একটা লোকের বিরুদ্ধে বলেছিলাম। আইসিসির প্রেসিডেন্ট ছিলাম আমি। উনি চেয়ারম্যান। অপারেশনের দায়িত্ব ওর হাতে। মেলবোর্নে সেদিন উনি আমাদের ম্যাচে স্পাইক্যাম কেন রাখেননি বলতে পারেন? কেন টিভি রিপ্লের বেছে বেছে সেদিনই ব্যবস্থা করা হয়নি?’

তিনি বলেন, ‘মাহমুদুল্লাহর ক্যাচটা তো লাইনের বাইরে থেকে ধরা। অথচ টিভিতে দেখায়ইনি। স্কোরবোর্ডের ওপরে যে দেখাচ্ছিল ইন্ডিয়া জিতেগা জিতেগা, এটা কী? এটা তো আইসিসির স্পেস। সেখানে একটা টিমের প্রতি এমন পক্ষপাত দেখানো হবে কেন? এগুলো সব শ্রীনির কীর্তি। ফেয়ার প্লে-তে এই লোকটা বিশ্বাসই করে না।’

এমসিজির ফাইনালে আপনাকে আইসিসি প্রেসিডেন্ট হয়েও পুরস্কার দিতে দেওয়া হয়নি। তখন আপনি বলেছিলেন আইসিসির বিরুদ্ধে মামলা করবেন। করেননি। বরঞ্চ পদে ইস্তফা দিয়ে দেন। কেন?

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘পরে ভেবে দেখি সেটা করাটা খুব অনুচিত কাজ হবে। ইনস্টিটিউশনের একটা লোক পঁচা। তা বলে প্রতিষ্ঠানটা তো নয়। এই লোকটার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখায়নি। আমি দেখাই।’

শ্রীনি ভারতীয় বোর্ডের দায়িত্বে থাকলে কিন্তু বাংলাদেশ সফর হতই না। উত্তরে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘জানি তো। গোটা বাংলাদেশ খুব খুশি যে ভারতীয় বোর্ড থেকে ওকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশ শ্রীনির ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত। আজ রাতের প্লে-অফে আমার গোটা দেশ আরসিবিকে সাপোর্ট করবে। স্রেফ শ্রীনির জন্য কেউ সিএসকে-কে দেখতে পারে না। এই একটা মানুষ বাংলাদেশে ভারতের ভাবমূর্তিতে কাদা ছেটাচ্ছে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকাপের পর আমার সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কারণ একে তো উনি অসম্ভব ক্রিকেট ভক্ত। একেবারে প্রথম বল থেকে খেলা দেখেন। তার ওপর উনার মন্ত্রিসভার সদস্য আমি। আমার সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করা হয়েছে। তাই উনি চুপ করে থাকেননি।’

আপনার দাবি এখন সেই বিশ্বকাপ সময়ের উত্তেজনাটা নেই? ধোনি বা কোহলির ভারত— কারো কোনো অসুবিধে হবে না? এমন প্রশ্নে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘একেবারেই না। আমি তো ইন্ডিয়ান টিমের সম্মানে ডিনার দেব ঠিক করেছি। দারুণ সংবর্ধনা পাবে ওরা এলে। তার আগে অবশ্য নরেন্দ্র মোদি আসছেন। ওকেও নজিরবিহীন সংবর্ধনা দেব আমরা। তবে ওই একটা লোককে বাংলাদেশ ক্ষমা করতে পারবে না।’

এরপর প্রশ্ন করা হয়- নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন? উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ইয়েস। বাংলাদেশে লোককে গালাগাল দিলে একটা সময় মীরজাফরের নাম উঠত। এখন ১৭৫৭ উধাও। নতুন নাম পাওয়া গেছে ২০১৫-তে। শ্রীনি। কারো ওপর কেউ প্রচণ্ড রেগে গেলে বা কারো সঙ্গে ঝগড়া হলে আমাদের দেশে লোকে এখন বলে, তুই ব্যাটা শ্রীনি। একদম কথা বলিস না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here