বাংলাদেশের সংকটে করণীয় নিয়ে স্বাধীনতা দিবসেই বসছে ইইউ

10

ঢাকা: বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিপূর্বে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অব্যাহত এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে করণীয় ঠিক করতে বৈঠকে বসছে ইইউ’র মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটি। এই বৈঠক থেকেই বাংলাদেশ বিষয়ে জাতিসংঘকেও পরামর্শ দেয়া হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

আগামী ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে ব্রাসেলসে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতিসংঘও পর্যন্ত এ বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানা গেছে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের চলমান সংকট, মানবাধিকার পরিস্থিতি, বাকস্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যত সম্পর্কে করণীয় ঠিক করতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে বিনাবিচারে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে যে হত্যার অভিযোগ দেশটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে তা বন্ধে করণীয় নিয়েও সম্ভাব্য ওই বৈঠকে আলোচনা হবে।

২৬ মার্চ তারিখের বৈঠকে ৬টি এজেন্ডা থাকছে। বৈঠকে বাংলাদেশে সম্প্রতি সফর করে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির (ড্রই ডেলিগেশন) রিপোর্ট উপস্থাপন করা হবে।

বৈঠকে বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থার বিষয়ে সরেজমিন অভিজ্ঞতা, পর্যালোচনা এবং তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন তুলে ধরবেন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়া ক্রিস্টিয়ান ড্যান প্রিদা।

এবারের বৈঠকে শুধু বাংলাদেশ প্রসঙ্গই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি সার্কভুক্ত দেশ নেপালের পরিস্থিতি নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট উপস্থাপন করা হবে। তবে নেপাল নিয়ে কোন পর্যালোচনা হবে না বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

গত ১৬ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করে গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির একটি প্রতিনিধি দল।

সফর শেষে মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাসেলসে একটি বৈঠক হয়। কিন্তু বিশেষ কোন অবস্থায় পৌঁছাতে পারে নি তারা। পরবর্তীতে গত ১২ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একটা সন্তোষজনক সমাধানের দিকে এগোনোর জন্যই বৈঠকটি করতে অনেকটা সময় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্নভাবে আরো তথ্য সংগ্রহ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এর বাইরেও ঢাকাস্থ বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতরা দফায় দফায় বৈঠক করেছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, স্টেক হোল্ডার, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে। তাদের মতামত ও পরামর্শ পাঠিয়ে দিয়েছে নিজ নিজ রাষ্ট্রে।

সব তথ্য একত্রিত করেই মূলত বৈঠকে আলোচনা হবে। এরসঙ্গে যুক্ত হবে ঢাকার সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বাংলাদেশ সফরে আসা ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রতিটি সদস্যও বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। এসময় আলোচিত হবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বক্তব্য। পাশাপাশি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে সংকট সমাধানে সুশীল সমাজ ও কূটনীতিকদের পরামর্শ।

ঢাকা সফরকালে ১৯ ফেব্রুয়ারি ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান ক্রিস্টিয়ান ড্যান প্রিদা বলেছিলেন, ‘মানবাধিকারের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণেই তারা বাংলাদেশে এসেছেন।’

নিখোঁজ ও বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সফর শেষে ইইউ দলটি বলেছে, শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য বাকস্বাধীনতা, রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।

গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে যেকোন পরিস্থিতেই মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরোধীতা করে তাদের আগের অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে দলটি।

ওই প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন- ক্যারোল কারস্কি, ইলিনা ভেলেন্সিয়ানো ও জোসেফ ওয়াইডেনজার। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুও।

ইইউ প্রতিনিধি দল বলেছিলেন, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে পৌঁছাতে হলে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য প্রতিনিধি দলটি বৈঠক করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে।

সফরকালে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, পরিবেশবিদ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, স্পিকার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

সহিংসতা বন্ধে সরকার ও বিরোধীদলকে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক মহল ও সুশীল সমাজের পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে।

ওই সময় বাংলাদেশে নিখোঁজ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল।