নতুন বছরে প্রথম স্কুল

1103

নতুন বছর, নতুন সময়, জীবনের আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়া, এই এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়েই ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের নতুন ক্লাসে, নতুন উৎসাহ নিয়ে পড়ালেখা শুরু করে। নতুন ড্রেস, বই, খাতা, ব্যাগ সবই তাদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে কাজ করে। এ সময় অনেক শিশুর জীবনের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। আগে থেকেই কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে শিশুকে স্কুলে পাঠানো নিয়ে আর সমস্যায় পড়তে হবে না।

• নতুন পরিবেশে সন্তান যেন নিজেকে অসহায় ভাবতে শুরু না করে, এ জন্য অভিভাবকদের সচেষ্ট থাকতে হবে। স্কুলে যাওয়ার আগে থেকেই শিশুকে স্কুলের পরিবেশ, পড়াশোনা, শিক্ষক, ক্লাসরুমে করণীয় বিষয়ে ধারণা দিতে পারেন খেলার ছলে।

• শিশুকে ঘরে নিয়মিত বইখাতা দিয়ে পড়তে বসান। পড়ার সময়টা নির্দিষ্ট করে দেবেন। কারণ, লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি তার মধ্যে সময়ানুবর্তিতা ও পুরো মনোযোগ দিয়ে পড়ার মানসিকতা গড়ে তোলা জরুরি।

• লেখাপড়া শেষে প্রতিদিন যেন শিশু নিজের বইখাতা গুছিয়ে রাখে সাথে সাথে সেটাও তাকে শেখাবেন।

• প্রথম থেকেই তাকে স্কুল সম্পর্কে ধারণা দেবেন। যেমন স্কুলে কী কী হয়, স্কুলে ভর্তি হলে সে কী কী শিখবে তার অনেক বন্ধু হবে ইত্যাদি কথা বলে তাকে স্কুলের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে।

• শিশুকে সম্ভব হলে আশপাশের স্কুলে নিয়ে যাবেন। সেখানে তাকে স্কুল কী, কেন স্কুলে আসে শিশুরা এখানে কী কী মজা হয় সেগুলো তাকে বলবেন এবং অন্য শিশুরা যে স্কুলে আসে সেটা দেখিয়ে তাকে সাহস দেবেন।

• আপনার শিশুকে অন্য শিশুদের সাথে মিশতে দিন, তাকে নিয়ে বাইরে যান। অন্যদের সাথে মিশলে শিশুর জড়তা কাটবে। কিছুক্ষণ শিশুকে একা একা থাকতে দিন। সময় সময় সে যেন সৃজনশীল কিছু করতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিন। শিশুকে লেখাপড়া, কবিতা, ছড়া, ছবি আঁকা, গান করা কিছুটা হলেও শেখাবেন। এতে শিশুর মনোবল বাড়বে। কারণ অনেক শিশু স্কুলে গিয়ে যখন দেখে সে কোনো কিছুই পারছে না তখন ভয়ের জন্যও স্কুলে যেতে চায় না।

• স্কুলশিক্ষক সম্পর্কেও শিশুকে পজিটিভ ধারণা দেবেন। শিক্ষকেরা যে শিশুদের স্নেহ করবেন এবং লেখাপড়া শেখাবেন সেটা তাদের বোঝাবেন। শুধু তাই নয়, যেকোনো সমস্যায় শিক্ষকই যে তাকে প্রথম সহযোগিতা করবেন এবং শিক্ষকের কাছেই সহযোগিতা চাইতে হবে, সে বিষয়টাও তাকে জানিয়ে রাখবেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুকে স্কুলের নিয়মশৃঙ্খলার বিষয়েও ধারণা দেবেন এবং সেগুলো যে মানতে হবে, সেটাও তাদের বুঝিয়ে দেবেন, তাহলে তাদের জন্য স্কুলে খাপ খাইয়ে নেয়া সহজ হবে।

• শিশুকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে তাকে সাথে নিয়ে বই, খাতা, ব্যাগ কিনতে যাওয়া যেতে পারে। কেনার সময় শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দিন। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর শিশুকে উৎসাহিত করুন অন্য শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে।

• স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর শিশুকে লেখাপড়ার জন্য কখনো অতিরিক্ত চাপ দেবেন না। এতে শিশুর পড়াভীতি সৃষ্টি হতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় খেলার ছলে শিশুকে পড়ান। তার সব সফলতার জন্য তার প্রশংসা করুন। মাঝে মাঝে তাকে পুরস্কৃত করুন।

• কখনো বকাঝকা বা মারধর করতে যাবেন না এতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে।

• যেকোনো সমস্যায় নিজেই স্কুলের শিক্ষকের সাথে কথা বলুন।

• আপনার সন্তানের কোনো মানসিক বা স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে তা শিক্ষককে জানিয়ে রাখুন।

• স্কুলে কী পড়া হচ্ছে। হোমওয়ার্ক আছে কি না সেগুলো প্রতিদিন চেক করুন। শিশুকে হোমওয়ার্ক করতে সাহায্য করুন। কিন্তু নিজে কখনো শিশুর হোমওয়ার্ক করে দেবেন না। এতে শিশু নিজের কাজের গুরুত্ব বুঝতে পারবে না।

• শিশুকে শেখাবেন যেন অপরিচিত কারো সাথে কখনো স্কুল থেকে বের না হয়। সামান্য অসতর্কতার কারণে বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অভিভাবকদের সচেতনতা, স্নেহ ও ধৈর্যই শিশুকে স্কুলে এবং পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে।