ও খালা, একটু পানি খাওয়াও নাহ

33

শিশু সামিউল ইসলাম রাজনকে পানি পান করাতে গ্লাসভর্তি পানি নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আছমা বেগম। তখন নির্যাকারীদের অন্যতম কামরুল তাকে বলেন, ‘তোর দুঃখ লাগি গেছেনি! ভাইয়াপ মারাইসনা। যা এখান থেকে।’

সোমবার (১৩ জুলাই) দুপুরে রাজনকে নির্যাতনের ঘটনাস্থল কুমারগাঁওয়ে সরেজমিন পরিদর্শনকালে কথা হয় আছমা বেগমের সাথে।

এখনও ক্ষোভ বিরাজ করছে আছমা বেগমের বুকে। বর্বর নির্যাতনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। যেখানে রাজনকে নির্যাতন করা হয়েছিল, সেই গ্যারেজের পাশেই একটি ঝুঁপড়িঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন তিনি।

আছমা বেগম বলেন, স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজে ভোরেই বেরিয়ে গেছেন। আমি বাসায় বাসায় ঝিয়ের কাজ করি। এদিনও সকালে উঠে কাজে যাচ্ছিলাম। তখন দেখতে পাই, কামরুল আর চৌকিদার ময়নাসহ ৫/৬ জন মিলে গ্যারেজের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে বাচ্চাটারে।

তিনি বলেন, বাচ্চাটা আমায় দেখে খালা ডেকে বলে- ও খালা, একটু পানি খাওয়াও নাহ। তখন আমি গ্লাসে করে পানি নিয়ে যাই। কিন্তু কামরুল আমায় লাঠি দেখিয়ে বলে, ‘ভাইয়াপ মারাইসনা, যা এখান থেকে।’

এরপর আমার হাতের গ্লাস ছুড়ে ফেলে দেয়। বাচ্চাটারে নির্যাতনের খবর বিভিন্ন লোকজন ও পথচারীদের জানাই। কিন্তু ওরে বাঁচাতে কেউই এগিয়ে আসেনি।

ঘটনাটির বর্ণনা পুলিশকেও দিয়েছেন উল্লেখ করে আছমা বেগম বলেন, আমারে মারে, মেরে ফেলুক। কিন্তু যা দেখেছি, তা পুলিশকেও বলেছি। হতে পারতো এই শিশুটি আমারই সন্তান।

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাটও। এলাকার লোকজনের সঙ্গেই কথা বলে জানা যায়, আতঙ্কে অনেকেই ওই এলাকা ত্যাগ করেছেন।

সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চোর সন্দেহে ১৩ বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে গত বুধবার (০৯ জুলাই) নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।

হত্যার পর ওইদিন দুপুরে একটি মাইক্রোবাসে করে (ঢাকা মেট্রো-চ-৫৪-০৫১৬) তার মরদেহ গুম করার চেষ্টা হয়। এ সময় শহরতলীর কুমারগাঁও এলাকা থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় মুহিত আলমকে আটক করে জালালাবাদ থানা পুলিশ।

সোমবার (১৩ জুলাই) মুহিত আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিলেটের মহানগর হাকিম আদালত-২ -এর বিচারক ফারহানা ইয়াসমিন।

এর আগে আটকের পর মুহিত পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দিতে রাজন হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। নির্যাতনকারীরাই শিশুটিকে পেটানোর ভিডিও ধারণ করেন এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন। ২৮ মিনিটের ওই ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়।