মানুষ কেন ধর্ষণের ভিডিও দেখে?

39

নৃশংস এবং মর্মস্পর্শী ঘটনা কি কখনো কারো বিনোদনের উপাদান হতে পারে? ভারতের ব্যাঙ্গালোরে সাম্প্রতি গ্যাং রেপের ঘটনার ভিডিও এমন তথ্যই প্রকাশ করছে। এক নারীকে পাঁচ নরপশু পালাক্রমে ধর্ষণের সময় প্রত্যেকে ক্যামেরায় হাস্যোজ্জ্বল মুখে ছবি তুলেছে। এ ধরনের নিষ্ঠুর ঘটনাও মানুষের বিনোদনের কারণ হয়ে ওঠে। এর পেছনের মনোবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অনেকে ইন্টারনেটে কুরুচিপূর্ণ এবং ভয়ংকর পর্নোগ্রাফি দেখেন। এমন রুচি তাদের এ ধরনের কাজে উৎসাহ জোগায়। ইন্টারনেটে এমন এক অংশ রয়েছে যাকে ‘ডিপ ওয়েব’ বলে। সাধারণ সার্চের মাধ্যমে এ অংশের কোনো কিছুর দেখা পাওয়া যায় না। এখানে মানুষের বর্বরতম আচরণ উঠে আসে।

বিশাল দর্শক শ্রেণি :
গত সপ্তাহে কৌশিক কুনার নামে ২৬ বছর বয়সী এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে ভারতের সিবিআই। তার কাছে এ ধরনের ৪৫০টি ভিডিও রয়েছে। অ্যান্টি-ট্রাফিকিং অ্যাকটিভিস্ট সুনিথা কৃষ্ণান এসব ধর্ষকদের বিরুদ্ধে অনলাইনে ‘শেম দ্য রেপিস্ট’ নামে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেন। তার প্রচেষ্টাতেই হোয়াটসঅ্যাপে দেখা যায় ৫ তরুণ এক নারীকে ধর্ষণ করছেন।

ওই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমেই জানানো হয়, মূলত এ ধরনের ভিডিও একই রুচির মানুষদের জন্যেই ইন্টারনেটে ছাড়া হয়। এসব বর্বর ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় বিনোদন হিসেবে যারা তুলে দিচ্ছে তাদেরও রুখে দেওয়া উচিত। ধর্ষকরা বটেই, যারা ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের মধ্যে ‘আমার কিছুই হবে না’ ধরনের মানসিকতা কাজ করে। এ ধরনের কাজ এই বিশাল সমাজ এবং আইনের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা প্রমাণ করে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন পর্ন সাইটের দর্শকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতীয়রা। তারা বিশ্বের ৪০ শতাংশ পর্ন সাইটে ১৪.২ বিলিয়ন ভিজিট রয়েছে ভারতের।

যৌনতা আলোচনার বিষয় নয় :
মনোবিজ্ঞানী ড. নিমেশ দেশাই জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো বেদনাদায়ক ঘটনা নিজের বা কাছের কারো জীবনে না ঘটছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটা তেমন কিছু নয়- বিষয়টি মানুষের সাধারণ মানসিকতার মধ্যে পড়ে। এ ক্ষেত্রে মানুষ আবেগ বা বিবেকবর্জিত হয়ে অন্যের ভিডিও দেখে যায়। তা ছাড়া এসব ভয়ংকর যৌন আচরণ অন্যের কাছে অস্বাভাবিক আগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ড. নিমেশ আরো বলেন, আমাদের সমাজে যৌনতা এমন এক বিষয় যা আলোচনার বাইরে থাকবে। কাজেই এর প্রতি বিশেষ আগ্রহ জন্মে। তাই বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি যৌনবিষয়ক শিক্ষা মানুষ অর্জন করতে পারে, তবে তা জীবনের সাধারণ ঘটনা হিসাবে মনে করবে তারা। তবে ইন্টারনেটে এসব বর্বর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি আরো ঘোলাটে হয়েছে।

খুব বেশি সহজলভ্য :
ইন্টারনেটে পর্ন ছবির পরিমাণ বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গেছে। অপরিপক্ক ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে মারাত্মক সব যৌন আচরণ হাই ডেফিনেশন ভিডিও আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ পর্ন ছবির সাইটের সঙ্গে এসব মারাত্মক পর্ন ছবি বহুদিন ধরে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে আছে। এর ব্যাপ্তি বেড়েই চলেছে। যতদিন এগুলো থাকবে, কুরুচিপূর্ণ মানুষরা ততদিন এর মধ্যে বিনোদন খুঁজে নেবে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস