নাক ডাকা : সাইলেন্ট কিলার

68

মাস ছ’য়েক আগের ঘটনা৷ অন্যান্য দিনের মতো সবার সঙ্গে কথাটথা বলে রাতে আর পাঁচটা দিনের মতোই শুতে গিয়েছিলেন বছর বাহান্নর ভদ্রলোক৷ কিন্তু পরের দিন আর ঘুম থেকে ওঠেননি৷

চিকিৎসক জানান, হৃদযন্ত্র আচমকা বিকল হয়ে যাওয়ার ফলেই এই বিপত্তি ঘটেছে৷ তবে শহর কলকাতায় এই ধরনের ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়৷ প্রত্যেক বছর শহরে এমন মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে৷

কান-নাক-গলা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে রাতে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার বদঅভ্যাস৷ ঘুমের মধ্যে আচমকা থমকে যায় হৃদযন্ত্রের স্পন্দন৷ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে সেই ব্যক্তির মৃত্যু অবধারিত৷

শনিবার কলকাতার যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে আয়োজিত এক কর্মশালা এই ‘নাক ডাকা’ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এই সতর্কবার্তাই শোনান দেশের নানাপ্রান্তের ইএনটি বিশেষজ্ঞরা৷ কর্মশালা আয়োজক অ্যাসোসিয়েশন অফ ওটোল্যারিংগোলজিস্টের রাজ্য শাখার ইএনটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগামীদিনে এই সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে৷ কারণ, ফাস্ট-ফুড জীবনযাত্রার জন্য নাক ডাকার সমস্যা আরও বাড়ছে৷ কর্মশালায় উপস্থিতি বিশেষজ্ঞদের আক্ষেপ, এ পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভারতের চিকিৎসকেরা ‘নাক ডাকা’ সমস্যা নিয়ে তেমনভাবে সচেতন নন৷ ফলে সাধারণ মানুষকেও এ নিয়ে সতর্ক করার কাজে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে৷ কর্মশালায় অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন বিশিষ্ট ইএনটি বিশেষজ্ঞ সীমাব শেখ৷ তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের উচিত বেশি করে নাক ডাকার নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা৷ সবাই পরিকাঠামো নেই বলে অন্যত্র রেফার করেই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেললে ভুল হবে৷ প্রত্যেকের নিজ-নিজ পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রোগটির চিকিত্‍সা শুরু করা উচিত৷’

কর্মশালায় উপস্থিত অন্য এক ইএনটি বিশেষজ্ঞ সৌরেন পাঁজা দাবি করেন যে শহরের জন্যসংখ্যার ৩০ শতাংশ এই ‘নাক ডাকা’ রোগে আক্রান্ত৷ এর মধ্যে পুরুষদের সংখ্যাটাই বেশ৷ তিনি বলেন, ‘ আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ হাইপারটেনশন আক্রান্ত৷ অধিকাংশই স্থুলতাজনিত রোগে ভোগেন৷ এর ফলে সমস্যা একটু একটু করে মারণ পরিস্থিতিতে পৌঁছে যায়৷ ‘

একইরকম ভাবে অ্যাসোসিয়েশন অফ ওটোল্যারিংগোলজিস্টের রাজ্য শাখা সচিব এবং কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সামান্য বদভ্যাস মারণ হতে পারে ভবিষ্যতে৷ তাই প্রথম থেকেই এর প্রতিকার করা জরুরি৷ সামান্য খাদ্যাভাস এবং জীবনশৈলী পরিবর্তন করলেই ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব এই মারণ ব্যাধি৷’

তিনি আরও বলেন যে ইএনটি বিশেষজ্ঞদের ‘নাক ডাকা’ যে কতটা ক্ষতিকারক তা সাধারণ মানুষকে যেমন বুঝিয়ে উঠতে পারেন না তেমনই নিজেরাও উপেক্ষা করেন৷ তাই ‘সাইলেন্ট কিলার’ হিসেবে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি নাক ডাকাও অল্প দিনের মধ্যে প্রথম সারিতে স্থান করে নেবে বলেই দাবি বিশেষজ্ঞরা৷