ঢাকা শহর মেয়েদের জন্য কতটা নিরাপদ

20

ঢাকা শহর মেয়েদের জন্য কতটা নিরাপদ?
যে মেয়েদের জীবিকার তাগিদে কিংবা নানা কাজে বাইরে যেতে হয়, তাদের মতটা মোটামুটি জানা। ঢাকা শহর যে মোটেই নারী বান্ধব নয়, সেটাই হয়তো তারা বলবেন।
কিন্তু পুরুষদের মত কি? তারাও কি আসলে ঢাকা শহরকে মেয়েদের জন্য ‘অনিরাপদ’ ভাবেন? আর যদি ঢাকা শহর মেয়েদের জন্য ‘নিরাপদ’ না হয়ে থাকে, এর জন্য তারা কাকে দায়ী করেন?
বুধবার এই প্রশ্ন রেখেছিলাম ঢাকার রাস্তায় বেশ কজন পুরুষের কাছে।
ঢাকার মিরপুরে একটি মুদি দোকান চালান মনিরুল ইসলাম। ঢাকা শহরে মেয়েদের নিত্যদিন যেসব বিপদে পড়তে হয়, সেরকম একটা ঘটনা নিজের চোখেই দেখেছেন কদিন আগে।
তার এলাকায় বাজারেই এক মেয়ে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। সাথে সাথে ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি।
“মেয়েদের গায়ে এভাবে হাত দেয়াটা ঠিক না। মেয়েটা যখন ঐ ঘটনার প্রতিবাদ করলো আমরা তার পক্ষ নিয়েছিলাম।”
মিরপুর থেকে বাসে ঢাকার শাহবাগ। বাসের হেলপারের সাথে চলছে এক নারীর তর্ক। তাকে বাসে টেনে তুলতে গিয়ে কোথাও স্পর্শ নিয়ে রেগেছেন এই নারী।
যানবাহনে নারীদের এমন অভিজ্ঞতার অভিযোগ থাকে প্রায়ই। যাত্রীদের একজনের মতে নারীদের জন্য আলাদা বাসই এর সমাধান।
“মহিলাদের জন্য আলাদা বাস করতে হবে। মহিলা পুরুষ এক সাথে যাওয়াটা আমি নিরাপদ মনে করি না।”
বড় শহরগুলোতে বাসে রয়েছে নারীদের আলাদা বসার ব্যবস্থা। আরেকজন যাত্রীর বক্তব্য সংরক্ষিত আসন কোন সমাধান নয়। দরকার মানসিকতার পরিবর্তন।
ঢাকার নারীদের প্রিয় শপিং এলাকা নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনি চক। সেখানে সরু গলিতে গা ঠাসাঠাসি ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যে হয়রানির কথা বলেন অনেক নারীই। কথা হলও কয়েকজনের সাথে। খুচরো কাপড় বিক্রেতা নাজিম আহমেদের মতে চলাফেরায় নারীকেই সতর্ক হতে হবে। “কিভাবে চললে নিজেকে নিরাপদ রাখা যায় সে নিয়ে তাদের নিজেদেরও তো বুঝে শুনে চলা উচিত।”
তবে সারাদিনে এমন অনেকের দেখা মিলল যারা দিয়েছেন আক্রমণাত্মক যুক্তি। খুব অবলীলায় একজন বলছেন, “নারীরা ধর্ষিত হয় ইচ্ছে করেই। আপনি যদি আমাকে সুযোগ না দেন আমি সুযোগ নিতে পারি না। আপনি সুযোগ দিলেই আমি সুযোগ নিতে পারি।”
নিউ মার্কেট হয়ে কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সম্প্রতি পহেলা বৈশাখের উৎসবে ঘটেছে নারীদের নিপীড়নের ঘটনা। এর পর বেশ বিতর্কও তৈরি হয়েছে নারীর পোশাক নিয়ে তার চলা-ফেরা নিয়ে। সেখানে চারুকলার এক ছাত্র বলছেন দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় পুরো জাতি কাঠগড়ায় উঠতে পারে না। তবে আরেক ছাত্রে মন্তব্য এসব ঘটনার বিচার নেই বলেই তার ঘটছে প্রতিনিয়ত।
ঢাকা শহর জুড়ে এভাবেই আজ কথা হলও নানান শ্রেণী পেশার পুরুষদের সাথে। কেউ ছিলেন কতটা বলবেন বা আদৌ বলবেন কিনা সেনিয়ে ছিল দ্বিধায়। কেউ দিয়েছেন আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তি। আবার অনেকের মত নারীদের এই শহরে ভয়ের কিছুই নেই।