“মোবাইল কেড়ে নিলেই সন্তানের মনোযোগ ফিরবে না”
কারণ সমস্যা মোবাইলে নয়, সমস্যাটা আরও গভীরে।
টিকটকের ভিডিওগুলো দেখেছেন?
সবচেয়ে বেশি হলে ২০–৩০ সেকেন্ড।
মুহূর্তের হাসি, বিস্ময় কিংবা সামান্য আনন্দ—এইটুকুই।
কিন্তু ভাবুন তো, আপনার সন্তান প্রতিদিন যদি ১৬৭ থেকে ২৭১টি এমন ছোট ভিডিও দেখে—
তাহলে কী হয়?
প্রতিটি ভিডিও এক ধরনের “ডোপামিন হিট” দেয়,
যা মস্তিষ্ককে বারবার আনন্দের ক্ষুদ্র মুহূর্ত খুঁজতে শেখায়।
এই অভ্যাস এমনভাবে গেঁথে যায়,
যে ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক শুধু তৎক্ষণাৎ আনন্দেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
🔻 এর ফলাফল?
-
হোমওয়ার্ক হয়ে ওঠে পাহাড়সম কাজ।
-
বই পড়া? যেন শাস্তি।
-
চলচ্চিত্র দেখা? ধৈর্যই হয় না।
আর যেসব শিশুর মধ্যে আগেই মনোযোগ কম (যেমন ADHD রয়েছে)—তাদের জন্য এটা হয় এক দুঃসহ ফাঁদ।
এটা একদিনে তৈরি হয় না।
আর সমাধানও একদিনে আসবে না।
📴 তাই শুধু ফোন কেড়ে নেওয়া কোনো সমাধান নয়।
বরং এতে আপনার সন্তানের সঙ্গে আপনার সম্পর্কেও ফাটল ধরতে পারে।
কারণ আপনি এমন এক মস্তিষ্ককে জোর করছেন,
যেটা এখন শুধুই তাৎক্ষণিক আনন্দের জন্য প্রোগ্রামড হয়ে গেছে।
✅ পরিবর্তনের পথ কী?
সন্তানের অবস্থান থেকে শুরু করা।
ধীরে ধীরে তাদের মনোযোগ বাড়ানোর উপযোগী কনটেন্ট দেওয়া—
যা আগ্রহও জাগায়, আবার একটু বেশি সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতেও শেখায়।
যেমন:
-
ছোট ভিডিওর বদলে ১০ মিনিটের ইউটিউব ভিডিও দেখানো
-
ডকুমেন্টারি দেখা, যেগুলো ধীরে গল্প বলে
-
২০–৩০ মিনিটের গল্পভিত্তিক পডকাস্ট
-
তাদের নিজের আগ্রহ অনুযায়ী শিক্ষামূলক কনটেন্ট
প্রতিবার যখন তারা একটু বেশি সময় মনোযোগ দেয়,
প্রতিবার যখন বইয়ের পাতায় চোখ কিছুক্ষণ বেশি থাকে,
তারা শুধু কোনো কাজ শেষ করছে না—
তারা নিজের মস্তিষ্কের ভেতরে যুদ্ধ করছে,
একটা দখল হয়ে যাওয়া মনোযোগ ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ।
হ্যাঁ, এটা সহজ হবে না।
কখনও মনে হবে খুব ধীর গতির লড়াই,
মনে হবে আগের চেয়ে খারাপ হচ্ছে।
কিন্তু এটুকুই স্বাভাবিক।
কারণ এই লড়াই গতি বা নিখুঁত হওয়ার নয়—
এই লড়াই অভ্যন্তরীণ দৃঢ়তা ও মানসিক সহনশীলতার।
যেদিন আপনার সন্তান বুঝবে—
“অপেক্ষা মানেই যন্ত্রণা নয়”,
“মনোযোগ মানেই একঘেয়েমি নয়”,
“চেষ্টা মানেই শাস্তি নয় বরং মুক্তি”—
সেদিন আপনি কেবল তার হোমওয়ার্কেই সাহায্য করেননি।
বরং আপনি তাকে এমন এক মানসিক শক্তি দিয়েছেন,
যা দিয়ে সে জীবনভর অনেক দরজা খুলে ফেলতে পারবে—
যেগুলোর কল্পনাও সে এখনো করতে পারেনি।
এটাই সেই নীরব যুদ্ধ,
যেটা তুচ্ছ মানসিকতা আর পূর্ণ সম্ভাবনার মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়।
📌 তাহলে প্রশ্ন হলো:
আজ আপনি সন্তানকে কীভাবে সেই ধৈর্যের নতুন এক অনুশীলন শুরু করতে সাহায্য করবেন?