বর্তমান ডিজিটাল যুগে অভিভাবকদের জানা উচিত যে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম (মোবাইল, টিভি, ট্যাব ইত্যাদি দেখা) শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শিশুদের সুস্থ বিকাশের জন্য বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে স্ক্রিন ব্যবহারের মধ্যে ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত জরুরি।
সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো কী কী?
অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারের কারণে শিশুদের মনোযোগের ঘাটতি, সামাজিক দক্ষতার দুর্বলতা, বিশেষ করে ঘুমের ব্যাঘাত ও বাক বিকাশে বিলম্ব দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত অনেক বেশি সময় স্ক্রিনে থাকে, তারা হাইপারঅ্যাকটিভিটি (অতি সক্রিয়তা) এবং অটিজম সদৃশ আচরণ প্রদর্শন করতে পারে।
তাই শিশুদের মানসিক ও মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশের জন্য বাস্তব জীবনের কার্যক্রমের সঙ্গে স্ক্রিন ব্যবহারের ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অভিভাবকরা কী করতে পারেন?
শিশুদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও অভিযানে যুক্ত করুন—তাদের নতুন বিষয় শেখান, প্রকৃতির মাঝে নিয়ে যান। এটি শিশুদের কৌতূহল, বুদ্ধিমত্তা ও শেখার ক্ষমতা বাড়ায়।
- খেলাধুলা, আঁকাআঁকি, পাজল গেম, গল্প বলা ইত্যাদিতে অংশ নিতে উৎসাহ দিন।
- শিশুর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলুন, সময় কাটান, একসঙ্গে কাজ করুন—এতে ভাষা ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
- শারীরিক কার্যকলাপ শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।
- স্ক্রিন ব্যবহারে সীমা নির্ধারণ করুন এবং শিশুদের বই পড়ায় উৎসাহ দিন। বই তাদের নতুন শব্দ, চিন্তা ও কল্পনার জগতে নিয়ে যায়।
অভিভাবকদের জন্য আরও কিছু পরামর্শ
- বিবেচনাপূর্ণ কনটেন্ট নির্বাচন: শিশুর জন্য বয়স-উপযোগী ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট বেছে নিন। সম্ভব হলে শিশুর সঙ্গে একসাথে দেখুন—এতে শেখার গতি বাড়ে।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: ঘুমের আগে স্ক্রিনের বদলে গল্প বা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে যেন কোনো স্ক্রিনে না থাকে।
- নো-স্ক্রিন ডে পালন করুন: সপ্তাহে একদিন বা নির্দিষ্ট সময় পরপর সম্পূর্ণ স্ক্রিনবিহীন দিন পালন করুন। সেই দিনগুলোতে শিশুকে বাইরে খেলতে, হস্তশিল্প, সংগীত শেখা বা অন্য সৃজনশীল কাজে যুক্ত করুন।
- পারিবারিক সময় দিন: পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, গল্প বলা বা ডায়েরি লেখার মাধ্যমে শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাড়ে।
- প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করান: শিশুদের প্রকৃতি ভ্রমণ, উদ্যান, মিউজিয়াম ইত্যাদি জায়গায় নিয়ে যান। এতে তাদের কৌতূহল ও শেখার ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়।
শিশুর সঙ্গে গুণগত সময় কাটানোই তার শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবিকাশের মূল চাবিকাঠি।
ডিজিটাল জগত ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি সচেতন ভারসাম্য তৈরি করতে পারলেই শিশু হয়ে উঠবে আরও বুদ্ধিদীপ্ত, সুস্থ ও আবেগগতভাবে সংবেদনশীল।
—কনসালট্যান্ট নিওনাটোলজিস্ট ও পেডিয়াট্রিশিয়ান



