আমলকীর পুষ্টি আর টক-ঝাল-মিষ্টি

23

আবহমান কাল ধরেই ঔষধি গুণের নানা ফল-মূল-লতা-গুল্ম আমাদের খাদ্য-পথ্যের তালিকায় আছে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র এর বিকাশে রেখেছে অনন্য ভূমিকা। বহুবিধ পুষ্টি সমৃদ্ধ আমলকী এমনই একটি ফল। আমলা চূর্ণ বা আমলকী গুঁড়োর শরবত থেকে শুরু করে, আমলকীর আচার, মোরোব্বা, চাটনি তো আছেই। অনেক অঞ্চলে ডাল আর ভাতেও ব্যবহার করা হয় আমলকী। ঔষধি এই ফলের পুষ্টি কথা আর স্বাদ বৈচিত্র্য নিয়ে এই প্রতিবেদন।

আমলকীর পুষ্টিকথা
প্রায় স্বচ্ছ সবুজ আমলকী ভিটামিন সি-এর এক দারুণ উৎস। আমলকীর পলিফেনলস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিত। আঁশযুক্ত আমলকী লৌহ, ক্যারোটিন, ক্রোমিয়ামসহ ব্যাকটেরিয়া নিরোধী গুণাবলি সমৃদ্ধ। চোখের দৃষ্টিশক্তি ও চুলের সুরক্ষায় আমলকীর গুণের কথা সর্বজনবিদিত। এ ছাড়া হজমের সহায়ক হিসেবে আমলকী একটা ভালো পথ্য। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, যকৃৎ দূষণমুক্ত করা, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ডায়াবেটিসের চিকিৎসায়ও উপকারী আমলকী।

ভারত এবং চীনে প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি ফল হিসেবে আমলকীর কদর। ভারতের বহুল প্রচলিত চ্যবনপ্রাশের অন্যতম প্রধান উপাদান আমলকী। চীনারা বহু আগে থেকেই গলার প্রদাহ সারাতে এই ফলের ওষুধ ব্যবহার করত। এখনো ঠান্ডা-সর্দি-কাশি সারাতে ঘরে ঘরে কদর আছে আমলকী। আর হালের চুলের শ্যাম্পু, ফেসিয়াল স্ক্র্যাব ও ত্বকের যত্নের নানা প্রসাধনী পণ্যে ব্যবহার করা হয় আমলকী।

আমলকীর মোরোব্বাআমলকীর সঙ্গে মিশিয়ে খেলেও মিষ্টিও স্বাস্থ্যকর হতে পারে!

আমলকীর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে মিষ্টিও স্বাস্থ্যকর হতে পারে! প্রথমে আমলকী ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। এত বেশি পানি দেবেন না যে, অতিরিক্ত পানি ফেলে দিতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশি সেদ্ধ হয়ে আমলকী গলে যেতে শুরু না করে। এবার আমলকী তুলে একটা পাতে রাখুন। আমলকী সেদ্ধ পানিটুকুর সঙ্গে প্রয়োজনমতো আরও পানি ও চিনির সঙ্গে কিছু এলাচ দানা ও খানিকটা লবণ ছেড়ে দিয়ে জ্বাল দিন। এবার চিনির শিরার মধ্যে সেদ্ধ আমলকী ছেড়ে দিন। ব্যস হয়ে গেল আমলকির মোরোব্বা।

আমলকীর চাটনিতে জিভে জল চলে আসতে পারে যে কারও।আমলকীর চাটনি

২৫০ গ্রাম কাচা আমলকী কুচি করে কেটে বিচি ছাড়িয়ে অল্প করে ছেঁচে নিন। ২০০ গ্রাম ধনেপাতা ও পুঁদিনা পাতা ডাঁট ছাড়িয়ে কিছুটা কুচি করুন। ১০০ গ্রাম কাচা মরিচ টুকরো করে কেটে নিন। এক চা চামচ আদা কুচি, এক টেবিল চামচ লবণ ও এক টেবিল চামচ চিনি নিন। এবার সবগুলো একসঙ্গে একটা ব্লেন্ডারে দিয়ে মন্ড করুন কিংবা হামানদিস্তায় ভালো করে পিষে নিন। এমন আমলকীর চাটনিতে জিভে জল চলে আসবে যে কারও।

আমলকীর আচারআমলকীর আচারে একইসঙ্গে পাবেন টক-মিষ্টি-ঝাল।

উপাদান: ৫০০ গ্রাম আমলকি, ১০০ গ্রাম তেঁতুল, ২৫ গ্রাম হলদি গুঁড়ো, ২০০ গ্রাম মরিচ গুঁড়ো, ১০০ গ্রাম মেথি গুঁড়ো, ২৫০ মিলিলিটার সরিষার তেল, ২০ গ্রাম সরিষা দানা ও ১০ গ্রাম মেথি দানা ও পরিমাণ মতো লবণ।

যেভাবে বানাবেন: আমলকীর দাগগুলো বরাবর কেটে কেটে টুকরো করে একটা পাত্রে রাখুন। আরেকটা পাত্রে ৫০ মিলিলিটার গরম পানিতে তেঁতুল ভিজিয়ে বিচিগুলো ছাড়িয়ে নিন। এবার আরেক পাত্রে তেঁতুল, হলদি গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো মেথি গুঁড়ো আর পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে একটা মন্ড বানিয়ে রাখুন। একটা কড়াইয়ে অর্ধেকটা তেল নিয়ে আমলকীর টুকরোগুলো হালকা লালচে করে ভেজে নিন, ঢাকনা দিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে বেশি সময় ধরে ভাজুন। এবার তেঁতুলের মন্ড আর হলদি-মরিচ-মেথির মন্ড বাকি তেলটুকুর সঙ্গে কড়াইয়ে দিয়ে ৫ মিনিট ধরে হালকা করে নেড়ে নিন। চুলার জ্বাল একেবারে কমিয়ে দিন। এবার একটা ছোট কড়াইয়ে এক টেবিল চামচ তেল গরম করে সরিষা আর মেথি দানা ছেড়ে দিন। গরম তেলে দানাগুলো ফেটে গেল নামিয়ে নিয়ে আচারের ওপর ছড়িয়ে দিন। আচারটা চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। আচার ঠান্ডা হয়ে গেলে বয়ামে ভরে ভালো করে মুখ বন্ধ করে রাখুন। সূত্র: প্রথম আলো