শুভ কাজে অশুভ সিগনাল

157

imagesবিদেশে থাকা পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বিজন সাহা। অনেক দিন থেকে মনে মনে পাত্রও খুঁজছিলেন। কিন্তু তেমন পাত্রের সন্ধান পাচ্ছিলেন না তিনি। একদিন দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় পত্রিকায় ‘যুগল মিলন’ নামে এক ম্যারেজ মিডিয়ার বিজ্ঞাপন দেখলেন। মোবাইলে যোগাযোগ করে সিরাজগঞ্জ থেকে মেয়েকে নিয়ে চলে এলেন ঢাকায়। পরে দেখলেন, সবই ভুয়া। বিজ্ঞাপনে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে পাত্রের কোনো মিল নেই। তবে দাবিকৃত টাকা শোধ করে সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল ওই পরিবার।

রাজধানীর অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অনেক ম্যারেজ মিডিয়াই বর্তমানে এমন প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে। আর তাতে প্রতারিত হচ্ছেন বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী খুঁজতে আসা ক্লায়েন্টরা। কেউ বুঝতে পেরে প্রথম ধাক্কাতেই ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ না বুঝে ফাঁদে পড়ে সারাজীবন পস্তাচ্ছেন। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য তাদের রেটও আবার চড়া। বিয়ে হোক বা না হোক প্রাথমিক নিবন্ধনেই তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। এরপর বিয়ের দিকে গড়ালে তো কথাই নেই! পদে পদে ধাপে ধাপে টাকা গুনতে হয় পাত্র-পাত্রীর পরিবারকে। ম্যারেজ মিডিয়াগুলো ঘুরে জানা গেছে, নিবন্ধনের জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লায়েন্টদের আর্থিক অবস্থা বুঝে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নেয়। এরপর বিয়ে দিতে পারলে আরও টাকা-পয়সা দাবি করে। এই প্রতিবেদন তৈরির সময় অনলাইন থেকে ১৫-২০টি ঠিকানা নিয়ে সরেজমিন গেলে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানেরই অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ ম্যারেজ মিডিয়ার নামে অনলাইনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা প্রতিদিন পাত্র চাই/পাত্রী চাই শিরোনামে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার আলম রোডের ১৯/১২ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পশ্চিম বিভাগের একটি দল। তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে বাড়িভাড়া নিয়ে ম্যারেজ মিডিয়ার ভুয়া অফিস সাজিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর একটি ম্যারেজ মিডিয়ায় কর্মরত মহিলা কর্মী জানান, ভুয়া ম্যারেজ মিডিয়াগুলো প্রতারণার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদের ব্যবহার করে। পাত্রী পরিচয়ধারী এই নারী প্রতারকরা পাত্রী হিসেবে একবার সাক্ষাৎকার দিলেই পায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। বিজ্ঞাপন দেখে লোকজন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কথিতদের দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় ম্যারেজ মিডিয়াগুলো। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদেশে যাওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা থেকে যারা প্রবাসী পাত্র-পাত্রীর সন্ধানে ম্যারেজ মিডিয়ার শরণাপন্ন হয় বিশেষ করে তারাই বেশি প্রতারিত হয়। পাসপোর্ট, আইডি-কার্ড, ভিসা, বায়োডাটা প্রভৃতি জাল করে এসব চক্র প্রতিনিয়ত ক্লায়েন্টদের ঠকায়।মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে আটক হলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আসে এই প্রতারকরা। অতঃপর আবারও অন্য কোনো নামে এ ব্যবসা শুরু করে। তবে এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠান পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই চলে বলে জানান বহুল পরিচিত একটি ম্যারেজ মিডিয়ার উদ্যোক্তা। তবে রাজধানীর সব ম্যারেজ মিডিয়া এই প্রতারণায় তালিকায় পড়ে না। কেউ কেউ ঐতিহ্যগতভাবেই ঘটকালি বা বিয়ের মধ্যস্থতাকে আদর্শ পেশা হিসেবে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কেউ আবার করেন শখের বশে।

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন