সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নড়াচড়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের বাইরে অবস্থানরত এবং পলাতক অনেক সন্ত্রাসী সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে। এমনকি, জেলে বন্দী সন্ত্রাসীদেরও অনেকে অনুসারীদের ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে। কোনো কোনো এলাকায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনাও শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে আতঙ্ক। সংঘর্ষ ও জীবননাশেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কোনো কোনো এলাকায়। তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নিয়ে এই শঙ্কা এখন চরমে।
আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ইতোমধ্যেই এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের মনোয়নপত্র ক্রয় শুরু করছেন। এরমধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৬টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের বেলায় দলীয় প্রভাব থাকলেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার অনেকটা সহজ পথ হলো এলাকার আধিপত্য। অতীতেও এ বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে যার যে এলাকায় আধিপত্য বেশি সে সেই এলাকায় নির্বাচিত হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। এমনকি, দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও আধিপত্য থাকায় অতীতে অনেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের যেসব সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন তারা সবাই এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা। কোনো কোনো মামলায় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসব প্রার্থীর অনেকের বাড়িতেই প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে যারা কাউন্সিলর ছিলেন তাদেরও প্রায় সবাই আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে হলেও তাদের আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই ভোট প্রার্থনা করতে হবে। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রকাশ্যেই আছেন। তারা আগে থেকেই এলাকায় জনসংযোগমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। এলাকার আধিপত্য এখন তাদের হাতেই রয়েছে। সূত্র জানায়, মহাজোট নেতৃত্বাধীন প্রার্থীর সংখ্যাই এবার বেশি হবে। এমনকি, কোনো কোনো ওয়ার্ডে তিন-চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এসব কারণে সংঘর্ষ এবং সহিংস ঘটনা তাদের অভ্যন্তরেই বেশি ঘটবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অতীতেও সন্ত্রাসীদের একটা ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে। এবার তা আরো চাঙ্গা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে যারা অতীতে নির্বাচিত হয়েছেন বা এবারে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই সরাসরি সন্ত্রাসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি সন্ত্রাসের অভিযোগ নেই তাদেরও অনেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীতে যেসব সন্ত্রাসী রয়েছে তাদের সাথেই ইতোমধ্যে সন্ত্রাসীরা যোগাযোগ শুরু করেছে। যেসব সন্ত্রাসী জেলখানায় রয়েছে এবং দেশে বা দেশের বাইরে পলাতক আছে তারাও যোগাযোগ শুরু করেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে। সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী খন্দকার তানভীরুল ইসলাম জয়, জিসান, সুব্রত বাইন, হারেস, মানিক, শাহাদাত, রাজু, খোরশেদ, প্রকাশ কুমার, বিকাশ, আশিক, মহি আলম মহিদ, বুদ্দিন, মোবারক, নিজাম, লেংরা শরিফ, গেদা সেলিম, মুকুল, বিষা, রানা, ইলিয়াস, নান্নু, কালু, আনোয়ার, ফারুক, শওকত, তপন, শাহাদাত, খোরশেদ, নাসির উদ্দিন ওরফে কানা নাসু, কামাল, আলমগীর, উজ্জ্বল, তুরান, সান্টু, রুবেল, সাগর, রানা, আলী রেজা খান, অয়ন, ইমরান, হৃদয়, মো: আলমগীর হোসেন, তাপু, ডাকাত সাগর, কালা মামুদ, প্রিন্স মোহম্মদ, রাজু, সুন্দর শরিফসহ অনেক
সন্ত্রাসীই এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে অনেক প্রার্থীর হয়ে কাজ শুরু করেছে। জেলে যেসব সন্ত্রাসী বন্দী আছে তাদের মধ্যে জোসেফ, আরমান, সুইডেন, ইব্রাহিমসহ অনেকেই ইতোমধ্যেই বন্দী থেকেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ইতোমধ্যেই মহড়া শুরু করেছে। ঢাকা দক্ষিণের একটি বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন সাইদুর রহমান শহীদ কমিশনার। গত জাতীয় নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এবার কমিশনার পদে নির্বাচন নাও করতে পারেন। তবে ওই এলাকায় যারা সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন তাদের সবাই আছেন শহীদ কমিশনার আতঙ্কে। তার ইশারা ছাড়া ওই এলাকায় কেউ নির্বাচিত হতে পারবেন না এটাই সবার ধারণা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির, একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ফজলু খুন হয়েছেন। জাহাঙ্গীরের শ্বশুর নূর হাজি নিখোঁজ রয়েছেন।
এ দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে তারা ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা যা দরকার সবই করবে পুলিশ। সূত্র: নয়াদিগন্ত
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.