‘আত্মহত্যা’ প্রতিষ্ঠিত করাতে অপমৃত্যুর মামলা

117

অবৈধ রিভলবারের গুলিতেই ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি শেখ রবিউল ইসলাম সোহেলের বাড্ডার বাসায় ইমনের (১৭) মৃত্যু কে তদন্তের আগেই ‘আত্মহত্যা’ বলেই নিশ্চিত হয়েছে বাড্ডা থানা পুলিশ। তাদের সেই বক্তব্যকে আরো জোড়ালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিহতের বাবাকে দিয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করানোর প্রক্রিয়া চলছে। তবে ওই বাসায় অবৈধ অস্ত্রটি কিভাবে আসলো, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানার কোনো জিজ্ঞাসা বা উত্তর নেই।

রোববার বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল বলেন, ‘ইমনের মৃত্যুর বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। এখনো কোনো মামলা হয়নি। এটি আত্মহত্যা।’

তিনি বলেন, ‘সোমবার নিহতের বাবা ঢাকায় এসে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করবেন।’

এরআগে, রোববার বিকেল ৪টার দিকে নিহত ইমনের চাচা টিটুল সর্দার ও অনিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার লাশ নিয়ে গোপালগঞ্জে তাদের গ্রামের বাড়িতে যায়। সেখানে সন্ধ্যায় ইমনের দাফন সম্পন্ন হয়। তার দুই চাচাকে হাসপাতালের সামনে বসে সংবাদকর্মীরা প্রশ্ন করলে তারা কোনো বিষয়ে কথা বলেননি। তবে এমনের মৃত্যু নিয়ে তাদের ভেতরে ক্ষোভ দেখা গেছে। ইমন আত্মহত্যা করছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে টিটুল ‘জানেন না’ বলে উত্তর দিয়ে চলে যান।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতার বাসায় অবৈধ অস্ত্রে তরুণের মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। এমনকি মরদেহের পাশে পড়ে থাকা রিভলবারটি অবৈধ হলেও সেটি কার সেই তথ্যও মেলেনি। ছাত্রলীগ নেতার বাসায় অবৈধ এই অস্ত্রটি কীভাবে এলো তা নিয়েও দেখা দিয়েছে রহস্য।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আবদুল জলিল বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। অস্ত্রটি কার এখনও জানা যায়নি।’

বাসার মালিক ছাত্রলীগ নেতা শেখ রবিউল ইসলামকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন? জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি এখন বাসাতেই আছেন। তবে তিনি বলেছেন আত্মীয়-স্বজনরা কে কখন কী নিয়ে বাসায় আসে সবাইকে তো আর তল্লাশি করা যায় না।’

গতকাল শনিবার রাতে বাড্ডায় ছাত্রলীগ নেতার বাসা থেকে ইমন (১৪) নামের এক কিশোরের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ইমন ছাত্রলীগ নেতা সোহেলের মামাতো ভাই। সাভারের একটি স্থানীয় স্কুলের অষ্টম শ্রেণি থেকে দুই দফায় জেএসসি দিয়ে সে অকৃতকার্য হয়। মধ্য বাড্ডার আলাতুন্নেছা স্কুল গলির চেয়ারম্যানবাড়ির মোড় এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা সোহেলের ফ্ল্যাটে প্রায়ই আসত সে। ফ্ল্যাটটি নয়তলা ভবনের দুই তলায় সোহেল থাকে। সোহেলের হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতি কর্মসূচিতেও সে অংশ নিয়েছে। তবে সে মাঝেমাঝে মা-বাবার সঙ্গে সাভারেও থাকত।

বাড্ডা থানার পুলিশ জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে ওই ফ্ল্যাটেই থাকছে ইমন। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ইমন একটি কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে গুলির শব্দ এলে ফ্ল্যাটের লোকজন তাকে ডাকাডাকি করতে থাকে। কিন্তু কোনো সাড়া মিলছিল না। এক পর্যায়ে আশপাশের লোকজনকে ডেকে ছিটকিনি ভেঙে দরজা খোলা হয়। পরে সবাই ভেতরে গিয়ে দেখেন, মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় খাটের ওপর পড়ে আছে ইমন। তার সামনে একটি রিভলবার, পাঁচটি গুলি ও একটি ব্যবহৃত গুলির খোসা। রাত সাড়ে নয়টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। আর রিভলবার ও গুলি জব্দ করা হয়।