হামলার প্রতিবাদে বুধবার হরতাল

20

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে বুধবার ঢাকা-চট্টগ্রাম বাদে সারাদেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপি। একইসঙ্গে মঙ্গলবার বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ডাক দেয়া হয়েছে। হরতালের মতো বিক্ষোভেও আওতামুক্ত থাকবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরী।

সিটি নির্বাচনের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীকে এসব কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।

সোমবার রাত পৌনে ৮টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টার অংশ হিসেবে আজকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। আমরা এই অপচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায়। এ হামলায় আমাদের নারী কর্মী, সাংবাদিক ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাই এই নগ্ন হামলার প্রতিবাদে ২০ দলের পক্ষ থেকে আগামীকাল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল এবং পরদিন বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করা হলো। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম এই বিক্ষোভ মিছিল ও হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই এই ফ্যাসিবাদী সরকার এরকম সন্ত্রাসী তাণ্ডবের আশ্রয় নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহযোগিতায় বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের প্রতিটি পদে পদে বাধা দিচ্ছে। আসলে এসব তাদের অগণতান্ত্রিক মানসিকতার ও দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ। তবুও আমাদের নেত্রী বসে নেই, তার নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।’

হামলার পরই বেগম জিয়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মির্জা আব্বাসের জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় যান বলে জানান মওদুদ।

বিএনপির এই জ্যৈষ্ঠ নেতা বলে, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনী প্রচারণায় বেরোলে প্রতিহত করার যে বক্তব্য দিয়েছেন আজকের সন্ত্রাসী হামলা সেই উসকানিরই প্রতিফলন। এমনকি একজন পুলিশের আইজিপি রাষ্ট্রের দায়িত্বরত অবস্থানে থেকে নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত আইনশৃংখলা সংক্রান্ত সভায় বলেছেন, খালেদা জিয়াকে প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনে আইন প্রনয়ন করা হবে। তার এই বক্তব্যও আজকের এই ঘটনার উসকানির মূল কারণ।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে বিকেলে কাওরান বাজারে নির্বাচনী প্রচারণায় বের হয়ে হামলার শিকার হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। এতে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে সরকারি কোনো নিরাপত্তা ছিল না। নিজস্ব নিরাপত্তাবাহিনী এবং কিছু দলীয় নেতাকর্মী তার সঙ্গে ছিলেন।

গতকাল রোববারও উত্তরায় নির্বাচনী প্রচারণায় বের হয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীদের বাধার মুখে পড়তে হয় বেগম জিয়াকে। সেদিন তাকে উদ্দেশ করে কালো পতাকা দেখিয়েছিলেন সরকারসমর্থকরা। বাধার মুখে নর্থ টাওয়ারের সামনে থেকে বেগম জিয়াকে বহনকারী গাড়িটিকে ঘুরেও যেতে হয়েছিল।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে পল্টন যেতে চেয়ে পুলিশের বাধায় ব্যর্থ হয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন বেগম জিয়া; যা আজো চলছে। জানুয়ারির শেষের দিক থেকে অবরোধের সঙ্গে যুক্ত হয় হরতালও। হরতালের মধ্যেই ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে শেষ হয় এসএসসি পরীক্ষা। পরবর্তীতে সিটি নির্বাচনের হাওয়ায় রাজনৈতিক উত্তাপ কিছুটা কমে এলে ও এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে হরতাল থেকে সরে আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল।