সরকারের আদেশ মানছেন না কর্মকর্তারা

54

বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোর কার্যক্রমে গতি আনার লক্ষ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ কর্মকর্তাদের ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেয়া উদ্যোগ বারবার ভেস্তে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কিছু কর্মকর্তাকে সদর দফতরে ফিরে আসতে একাধিকবার আদেশ দেয়া হলেও তারা তা মানছেন না। পক্ষান্তরে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে কয়েকজন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তদবির করে বেড়াচ্ছেন। এতে করে যেমন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে পারছেন না তেমনিভাবে বদলির আদেশ দেয়া কর্মকর্তাদের দিয়ে কাক্সিক্ষত কাজ করানো যাচ্ছে না। তবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কানাডার অটোয়ার বাংলাদেশ মিশনে কাউন্সিলার পদে ২০১১ সালে যোগ দেন ইশরাত জাহান আহমেদ। তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত বছরের জুলাই মাসে তাকে বদলি করা হয় নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে। পররাষ্ট্র মন্ত্র্রণালয়ের বদলির আদেশ পাওয়ার পর তিনি কয়েক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন। পরে তিনি নয়াদিল্লিতে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফিরে আসারও আবেদন করেন। নানা তদবিরে মন্ত্রণালয় তাতে রাজি হলেও আদেশ পাওয়ার পর তিনি ঢাকায় ফিরতে গড়িমসি বাড়িয়ে দেন। ফলে মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়ে ঢাকায় আসতে আরো দুই দফা চিঠি দেয়ার পর ঢাকায় ফিরে না আসায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে চূড়ান্ত আদেশ দেয়।
সূত্র জানিয়েছে, এ চিঠি পাওয়ার পর তিনি আবারো তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন শিগগিরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের অটোয়া সফরকালে তিনি তদবির করে তার সদর দফতরে ফেরার আদেশ রহিত করবেন। বিষয়টি জানতে পেরে মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
অন্যদিকে ইশারত জাহানের মতো উজবেকিস্তানের তাসখন্দস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ২০১১ সালে কাউন্সিলার পদে যোগ দেন ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তা এএসএম ওয়াহিদুজ্জামান। তিন বছর কর্মকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তাকে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফিরে আসতে আদেশ দেয়ার পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের একটি অনুবিভাগের পরিচালকে তার স্থলে পোস্টিং দেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বদলির আদেশ পাওয়ার পর তিনি এক দফা সময় নেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে। মন্ত্রণালয় তাকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাসখন্দে থাকার অনুমতি দিলেও এরই মধ্যে সে অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক মাস আগেই। কিন্তু ওয়াহিদুজ্জামানের ঢাকায় আসার কোনো ধরনের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
এছাড়া ২০০৯ সালে সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সিলর পদে যোগ দেন আইরিন পারভীন বাঁধন। তিন বছর মিশনে তার চাকরির কার্যকাল হলেও এ পর্যন্ত তিনি ফিরে আসেননি। পাসপোর্ট কেলেঙ্কারিসহ নানা বিষয়ে আলোচিত মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনেও রয়েছে মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষিত হওয়ার ঘটনা। এ মিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) মুসলেমা নাজনিন মিশনে যোগ দেন ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। তিনি ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তা। পাসপোর্ট কেলেঙ্কারির পর সবার সঙ্গে তাকে বদলির আদেশ দেয়া হলেও তিনি এখনো মিশনে বহাল তবিয়তে আছেন।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় বদলি করার আদেশ দেয়া এবং মেয়াদোত্তীর্ণ এখনো অন্তত দু’ডজন কর্মকর্তা মিশনে থাকলেও তারা ফিরছেন না। বরং তাদের কারণে নতুন কর্মকর্তারা পোস্টিং বঞ্চিত হচ্ছেন।

সূত্র: মানব কণ্