মেয়র পদে ২০ দলের একক প্রার্থী শাসক জোটে টানাপড়েন

18

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে বর্তমান মেয়র মনজুর আলম পদত্যাগ করেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে সাথে নিয়ে তিনি নগরীর জুবিলি রোডস্থ নির্বাচন অফিসে চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতা নিয়ে শাসকদল আওয়ামী লীগ ও জোটে নানা টানাপড়েন থাকলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের একক প্রার্থী হওয়ায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন সদ্য বিদায়ী মেয়র মনজুর আলম। ফলে গতকাল থেকেই মেয়র নির্বাচন ঘিরে বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বন্দরনগরী।
২০১০ সালের ১৭ জুন ওই নির্বাচনে শাসকদলের হেভিওয়েট প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ৯৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন মনজুর। এরপর ওই বছরের ২৬ জুলাই সিসিসির প্রথম সাধারণ সভা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত মনজুর আলমের মেয়র পদের মেয়াদ ছিল।
কিন্তু এক রিট আবেদনের প্রেেিত ২০০৯ সালের ২৫ মে উচ্চ আদালত মেয়র পদকে লাভজনক চিহ্নিত করে। এ কারণে নির্বাচন কমিশন জানায়, ওই পদে থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করা যাবে না। উচ্চ আদালতের সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিতে মেয়াদ পূর্তির প্রায় তিন মাস আগেই তাকে পদত্যাগ করতে হলো।
এ দিকে মেয়র পদে প্রার্থী হতে শাসকদল আওয়ামী লীগে গত বেশ কয়েক মাস ধরে টানাপড়েন চলছে। শাসকদলের প থেকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একক প্রার্থী হিসেবে সমর্থন ঘোষণা করা হলে দলে অদৃশ্য টানাপড়েন রয়েই গেছে বলে শাসকদলের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। পাশাপাশি জোটেও রয়েছে টানাপড়েন। জাতীয় পার্টির প থেকেও প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। শাসক জোটের অংশীদার ইসলামিক ফ্রন্টও মেয়র পদে মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। সে দক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের মেয়র প্রার্থ ম মনজুর আলম।
এক দিকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এখন পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। অন্য দিকে সরকারের বিরুদ্ধে জনােভকে কাজে লাগাতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোতেও এই নির্বাচনকে ঘিরে ঐক্যের সুবাতাস বইছে। জমজমাট নির্বাচনী যুদ্ধের জন্য গতকালই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বন্দরনগরী। তবে এসবই নির্ভর করছে প্রশাসনের, বিশেষত পুলিশ প্রশাসনের দলনিরপে ভূমিকার ওপর।
এ দিকে গতকাল বিকেলে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন মনজুর। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের পে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছি। তিনি বলেন, পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনে সহযোগিতার জন্য আমি নগরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরের জন্য তিনি ৫৭ মাসে ৯০০ কোটি টাকার কাজ করেছেন, এর আগে ২০ বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচারের ভার নগরবাসীর হাতে।
এর আগে গতকাল দুপুরে জুমার নামাজের পর হজরত আমানত শাহর মাজার জিয়ারত করে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আন্দরকিল্লার সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে যান মনজুর আলম। ১৭ বছর কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে ও পাঁচ বছর নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মেয়রের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার পর তিনি প্যানেল মেয়র-১ মোহাম্মদ হোসেনের কাছে দয়িত্ব হস্তান্তর করেন। এরপর নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
পেশাজীবীদের সংগঠন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন গত বুধবার রাতে মেয়র পদে মনজুর আলমকে প্রার্থী ঘোষণা করে। পর দিন চট্টগ্রাম বিএনপির প থেকে মনজুরকে মেয়র পদে সমর্থনের ঘোষণা দেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
এর আগে গত বুধবার সিসিসির শেষ সাধারণ সভায় নিজের মেয়াদকালের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ৫৭ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্র“তির অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেন মনজুর।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলমের ছেলে ছরওয়ার আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, আব্বা পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার পর এ সংক্রান্ত যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই আগামীকাল রোববার মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা: শাহাদাত হোসেন জানান, ম্যাডাম যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তিনিসহ দলের সব নেতাকর্মী পালন করবেন। তিনি দলের সব নেতা-কর্মী-সমর্থকের ঐক্যবদ্ধভাবে দলের চেয়ারপারসন ঘোষিত মেয়র প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।