যুবলীগ নেতার সন্ত্রাসের শিকার ১৪ হিন্দু পরিবার বাড়ি ফিরল

29

বরগুনার তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের চন্দনতলা গ্রামের ১৪ হিন্দু পরিবারকে বাড়ি থেকে বিতারিত, বসতঘর লুটপাট ও ভেঙে নেয়ার ১৮ দিন পর মঙ্গলবার বরগুনা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের সহায়তায় বাড়ি ফিরে এসেছে ১৪ সংখ্যালঘু পরিবার। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চন্দনতলাসহ আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষ সোচ্চার। তারা এ লোমহর্ষক ঘটনার নায়ক আ. রশিদ, জাকির এবং সালাম সরদারের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন।

তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের দুর্গম গ্রাম চন্দনতলা। ওই গ্রামে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বসতভিটায় বসবাস করে আসছে ১৪ হিন্দু পরিবার। এদের বসতভিটাসহ ৪০ একর কৃষি জমি রয়েছে। এই জমির ওপর লোলুপদৃষ্টি পড়ে বিএনপি নেতা আ. রশিদ, আওয়ামী লীগ নেতা আ. ছালাম ও যুবলীগ নেতা জাকির সরদারের। এরা গোপনে ঐক্যবদ্ধভাবে হিন্দু পরিবারগুলোকে এলাকা ছাড়া করতে গড়ে তুলে সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনী অসহায় হিন্দু পরিবারের ওপর উত্ত্যক্তসহ অন্যায়-অত্যাচার শুরু করে। ওদের অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পরিবারগুলো ১২ মার্চ রাতে বাড়িঘর ফেলে নীরবে চলে যায়। ১৩ মার্চ সন্ত্রাসীবাহিনী ওদের বসতঘরে লুটপাট করে এবং ঘর ভেঙে নিয়ে যায়। ঘটনার ১০ দিন পরে ২৩ মার্চ বিতারিত পরিবারের পক্ষে যাদব চন্দ্র সরকার তালতলী থানায় সন্ত্রাসী আ. রশিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ওইদিনই পুলিশ আ. রশিদকে গ্রেফতার করে। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বসতঘরের লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করে জরুরিভিত্তিতে ঘরগুলো পুনর্নির্মাণ করে।
মঙ্গলবার সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসক মীর জহিরুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম গ্রাম ছাড়া ১৪ হিন্দু পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বরগুনা থেকে চন্দনতলা গ্রামে আসেন এবং অসহায় পরিবারগুলোকে তাদের ঘরে তুলে দেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ৬ হাজার টাকা, ২ বান্ডিল ঢেউ টিন ও ১৫ দিনের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।

তদন্ত দাবি খালেদা জিয়ার : বরগুনার তালতলী উপজেলার চন্দনতলা গ্রামের ৯ পরিবারকে উচ্ছেদসহ ১৪টি হিন্দু পরিবারের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ এবং ক্ষোভ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই ঘটনার প্রকৃত সত্য উৎঘাটন ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ও যুগপৎভাবে আন্তর্জাতিক তদন্তের জোর দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়। মঙ্গলবার বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া এ দাবি জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘স্থানীয় সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত এ ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ইতিমধ্যেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে দু-একটি গণমাধ্যম এর সঙ্গে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের জড়িয়ে অসত্য ও বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’