লাগাতার অবরোধ আর দফায় দফায় হরতালে তীব্রভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদানপ্রক্রিয়া কার্যক্রম। উচ্চ মাধ্যমিকপর্যায়ের কলেজগুলোতেও কাস খুব একটা হচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের চাপে পড়ে শিাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হলেও আতঙ্কে শিার্থী উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এ পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস সম্পন্ন করে পরীা গ্রহণ দুরূহ হয়ে পড়েছে। আগামী মাসে বিভিন্ন কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুলে বছরের প্রথম সেমিস্টার শুরু হবে। কিন্তু অবরোধ-হরতালে তি পুষিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে অভিভাবকেরা সন্তানদের নিয়ে হয় কোচিং সেন্টার অথবা গৃহশিকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। স্কুল-কলেজে কাস না হওয়ায় অনেক অভিভাবক সন্তান নিয়ে দুই জায়গায়ই দৌড়াচ্ছেন। এই সুযোগে শিকদের কোচিং বাণিজ্য ফের রমরমা হয়ে উঠেছে। নতুন বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে কোচিং ফি।
রাজধানীসহ সারা দেশে আবার দেখা যাচ্ছে কোচিংয়ের সেই পুরনো চিত্র। প্রতি মাসে মাত্র আটটি কাস। বাংলা বিষয়সহ যেসব বিষয়ে কেবল বাসায় অধ্যয়ন করলেই ভালো ফল করা সম্ভব, সেসব বিষয়েও কোচিং করছে শিার্থীরা। অভিভাবকেরাও সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তায় ছুটছেন এক কোচিং থেকে আরেক কোচিং। কখনো বাংলার স্যারের কাছে, কখনো ইংরেজি কিংবা কখনো বা ধর্ম শিা বিষয়ের শিকের কোচিং করছে এখন শিক্ষার্থীরা।
শিাবিদরা বলছেন, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনীর মতো অহেতুক পাবলিক পরীার বোঝা কোচিং বাণিজ্যকে আরো উৎসাহিত করেছে। অভিভাবকরা এ-পাস, গোল্ডেন এ প্লাসের গোলক ধাঁধায় পড়ে কোচিংয়ের পেছনে ছুটছেন। কোচিং দৌরাত্ম্যে অভিভাবক ও শিার্থীরা কোচিংবাজ শিকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। রাজধানীর নামীদামি শিাপ্রতিষ্ঠানের কোচিংবাজ শিকেরা শিা বছরের শুরুতে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। কোচিংগুলোতে শিার্থীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে, নতুন বছরে কোচিং ফি বাড়ছে। বাজার চড়া, বাড়িভাড়া বেড়েছে তাই বাড়ানো হয়েছে কোচিং ফি।
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি রাজধানীর একটি প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোচিংবাজ শিক্ষকেরা চাঁদা তুলে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী স্থানীয় এক নেতার সহায়তায় কোচিংবিরোধী এক অধ্যক্ষকে রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসিয়ে আটক করে জেলে দিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতার চাপে স্কুল ক্যাম্পাস থেকে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ওই অধ্যক্ষকে পুলিশ গ্রেফতার করে যাত্রীবাহী বাসে আগুন ও গাড়ি পোড়ানোর তিনটি মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে। কোচিংবাজ শিক্ষকদের খপ্পরে পড়ে ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত পাঠদান এখন শূন্যের কোটায়। অথচ এ প্রতিষ্ঠানের কোচিংবাজ শিক্ষকদের বাণিজ্য এখন রমরমা। জানা গেছে, কোচিংবিরোধী ওই অধ্যক্ষ চলতি শিক্ষাবর্ষে পঞ্চম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের স্কুলে অতিরিক্ত কাসের রুটিন করেছিলেন এবং ওই শ্রেণীগুলোর কোনো শিক্ষার্থীকে স্কুলশিক্ষকেরা তাদের কোচিং সেন্টারে ভর্তি করতে পারবেন না বলে আদেশ জারি করেছিলেন। এর পরই ওই ঘটনা ঘটেছে।
অথচ ‘শিাপ্রতিষ্ঠানের শিকদের কোচিং বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ অনুযায়ী কোনো শিক নিজ শিাপ্রতিষ্ঠানের শিার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। নীতিমালা অনুযায়ী অন্য প্রতিষ্ঠানের শিার্থীকে নিজ বাসায় পড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি লাগবে। এ েেত্র প্রতিষ্ঠান প্রধানকে লিখিতভাবে ছাত্রছাত্রীর তালিকা, রোল ও শ্রেণী উল্লেখসহ জানাতে হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঘিরে সিদ্ধেশ্বরী এলাকা ও এর আশপাশে বিভিন্ন ফ্যাট ভাড়া করে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছেন। মনিপুর হাইস্কুলের মূল ক্যাম্পাস এবং শাখাগুলোর আশপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কোচিং সেন্টার। এসব কোচিংয়ের কোনোটির মালিকানা শিকদের সরাসরি। কিছু পরোভাবে তাদের স্ত্রী, ভাই, শ্যালকসহ নিকটাত্মীয়দের দিয়ে চালাচ্ছেন তারা। মতিঝিল, বাসাবো, মুগদা, ফার্মগেট, ইন্দিরা রোড, শনিরআখড়া, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, নারিন্দা এলাকায় ভাড়া করা ফ্যাটে বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠানের শিকদের গড়া কোচিং সেন্টারের জন্য এলাকাগুলো পরিচিত।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর মা জানান, সকালে মেয়েকে নিয়ে তিনি বের হন আর রাত ৯টায় বাসায় ফেরেন। স্কুল শেষে তার মেয়ে প্রতিদিন তিনটি করে কোচিং করে। এক বিষয়ের পড়া শেষে অন্য বিষয়ের শিকের বাড়িতে ছুটতে হয় তাকে। তিনি বলেন, যত নামকরা স্কুল, তত কোচিংয়ের চাপ বেশি। স্কুলে লেখাপড়া হয় না, তাই কোচিংই ভরসা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা গণসারতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রাথমিক স্তরে লেখাপড়া একটি মানে পৌঁছলেও মাধ্যমিক স্তরে এসে লেখাপড়ায় কোচিং প্রাধান্য পায়। যে যত খরচ করতে পারে, তার সন্তানের ফল তত ভালো হচ্ছে। এখানে গুণগতমান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, বর্তমান শিাব্যবস্থায় অভিভাবকদের লেখাপড়ার একটি বড় অংশ খরচ করতে হচ্ছে তার সন্তানদের কোচিং ফি মেটাতেই।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবীর দুলু অভিযোগ করেন কোচিংবাণিজ্য বন্ধে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, আইন করে কোচিং বন্ধ করতে হবে। কোচিং বন্ধে মাউশির মনিটরিং কমিটিগুলো শক্তিশালী করতে হবে। কোচিংবাজ শিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অভিভাবক সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব নীপা সুলতানা বলেন, কোচিং এখন শিক্ষার প্রধানতম অনুষঙ্গ। কোচিং বন্ধের আগে স্কুলে ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার।
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.